অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে বাংলাদেশি পুলিশ ইন্সপেক্টরকে আটক করেছে বিএসএফ, দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত
নিউজ ডেস্ক
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরঞ্জের পৃষ্ঠপোষক শেখ সোহেল রানাকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আটক করেছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে গত ৩রা আগষ্ট শুক্রবার তাকে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএসএফ গত শনিবার (৪ আগষ্ট) বিকেলে এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, “নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন পরিদর্শক অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের সময় #১৪৮বিএন এর সতর্ক সেনারা তাকে গ্রেপ্তার করে।” তার কাছ থেকে বিদেশি পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও এটিএম কার্ড জব্দ করেছে বিএসএফ। পরে বিএসএফ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের শেষে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মেখলিগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে।
ভারতের গোপালগঞ্জ জেলার শেখ সোহেল রানা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন বলে বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে বিএসএফ কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন বাংলাদেশে সোহেল রানার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত এলাকায় ডিএমপির পরিদর্শকের আটকের ব্যাপারে অবগত আছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনও যাচাই করতে পারিনি তিনি আসলেই ডিএমপির কর্মকর্তা কিনা, আমরা ইতোমধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরকে জানিয়েছি।”
এদিকে, তাৎক্ষনিক পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারি মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) মীর সোহেল রানাকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভারতে সোহেল রানাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
এদিন ডিএমপির গুলশান ডিবিশনের ডেপুটি কমিশনার মো আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল রানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডিউটিতে ছিলেন। তবে সোহেল রানা এখন কোথায় তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ নূরে আজম মিনা জানান, সোহেল রানা কয়েকদিনের ছুটিতে ছিলেন ও সম্প্রতিই ডিউটিতে যোগদান করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ডিউটিতে ছিলেন, এটিই বনানী থানায় তার শেষ উপস্থিতি ছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে, বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে গেছেন, এমন পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে তার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়ন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সোহেল রানাকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গতকালই (রোববার) সোহেল রানার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন, গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে এমন রিপোর্ট আসার পর বনানীর এ ইন্সপেক্টরকে (তদন্ত) বরখাস্ত করা হয়েছে।
ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মধ্যে দেশ ছাড়ার সময় গত শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্দায় ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সোহেল রানাকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা। এ অবস্থায় তার স্থলে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আলমগীর গাজীকে বদলি করা হয়েছে।
গতকাল রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডিএমপির ২১ পরিদর্শক (পুলিশ পরিদর্শক নিরস্ত্র) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
তাদের মধ্যে সোহেল রানাকে সরিয়ে উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর গাজীকে এ পদে বনানী থানায় বদলি করা হয়েছে। এ আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলেও আদেশে জানানো হয়।
এর আগে গুলশান বিভাগের ডিসি ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত চিঠি দেন। সেখানে তিনি (ডিসি) সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এরপরই বনানী থানার এ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, গতকাল রোববার বিকেলে পুলিশ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার দেশত্যাগে কারও গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিদর্শক সোহেল রানা কীভাবে দেশত্যাগ করলো, তার দেশত্যাগে কারও গাফিলতি ছিল কি না, সেসব বিষয়ে আজ (রোববার) সকালে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পরিদর্শক সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইজিপি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ফলে সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনায় সমস্যা হবে না। যেহেতু সোহেল ভারতে একটি মামলার আসামি, অতএব সে প্রক্রিয়া শেষ হলে অবশ্যই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রক্রিয়া দেখে এটি স্পষ্ট যে, সে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে।
প্রায় ১ লাখ গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা হয়। ভুক্তভোগী ২৯ জন গ্রাহের পক্ষ থেকে তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাশুকুর রহমানসহ বর্তমান তিনজন কারাগারে আছেন। এছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত বীথি আক্তারসহ দুজন পলাতক রয়েছেন। বীথি আক্তার পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার চতুর্থ স্ত্রী, মামলার বাদী এমনটিই জানিয়েছেন।