দুইবার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারীর স্নাতক অর্জন - Southeast Asia Journal

দুইবার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারীর স্নাতক অর্জন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের দি ল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হয়েছেন ২৬ বছর বয়সী তাসমিদা জোহর। তার এই অর্জনের বিশেষত্ব হলো, প্রথম কোনো রোহিঙ্গা নারী হিসেবে ভা রতে স্নাতক হয়েছেন তিনি। তবে অসাধারণ এই অর্জনের পরেও বিপরীতমুখী অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তাসমিদা। রাজধানী নয়াদিল্লির একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার পাবলিক পার্কে নেওয়া সাক্ষাৎকারে তাসমিদা বলেন, ‘আমি খবরের শিরোনামগুলোর জন্য আনন্দিত। কিন্তু এটি আমাকে দুঃখও দিচ্ছে। আমি খুশি কারণ আমি এগিয়ে যেতে পারছি। কিন্তু দুঃখ হলো অনেক রোহিঙ্গা নারী এই অবস্থানে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা পারেনি। ভারতে প্রায় ২০ হাজা র রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তবে ২০১৪ সালে হিন্দুত্ববাদী সরকার দেশটির ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং আক্রমণের সম্মুখীন হয়।

তাসমিদা জানান, তিনি দুইবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তার নামও দুইবার বদলাতে হয়েছে। মিয়ানমারে ‘তাসমিন ফাতিমা’ নামে জন্ম হয়েছিল তার। তবে শিগগিরই তার বাবা-মা সন্তানের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। মিয়ানমারের স্কুলগুলোতে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের স্বীকার হয় উল্লেখ করে তাসমিদা বলেন, ‘বাবা-মাকে আমার নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল। কারণ মিয়ানমারে বৌদ্ধ নাম না থাকলে আপনি স্কুলে যেতে পারবেন না। আপনি বার্মার স্কুলগুলোতে প্রথম স্থান অর্জন করলেও তারা আপনাকে পুরস্কার দেবে না, যদি আপনি বৌদ্ধ না হন।’ ‘সেখানে প্রথমে বৌদ্ধ শিশুদের, পরে আমাদের রোল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। আমাদের জোরে কথা বলতে দেওয়া হত না। সবসময় ক্লাসের পেছনে বসতে হত। স্কুলে স্কার্ফবা হিজাব পরাও নিষেধ ছিল।’

তাসমিদা বলেন, ‘আমার বাবা আমানুল্লাহ জোহরের ফল ও সবজি রপ্তানি এবং বিক্রির ব্যবসা ছিল। প্রায় তাকে আটক করা হত এবং পুলিশ তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দিত।’ নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ায় পরিবারটি ২০০৫ সালে লাদেশে চলে যায়। সেখানে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয় তা দের। ৬৪ বছর বয়সে তাসমিদার বাবা আমানুল্লাহ জোহর দিনমজুর হিসেবে কাজ নেন এবং তার মা আমিনা খাতুন ৫৬ বছর বয়সে স্থানীয় কারখানায় কাজ করতেন।

বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকে আবারও শিক্ষাজীবন শুরু করেন তাসমিদা। যদিও তিনি মিয়ানমারে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশো না করেছিলেন। তবে নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা কম ছিল না তার। তাসমিদা বেশ কয়েকটি ভাষা জানেন। রোহিঙ্গা এবং বার্মিজ ভাষা আগে থেকেই জানতেন। এরপর বাংলা, উর্দু, ইংরেজি ও হিন্দি শেখেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশে সহিংসতার মুখোমুখি হলে পরিবারটি ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে হরিয়ানা ও পরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছায় পরিবারটি। হরিয়ানায় শিক্ষার সুযোগ না পেয়ে দক্ষিণ-পূর্বদিল্লির কালিন্দী কুঞ্জ ক্যাম্পে বসতি স্থাপন করে।

নিজের অর্জনের বিষয়ে তাসমিদা জানান, দিল্লিতে বাসে যাতায়াত করতেন তিনি। অনেক সময় সিটও পেতেন না। তবে মি য়ানমারে যে পরিস্থিতি তিনি দেখেছেন, তাতে বাসে সিট না পাওয়া কোনো বিষয়ই ছিল না। যদিও তার মা আমিনা খাতুন
মেয়ের যাতায়াত নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।

তাসমিদা আরও জানান, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষগুলো তাদের একটি মেয়ের স্নাতক অর্জনের বিষয়টি জেনেছে। এখন বুঝতে পারছে, চাইলে তারাও দৃশ্যমান হতে পারবে। তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে। ফলে ‘আমাদের মেয়েও
আপনার মতো হবে’-এর মতো মন্তব্য পেতে শুরু করেছেন মানবাধিকার কর্মী হতে চাওয়া তাসমিদা।