এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক রোডম্যাপ আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
 
নিউজ ডেস্ক
জলবায়ু নিয়ে নিউইয়র্কে বিশ্ব নেতাদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সাহসী ও জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস ও ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক সম্মেলনটির আয়োজন করে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ ও বৃক্ষ রোপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় শান্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছেন। তার লক্ষ্য ছিলো সবার সাথে বন্ধুত্বপূূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, এবং কারো সাথে বৈরিতা নয়।
এরআগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে আয়েজিত জলবায়ু নিয়ে বিশ্ব নেতাদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ছয়টি সুপারিশ পেশ করেন শেখ হাসিনা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ ঠেকাতে প্যারিস চুক্তির কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া, উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল আদায়ের ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০৩০ এর এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নেয়া পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যে কোন বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবেলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকেও পূর্ণতা দেবে”।
বিশ্বের উন্নয়ন জোরদার করতে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা রাখেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরই এখন এসডিজির সাফল্য নির্ভর করছে। এখন বিশ্বের সব স্থানে টিকা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৩০ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে।’
তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। অধিকন্তু, আমাদের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।’
চতুর্থ প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে।’
পঞ্চম ও সবশেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোরদার করা ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের সব দেশে করোনার টিকা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি বলে জানান তিনি। এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে বাংলাদেশকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয় অনুষ্ঠানে।
পরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের উত্তর লনের ইউএন গার্ডেনের উত্তর লনে হানি লোকাস্ট নামের একটি ফুলের গাছ ও একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের দুঃখের কথা ভেবেছেন সবসময়। পাশাপাশি ভেবেছেন সারা বিশ্বের ক্ষুধা, দারিদ্রে জর্জরিত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথা। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিলো সবার সাথে বন্ধুত্বপূূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, কারো সাথে বৈরিতা নয়। সারাজীবন শান্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি। শান্তি ছাড়া কখনো কোনো দেশে উন্নতি নয় না্ বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা একটা বিশেষ দিন। কারণ আমাদের যুদ্ধ বিজয়ের পর ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
