জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত বান্দরবান: কমবে দুর্ঘটনা, পর্যটন নিয়েও আশা - Southeast Asia Journal

জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত বান্দরবান: কমবে দুর্ঘটনা, পর্যটন নিয়েও আশা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পর্যটন নগরী হিসেবেই পরিচয় বান্দরবানের। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বান্দরবানের পাহাড়গুলোতে ছুটে যান পর্যটকরা। কিন্তু জেলার প্রবেশ পথটিই ছিল অপ্রশস্ত, উঁচু-নিচু। ফলে এই সড়কে দুর্ঘটনা ছিল নিয়মিত। শুধু তা-ই নয়, বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেলে বা খানাখন্দের কারণে সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গোটা জেলাই বাকি জেলাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

শেষ পর্যন্ত সরকারের উদ্যোগে দীর্ঘ প্রায় চার বছরের কর্মযজ্ঞ শেষে এই সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে। আগের তুলনায় প্রশস্ত হয়ে এই সড়কটি এখন যুক্ত হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে। এরই মধ্যে সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। তবে শিগগিরই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। স্থানীয়রা বলছেন, সড়কটির আধুনিকায়নের ফলে দুর্ঘটনার প্রবণতা কমবে। একই সঙ্গে জেলার পর্যটনেও নতুন গতি আসবে, যা অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করবে।

বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম চট্টগ্রামের কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কটি আঁকাবাঁকা, ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটত। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থান উঁচু-নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে তা তলিয়ে যেত। এতে বাস স্টেশনসহ সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ত। তখন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত এই জেলা। পর্যটক তো বটেই, স্থানীয়দেরও এ ধরনের পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হতো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে সড়কটি সংস্কার করে আধুনিক করে তোলার উদ্যোগ কার্যকর হয়।

সেনাবাহিনী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করতে প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সওজের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২৬৬ দশমিক ৫৬ কোটি টাকার প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল সদ্য বিদায়ী বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। সে অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদের দুই সপ্তাহ আগেই গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সড়কটির কাজ শেষ করে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের আওতায় ২১টি সেতু, ১৫টি কালভার্ট ও ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিষ্কাশন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়কও প্রশস্ত করা হয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তা (২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) মেজর মো. শাহ সাদমান রহমান বলেন, আগে সড়কটির গড় প্রস্থ ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৫৮ মিটার (প্রায় ১৮ ফুট)। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ও পণ্যবাহী বাহনের চাপ অনুযায়ী সড়কটি প্রয়োজন অনুযায়ী চওড়া ছিল না। তাই এ সড়কে উভয়মুখী যানবাহনের চলাচল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। এখন সড়কটি ৭ দশমিক ৩০ মিটারে (প্রায় ২৪ ফুট) উন্নীত করা হয়েছে। গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সড়কটি প্রশস্ত করায় সবাই উপকৃত হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজ শেষ হওয়ার পরই ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটিকে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় পর্যটক ও স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। গত মাস দেড়েক সময়ের মধ্যেই সড়কটি ব্যবহারে আগের তুলনায় অনেক ভালো অভিজ্ঞতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবানের বাস স্টেশন এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষে নতুন এই সড়ক খুব সুন্দর ও প্রশস্ত হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাও অনেক কমে গেছে।’

বাসচালক মো. জসীম বলেন, ‘বান্দরবান সড়কে এখন বাস চালানো আগের চেয়ে অনেক সহজ। আগের চেয়ে সড়কের মান ভালো হওয়ায় এবং রোড ডিভাইডার থাকার কারণে নির্ভয়ে এখন গাড়ি চালানো যায়।’

সড়ক বিভাগ বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটির উদ্বোধন করবেন। সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় এ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এতে পর্যটন শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে।

সংস্কার হওয়া এ সড়কটি নিয়ে পর্যটন খাতেও আশার কথা জানিয়ে বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রাজিব বড়ুয়া বলেন, ‘এই সড়কে আগে এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটত যে পর্যটকরা বান্দরবানে আসতে ভয় পেতেন। এখন সড়কটি প্রশস্ত ও উন্নত হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে। সারা দেশের সঙ্গে বান্দরবানের যোগাযোগ নতুন গতি পাবে। জেলায় পর্যটকদের উপস্থিতিও বাড়বে বলেই আমরা আশা করছি।’