প্রত্যাবাসন পরিবেশ দেখতে রাখাইন গেলো রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল
 
                প্রত্যাবাসন পরিবেশ দেখতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মিয়ানমার যাচ্ছেন
 
নিউজ ডেস্ক
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে পরিদর্শনে গেছে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার (৫ মার্চ) সকাল ৯টার পর টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়াস্থল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে বিজিবির নিরাপত্তায় ‘সেন্টমার্টিন ক্রুজ’ নামে একটি স্পিডবোটে করে প্রতিনিধি দলটি রাখাইনের মংডুতে রওনা করে।
সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রথমবারের মতো শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে যাত্রা করলো। এই দলে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় রোহিঙ্গা শরণার্থী দলের সদস্যদের ক্যাম্প থেকে এনে বনবিভাগের রেস্ট হাউজে রাখা হয়। এর মধ্যে শালবনের ১৪, লেদার চার ও জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই জন রয়েছেন।
এই সফরের উদ্দেশ্য হলো রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযোগী কি না তা দেখা উল্লেখ করে আরআরআরসি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা রাখাইনের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাওয়া হচ্ছে। মূলত দেশটির সরকার সম্ভব্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সেন্টার নির্মাণ করেছে সেগুলো দেখানোর পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে যাওয়া। ফেরার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদার সঙ্গে। কোনও রোহিঙ্গাকে জোর করে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না।
আরআরআরসি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল যে এক হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে পরিচয় যাচাই-বাছাই করেছে পাইলট প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এই সফরের পরে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। প্রত্যাবাসনের তারিখ সুনির্দিষ্ট না হলেও এই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) খালিদ হোসেন বলেন, ‘তিন নারীসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল নিয়ে আমরা রাখাইনের মংডুতে ৯টার পর রওনা হয়েছি। বিকালে ফেরার কথা রয়েছে। সেদেশে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনুকূল পরিবেশ দেখতে এই যাত্রা।’
রাখাইনে সফরে থাকা রোহিঙ্গা মো. সেলিম জানান, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মিয়ানমারের রাখাইনে রওনা দিয়েছি। মূলত আমরা সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা সেন্টারগুলো দেখবো। এছাড়া সেখানকার আশপাশের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখার কথা রয়েছে। এ যাত্রা আনন্দের কারণ প্রায় ছয় বছর পর অন্তত নিজ দেশ দেখার সুযোগ হবে।’
এই উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো জানিয়ে টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. কাশেম বলেন, ‘সে দেশের পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে তা প্রতিনিধি দল রাখাইন ঘুরে এলে আরও পরিষ্কার হবে। তবে আমরা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি, তারা সবাই সে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক। অন্য কোনো জায়গায় না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা অভিযান এবং রাখাইন প্রদেশে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে ঘোষণা দেওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নিলেও এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো সম্ভাব্য প্রত্যানাসনের এই কার্যক্রম চলমান।

