চাকরি হারানোর শঙ্কায় মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকের অবরোধ, যোগ না দিলেও চাকরি হারাবেন না বলছে সরকার - Southeast Asia Journal

চাকরি হারানোর শঙ্কায় মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকের অবরোধ, যোগ না দিলেও চাকরি হারাবেন না বলছে সরকার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পোশাক কারাখানা খুলে দেয়ার ঘোষণায় কর্মস্থল ঢাকায় ফেরার জন্য ঢাকা-রংপুর সড়ক অবরোধ করেছেন হাজার হাজার শ্রমিক। রংপুর নগরীর মর্ডান মোডে অবস্থান নিয়েছে তারা।

মহাসড়ক অবরোধের কারণে সকল প্রকার পণ্য বহনকারী ট্রাকসহ সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৩ ঘণ্টা। পরে পুলিশ এসে তাদের বুঝিয়ে সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে রংপুর ও আশেপাশের জেলা থেকে রবিবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজে যোগদানের জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে নগরীর মর্ডান মোড়ে সমবেত হতে থাকে শ্রমিকরা। দুপুর ১২টার মধ্যে হাজার হাজার শ্রমিক সমবেত হয় মর্ডান মোড়ে। শ্রমিক ঢাকা ফেরার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করার দাবিতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে মহাসড়কের দু’পাশে শত শত পণ্যবাহী ট্রাকসহ যানবাহন আটকা পড়ে।
শ্রমিকদের দাবি, সরকার ১৫ দিনের লকডাউন দিয়ে সকল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে শুক্রবার ঘোষণা দেয় রবিবার থেকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। তাদের এ ঘোষণা দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য পরিবহনের কোন ব্যবস্থা না করে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়ায় তারা চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

তারা বলেন, তারা ১৫ দিনের বন্ধ ঘোষণা শুনে ঈদ উদযাপন করতে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নিজ নিজ বাসায় এসেছে। এখন পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা ঢাকায় যাবে কিভাবে। এসময় চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ এসে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করলে শ্রমিকরা সড়ক থেকে অবরোধ তুলেন।

এদিকে, সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকটি বিআরটিসির বাসে মর্ডান মোড় থেকে শ্রকিমদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যানবাহন চলাচল বন্ধের পরেও বিআরটিসি বাসে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, জরুরি পরিসেবার আওতায় তাদের মৌখিকভাবে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক মমতাজ বেগম জানান, তার বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকায়। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ জেনে বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার রাতে রবিবার থেকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলা খবর শুনে রাতেই অটোতে রিকশায় ভ্যানে ভেঙে ভেঙে মর্ডান মোড়ে এসেছে। এখানে এসে দেখেন কোন যান বাহন নেই। তা হলে ঢাকায় যাবেন কিভাবে প্রশ্ন তার।

নীলফামারী থেকে আসা গার্মেন্টস শ্রমিক আবেদুল হাফিজ জানান, অনেক কষ্টে ভেঙে ১০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা খরচ করে ভেঙে ভেঙে রংপুরে এসেছেন ঢাকা যাওয়ার জন্য। এখন ঢাকা যাবেন কিভাবে এ নিয়ে চিন্তিত পড়েছেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আহাম্মেদ আলী জানান, রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার প্রায় ২৫ লাখ নারী ও পুরুষ শ্রমিক গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন। গার্মেন্টস খুলে দেয়ার আগে তারা কিভাবে ঢাকা যাবেন সেই ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।

মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মেনহাজুল আলম জানান, ৫ আগস্ট গার্মেন্টস খুলে দেয়ার ঘোষণা শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী যান চলাচল করছে। তবে তাদের অনেকেই জরুরি পরিসেবার আওয়ায় ঢাকার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাহনে যাচ্ছেন।

এদিকে, পোশাক কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্পকারখানা রোববার (১ আগস্ট) থেকে খুললেও আপাতত কেউ কাজে যোগ না দিলে চাকরি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারা চাকরি হারাবেন না বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি গতকালই বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে পরিস্কার করা হয়েছে। যারা ঢাকা অবস্থান করছেন, বিশেষ করে যারা ঈদে বাড়ি যায়নি এবং যারা ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ফিরে এসেছেন তাদেরকে নিয়েই তারা (মালিকরা) কারখানা পরিচালনা করবেন। বাইরে থেকে তারা কোনো কর্মীকে নিয়ে আসবে না। যারা এই পাঁচদিন কাজ করবে না, যারা বাইরে আছেন- তাদের চাকরিতে কোনো সমস্যা হবে না। তারা ৫ তারিখের পর ধাপে ধাপে আসবেন।’

তিনি বলেন, ‘তাদের (বিজিএমইএ নেতা) সঙ্গে যখন কারখানা খোলা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়, তখনও বলা হয়েছিল- যারা শুধু ঢাকাতে বা কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন, তারাই যোগ দেবেন। সেটার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত (কারখানা খোলা) নেয়া হয়েছে।’

‘কেউ হয়তো মনে করছেন ৫ দিন মিস করব, চলে যাই। অনেকে হয়তো আতঙ্কিত হয়ে ফিরছেন, চাকরি থাকবে কি-না! আমরা সবাইকে বলছি- কারো আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বিজিএমইএ সভাপতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা দেখবেন, সরকারও বিষয়টি দেখবে।’

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কেউ চাকরি হারাবেন না। তারা আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে ৫ তারিখের পর আসবেন। এত কষ্ট করে করোনার ঝুঁকি নিয়ে তাদের আসার কোনো প্রয়োজন নেই।’