উপজাতি সন্ত্রাসীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিথ্যাচার!
মোঃ সাইফুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে
চাঁদাবাজি, হত্যা, খুন ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র পোষ্ট কমান্ডার ও অস্ত্র প্রশিক্ষক সন্ত্রাসী মিলন চাকমা ওরফে নবায়ন চাকমা (৪৪) গত ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখ ভোরে দিঘিনালা উপজেলার বাবু ছড়ার বাঁশঢালা নামক স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর একটি টহল দলের হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার বাসগৃহ তল্লাশি করে একটি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি, তিনটি অবৈধ ওয়াকিটকি, আটটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও একটি পোর্টেবল জেনারেটর উদ্ধার করা হয়। মিলন চাকমা দীর্ঘদিন যাবৎ দিঘিনালা এলাকায় চাঁদাবাজি, হত্যা-খুন, বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
তার বিরুদ্ধে দীঘিনালা থানায় জিআর নং-০০৫/১৫ ধারা ৩০২/১৫, জি আর নং-৪৫৮/১৮ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩৮৩/০৪৯/৫০৬ এবং জিআর নং- ২১৭/১১ ধারা ১৯(a)- ১৮৭৮ অনুযায়ী তিনটি মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা যায় সেসময়।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী জানতে পারে দীঘিনালা উপজেলার ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মনিভদ্র পাড়ার বাসিন্দা শান্তি রঞ্জন চাকমার বাড়িতে দীঘিনালা উপজেলার ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের কমান্ডার মিলন চাকমা অবস্থান করছে। সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এর কোম্পানি কমান্ডার মিলন ওরফে সৌরভ চাকমার কাছে বিদেশি অস্ত্র মজুদ ছিলো, উক্ত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানিক দল উক্ত এলাকায় গমন করে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে মিলন চাকমা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাৎক্ষনিক সেনা সদস্যরা তাকে ধাওয়া করলে সে পাহাড় থেকে লাফ দেয় এবং তার শরিরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পাপ্ত হয় । তাৎক্ষনিক মিলন চাকমাকে সরাসরি দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় মিলন চাকমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল আনুমানিক ৯ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকের ভাষ্যমতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করেছে মর্মে মিথ্যা অপপ্রচার করে যাচ্ছে। যা শুধুমাত্র পাহাড়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিরাচরিত মিথ্যাচার বৈকি আর কিছুই নয়। উপজাতি সশস্ত্র স্বার্থান্বেষী ইউপিডিএফ কর্তৃক প্রকাশিত অনলাইন একটি পত্রিকার মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের ইচ্ছেমত।
স্থানীয়রা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী মানেই বিশেষ এক শ্রেণীর মানুষের চোখের বিষ, আর এখানে তাদেরকে নিয়ে অপপ্রচার বা মিথ্যাচারও নতুন কিছু নয়। বলতে গেলে বিশেষ এক মহলের অপকর্ম ঢাকতেই যেন বার বার টার্গেট হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তাবাহিনী।
এদিকে, নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন চাকমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর গত ৩০ মার্চ বুধবার একটি লম্বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। “Bangladesh: Indigenous Activist Dies in Military Custody” প্রতিবেদনে তারা মিলন চাকমার মৃত্যুর জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়ী করে সরকারের কাছে একটি স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছে এবং সেই সাথে এ ঘটনায় দায়ী যেকোন অফিসারের জবাবদিহি চেয়েছে।
সিএইচটি কমিশনের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, “তার (মিলনের) কাছ থেকে সেনারা তার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড জানতে চায়। তিনি তা দিতে না চাইলে সেনারা তাকে উরুতে ও অন্ডকোষে লাথি দিয়ে আঘাত করে। এরপরও তার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে না পারলে সেনারা একটি ‘আঝার বিজি’ গাছের লাঠি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদম মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে রাখে। এ অবস্থায়ও সেনারা আবার তাকে লাথি মারতে থাকে। একজন মারধর করে চলে এলে আবার অন্যরা গিয়ে তাকে মারধর করে। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে আর উঠতে না পারলে এরপর সেনারা তাকে একটি সামরিক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা পর সেনারা মিলনকে দীঘিনালা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, “নবায়ন চাকমা মিলনের মর্মান্তিক মৃত্যু পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিপীড়নের একটি নমুনার সাম্প্রতিকতম ঘটনা। “কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে মিলনের মৃত্যুর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক নির্যাতনের একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করা যা সরকার ক্রমাগত উপেক্ষা করেছে।”
এ নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে ঘটনার বিস্তারিত জানতে গিয়েছিলাম দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের বাঁশঢালা এলাকায়, যেখান থেকে মিলন চাকমা প্রথমে আটক করা হয়েছিলো। সাথে ছিলো আমার উপজাতি এক বন্ধু তন্ময় খীসা (রাতুল), রাতুল যদিও দীঘিনালার সন্তান কিন্তু সে পড়াশুনার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় বসবাস করছে।
বাঁশঢালা এলাকায় যাওয়ার পর মিলন চাকমার বিষয়ে কথা বলতে চাইলাম স্থানীয়দের সাথে। কিন্তু কোন এক অজানা আতঙ্কে সবাই যেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। পরবর্তীতে বন্ধু রাতুলের আশ্বাস ও ভরসায় ২-১জন কথা বলতে রাজি হলো। আধাঘন্টা কথা বলার পর বেরিয়ে আসলো ঘটনার পেছনের ঘটনা।
জানা যায়, নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন চাকমা ছিলেন ইউপিডিএফের দীঘিনালা, লংগদু ও বাঘাইছড়ির উপজেলার প্রধান সশস্ত্র প্রশিক্ষক। এর আগে তিনি কোম্পানী ও পোষ্ট কমান্ডার (সন্ত্রাসীদের ভাষ্যে মেজর পদবী) হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন। গত ১৫ মার্চ মিলন চাকমাকে আটকের ঠিক ২দিন পর থেকেই তিনি একটি সশস্ত্র গ্রুপের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার কথা ছিলো। এছাড়া উক্ত এলাকায় মিলন চাকমার নিরাপত্তার জন্য ৮-১০ জনের একটি সশস্ত্র ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী দল প্রায় সবসময়ই উক্ত এলাকায় টহল দিতো। এসময় তাদের হাতে স্থানীয়রা নানা ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন।
এছাড়া উক্ত এলাকাটিতে স্থানীয় পাড়া প্রধানের মাধ্যমে প্রতিটি ঘর থেকে একেক দিন নবায়ন চাকমার পুরো দিনে খাবার সংগ্রহের জন্য বাধ্য করা হয়। কেউ খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানালে মোটা অঙ্কের জরিমানার হুঁশিয়ারিসহ এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়া হয়।
দীর্ঘদিন উক্ত এলাকায় অবস্থান করা নবায়ন চাকমার সাথে প্রসীত বিকাশ খীসার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিলো দাবি করে স্থানীয়রা বলছেন, কথায় কথায় অস্ত্র বের করে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা আদায়সহ উঠতি বয়সী উপজাতি মেয়েদের নিজের লালসার স্বীকার বানাতেন মিলন। এছাড়া সরকার ও সেনাবাহিনী বিরোধী যেকোন মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্থানীয়দের নিজেদের প্রোগ্রামে জড়ো করতেন বলে দলীয় ভাবেও তিনি প্রসীত বিকাশ খীসার পছন্দের পাত্র ছিলেন।
ঘটনার দিন প্রত্যক্ষদর্শী নয়ন চাকমা (ছদ্মনাম) জানান, ঘটনার দিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা নবায়ন চাকমাকে হাতে-নাতে ধরতে আসছে এমন খবর পেয়ে আগে থেকেই তাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র চহল দলের সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং নবায়নকেও পালিয়ে যেতে খবর পাঠায়। এসময় কিছুদিন পূর্বেই স্বাভাবিক অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়া নবায়ন চাকমা নিজেও পালানোর প্রস্তুতি নেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। এসময় নবায়ন চাকমা দৌড়ে বাঁশঢালা এলাকায় পাহাড়ের উপরে উঠে যায় এবং সেনা সদস্যরাও পিছু নেয়। এক পর্যায়ে নবায়ন চাকমা (আগেই অসুস্থ) পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্নক জখম হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে দ্রুত নিজেদের গাড়িতে তুলে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, সেনাবাহিনী আশা করেছিলো নবায়ন চাকমা দ্রুত সুস্থ হয়ে গেলে তার কাছে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নাতাবাদীদের গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষন পরই সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
এদিকে, সেনাবাহিনী নবায়ন চাকমাকে নিয়ে ঘটনাস্থল বাঁশঢালা ত্যাগ করার খবর পেয়ে তাকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র টহল দলটি পুনরায় মনিভদ্র পাড়ার বাসিন্দা শান্তি রঞ্জন চাকমার বাড়ি ফিরে আসে এবং স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একত্রিত করে। এরপর নবায়ন চাকমা যে ঘরে থাকতো, সেখানে ঢুকে তার কাপড়-চোপড় এলোমেলো করে ঘরের কিছু আসবাবপত্র ভাংচুর করে। সেখানে একত্রিত করা লোকজনের মধ্যে স্থানীয় পাড়াবাসী স্ত্রী ও তার ছেলের সামনে শান্তি রঞ্জন চাকমা নামে একজনকে বেদড়ক মারধর করে ধরে নিয়ে যায় এবং পাড়াবাসীসহ শান্তি রঞ্জন চাকমার স্ত্রী ও পুত্রসহ সবাইকে তাদের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্য গণমাধ্যমের মাসনে বলার জন্য বাধ্য করে। এরপর থেকেই মূলত স্থানীয়রা আতঙ্কে অপরিচিত কারো সামনে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।
মোটামুটি আধাঘন্টার মতো কথা বলার এক পর্যায়ে আমাদের সামনে উপস্থিত একজনের কাছে মোবাইলে একটি কল আসে এবং তিনি মাত্র ৩০-৪০ সেকেন্ড কথা বলার পর স্থানীয় সবাইকে নিজেদের বাড়ি চলে যেতে বলেন, আমাদেরকেও দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার অনুরোধ করেন। আমাদেরও আর বুঝতে বাকি রইলো না। আমরাও দ্রুত আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করে দীঘিনালা সদরে চলে আসি।
ঘটনাটি নিয়ে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ মতামত লিখবো, লিখবো করেও সামান্য অসুস্থতার কারণে লিখতে বসতে পারিছিলাম না। গতকাল (৩০ মার্চ) হঠাৎই চোখে পড়লো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি পড়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর প্রতি আমার পূর্বে থেকেই যে শ্রদ্ধা বা বিশ্বাসযোগ্যতা ছিলো তা হারিয়ে গেলো এক নিমিষেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতো একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন কিভাবে এমন একটি দায়িত্ব জ্ঞানহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে? তারা তাদের দায়-দায়িত্ব ভূলে গিয়ে সিএইচটি কমিশনের মতো একটি সাম্প্রদায়িক, একপেশে ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার সংস্থার রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন ছাপতে পারে তা কখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না।
এছাড়া এমন একজন সন্ত্রাসী, যার নামে দীঘিনালা থানায় জিআর নং-০০৫/১৫ ধারা ৩০২/১৫, জি আর নং-৪৫৮/১৮ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩৮৩/০৪৯/৫০৬ এবং জিআর নং- ২১৭/১১ ধারা ১৯(a)- ১৮৭৮ অনুযায়ী তিনটি মামলা চলমান রয়েছে তাকে নিয়ে কোন প্রতিবেদন প্রকাশের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর উচিত ছিলো ঘটনাটির প্রত্যক্ষ তদন্ত করা, যা একটি নিরপেক্ষ কমিশনের বৈশিষ্ঠ্য।
আমার কাছে সবচেয়ে বড় এবং সবথেকে আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর কপি এবং পেস্ট তত্বটিকে। ঘটনার পর গত ১৯ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের সবচেয়ে বড় অপপ্রচারের হাতিয়ার সিএইচটি নিউজ পত্রিকায় (যেটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে থানায় মামলা চলমান রয়েছে।) “প্রত্যক্ষদর্শীদের লোমহর্ষক বর্ণনা: সেনারা নবায়ন চাকমা মিলনকে অমানুষিক নির্যাতনের পর অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে গেছে” শীর্ষক একটি অপপ্রচার চালায়। এর মাত্র কয়েকদিন পর সেই তথ্য কপি করে একটি প্রতিবেদন তৈরী করে তা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে টার্গেট করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
মূলত পাহাড়ে উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, অপহরণ করে অর্থ আদায়, পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে শান্তি বিনষ্টসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। এছাড়া ধর্মের নামেও নানা অপকর্ম করছে। দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। বছরের পর বছর এসব চাঁদাবাজ ক্যাডারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে পাহাড়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানীয় হাটে-বাজারে সামান্য কলা বিক্রি করতে গেলেও এসব সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপর দোষ চাপায়। এমনকি তারা সেনাবাহিনীর পোশাক পরেও অপকর্ম চালায়। চার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হয়ে কথিত এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবীও নানা অপপ্রচারে লিপ্ত।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর কারণে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিতে পারে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো অপরাধের রাজত্ব কায়েম করতে পারে না। তাই তারা পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে কাজ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দিনরাত নানা অপপ্রচার করেই চলছে। যেখানে সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে, সেখানে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে সেনাবাহিনীর উপরই দোষ চাপায়। অথচ সেনাবাহিনী থাকার কারণে পাহাড়ে সকল ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করতে পারছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় ও আর্ত-মানবতার সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান সবচেয়ে বেশি। অথচ ধর্মের নামে নানা স্পর্শকাতর ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে প্রতিনিয়ত নানা অপপ্রচারে লিপ্ত এসব সন্ত্রাসীরা। এজন্য তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিদিনই নতুন নতুন অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের যেসব এলাকা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে, সেসব এলাকায় কিয়াংঘর তৈরি করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো জায়গা দখল করছে। একপর্যায়ে সেই কিয়াংঘর পুড়িয়ে ফেলে সেনাবাহিনীর নামে অপপ্রচার চালায়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতেও এরা আশ্রয় নেয় নতুন নতুন অপপ্রচারের।
পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি—বাঙালিরা আরো বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসংখ্য কিয়াংঘর তৈরি করেছে এবং তার সুরক্ষায় সর্বাত্মকভাবে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেছে। পক্ষান্তরে আমাদের ঠিক পার্শ্ববর্তী দেশের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সেনাবাহিনী জাতিগত নিধন চালিয়ে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে হাজার হাজার নিরীহ মুসলমানকে জীবন্ত পুড়িয়ে, জবাই করে, গুলি করে হত্যা করেছে। সেই সাথে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে অসংখ্য মসজিদ। তাদের নির্মমতার শিকার হয়ে প্রায় ১২ লক্ষাধিক অসহায় মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের দেখভাল করা, চিকিৎসা সেবা প্রদান, খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতেও আমাদের এই দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি সেদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নসহ ধর্মপ্রাণ সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্যও উপাসনালয় তৈরি করে দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে। সেনাবাহিনী দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম, নির্ঘুম রাত্রিযাপন, সাপের কামড় আর ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও মাসের পর মাস মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, প্রিয়জনদেরকে ছেড়ে দুর্গম পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের অন্বেষায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছে। অথচ তাদেরকেই কি-না সেখানে অপপ্রচারের বলি বানানো হচ্ছে!
আর সবশেষ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতো একটি মানবাধিকার সংগঠনের এসব অপপ্রচারে শামিল হয়ে বিশ্ববাসীর কাছে মিথ্যাচার, নতুন করে পাহাড়, দেশ ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে নতুন করে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করছে।