আরসার প্রধানসহ ৫৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীর (৩৮) বসতঘর থেকে উদ্ধার অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি সোমবার দুপুরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। রামু সেনানিবাসের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট গ্রেনেডটি সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করে।
পুলিশ জানায়, ৬ জানুয়ারি বেলা দেড়টার দিকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নবী গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন বিকেলে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা মোহাম্মদ নবীর বসতঘরে তল্লাশি চালিয়ে অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি উদ্ধার করেন।
ঘটনার দুই দিন পর রোববার রাতে উখিয়া থানায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেন গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনকে (৪৫) আসামি করে মামলা করে এপিবিএন। বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে করা মামলাটিতে এজাহারনামীয় আসামি ৩৪ জন এবং আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীকে ৩ নম্বর এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মির’ (আরসা) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে (৪৮) ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এজাহারে জুনুনির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখা। আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা নবী হোসেনের ঠিকানা দেখানো হয়েছে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-৪১ ব্লক। তাঁর বাবার নাম মোস্তাক আহমদ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবী আরসার সমর্থক। তাঁর ঘরের কোনায় পাওয়া গেছে আর্জেস গ্রেনেডের মতো দেখতে অবিস্ফোরিত অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি। আজ দুপুরে গ্রেনেডটি রামু সেনানিবাসে নিষ্ক্রিয় করা হয়। গ্রেনেডটি কীভাবে রোহিঙ্গা বসতিতে এল, তার রহস্য উদ্ঘাটনে অনুসন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নবী বর্তমানে পুলিশি পাহারায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নবীর কপাল ও পায়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবী আরসার হয়ে আশ্রয়শিবিরের মাদক চোরাচালানে জড়িতদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করতেন। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মাদক চোরাচালানের হোতা নবী হোসেনের সঙ্গে বিরোধে জড়ান তিনি। নবী হোসেনের বাহিনীকে ঠেকাতে মোহাম্মদ নবী আরসা থেকে বিপুল বোমা ও অস্ত্রশস্ত্র ঘরে মজুত করেন, এমন খবরের ভিত্তিতে এবং অস্ত্র লুট করতে নবী হোসেন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা মোহাম্মদ নবীর ঘরে হামলা চালায়। এ সময় মোহাম্মদ নবীকে তুলে নিতে ব্যর্থ হলে কয়েকটি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় নবী হোসেন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে এপিবিএন মোহাম্মদ নবীর ঘর থেকে গ্রেনেডটি উদ্ধার করে।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। আরসার অস্ত্রধারীদের ঠেকাতে মাদকের টাকায় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও হ্যান্ড গ্রেনেড সংগ্রহ করছে নবী হোসেন বাহিনী। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সাড়ে ৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। একজনের নাম রশিদ আহমদ (৩৬)। তিনি উখিয়ার জামতলী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৫) এ-৪ ব্লকের ৩৩২ নম্বর শেডের বাসিন্দা আবদুল হাকিমের ছেলে। রশিদ ক্যাম্পের ১-৪ ব্লকের হেড মাঝি ছিলেন। অপরজন মোহাম্মদ সেলিম (৩৫)। তিনি উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-ব্লকের আবদুস সোবহানের ছেলে। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের বি-ব্লকের সাবমাঝি ছিলেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ২৩ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন নবী হোসেন বাহিনীর সমর্থক রোহিঙ্গা মাঝি এবং ৫ জন আরসার সদস্য। বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত কয়েক দিনে আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন মাঝিকে বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে কিংবা কুপিয়ে হত্যা করে। আশ্রয়শিবিরের অন্তত ৭০০ জন মাঝি আরসার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েকজন মাঝি ইতিমধ্যে আশ্রয়শিবির ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে মাঝি আছেন প্রায় আড়াই হাজার। আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।