বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের চতুর্থ বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
নিউজ ডেস্ক
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শীর্ষ সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ)। আজ সংস্থাটির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিওএর চতুর্থ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সভাপতিত্ব করেন বিওএ সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বিওএ নির্বাহী কমিটি ও সাধারণ পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিওএ’র এজিএমে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন ও সামনে এগিয়ে নেয়ার নানা আলোচনা হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে বিওএ সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশ প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য অনেক মতামত এসেছে। ফেডারেশনগুলোকে লক্ষ্যমাত্রার গাইডেন্স দেয়া হয়েছে। সবারই একটি দীর্ঘ,মধ্যম ও স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য থাকতে হবে।’ লক্ষ্য নির্ধারণ ও পূরণে ফেডারেশনগুলোর পাশে থাকবে বিওএ। এজন্য সামনে আরো সভার কথা জানালেন সভাপতি, ‘এজিএমের বাইরেও তিন-চার মাসের ব্যবধানে আমরা মত বিনিময় সভা করব। সহযোগিতার বিষয়গুলো পুনঃব্যক্ত করব।’
বিওএ ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ সংগঠন। বিওএ’র সঙ্গে ফেডারেশন-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী সভাপতি বলেন, ‘আমাদের এখন নিয়মিত সভা হওয়ায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। নিয়মিত যোগাযোগ হলে আর যোগাযোগের ঘাটতি থাকে না।’ বিওএ সভাপতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে সহ-সভাপতি অঞ্জন চৌধুরি পিন্টু বলেন, ‘আসলেই আজকের সভাটি খুব সুন্দর হয়েছে। সামনে আমরা ফেডারেশনগুলোকে টার্গেট সেট করে দেব। সেই টার্গেটের লক্ষ্যে ফেডারেশন কাজ করবে বিওএ পাশে থাকবে।’
বাংলাদেশ ক্রীড়া ফেডারেশনের সংখ্যা অনেক। একেক ফেডারেশনের সামর্থ্য-সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা একেক রকম। সকল ফেডারেশন নিয়েই ভাবনা রয়েছে বিওএ’র, ‘আমাদের কিছু খেলা জনপ্রিয় আবার কিছু খেলায় আন্তর্জাতিক পদকের সংখ্যা বেশি। আবার কিছু ফেডারেশনের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব’ বলেন সভাপতি। সামনের মাসে রয়েছে এশিয়ান গেমস। সেই গেমসে অতিরিক্ত ব্যক্তিবর্গ প্রেরণ না করার কথা জানালেন বিওএ সহ-সভাপতি অঞ্জন চৌধুরি পিন্টু, ‘যত জন লোক প্রয়োজন তত জনই যাবে। অতিরিক্ত লোক গিয়ে টাকার অপচয় যেন না হয় এদিকে নজর দেয়া হয়েছে।’
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের সকল খেলার খেলোয়াড়রা মূলত সার্ভিসেস সংস্থা নির্ভর। আজকের সভায় বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের সার্ভিসেস সংস্থাগুলোতে অর্ন্তভূক্তির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হয়েছে। পাশাপাশি দেশের প্রশাসনিক বিভাগগুলো এখন আঞ্চলিক অলিম্পিক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃত। বিদ্যমান বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। আগষ্ট শোকের মাস। তাই পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এজিএম অনুষ্ঠিত হবে।
পরে মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা কর্তৃক ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ দুইটি অর্থ বছরে বিওএ কর্তৃক সম্পাদিত কার্যক্রমের উপর বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় এবং একই সাথে উক্ত কার্যক্রমের উপর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। মহাসচিব সফলভাবে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা, বিওএ কার্যনির্বাহী কমিটি, সাধারণ পরিষদের সকল সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ অনুমোদিত হয়-
১। বিওএ-র ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
২। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচী এবং বিওএ’র প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত ৭৬.৯৫ কোটি (ছিয়াত্তর কোটি পঁচানব্বই লক্ষ) টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
৩। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের হিসাব নিরীক্ষার জন্য মেসার্স মসিহ মুহিত হক এন্ড কোং কে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
৪। বিওএ’র গঠনতন্ত্রের Article 4 (i) উল্লেখিত ROA (Regional Olympic Association) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ৬টি বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা (ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট) বিওএ’র সাধারণ পরিষদে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা সমূহকেও ROA (Regional Olympic Association) হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য গঠনতন্ত্রের Article 4 (i) উল্লেখিত ROA (Regional Olympic Association) এর সংজ্ঞায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
৫। বিওএ’র পরবর্তী সাধারণ সভা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আয়োজনের তারিখ নির্ধারনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়।
৬। বিবিধ আলোচনায় সাধারণ পরিষদের সদস্যদের প্রতি সভাপতি ক্রীড়া উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কোন সুপারিশ বা মতামত থাকলে তা উপস্থাপনের অনুরোধ করেন। এ প্রেক্ষিতে সাধারণ পরিষদের সদস্যগণের বিভিন্ন প্রস্তাব এবং মতামতের প্রেক্ষিতে সভাপতি নিম্নবর্ণিত মতামত এবং সিদ্ধান্ত প্রদান করেন-
ক। খেলাধুলার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গ্রহণ এবং তার ভিত্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সভাপতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এ লক্ষ্যে ভবিষ্যতে বার্ষিক সাধারণ সভা এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সভার পাশাপাশি কাউন্সিলরদের নিয়ে বৎসরে একাধিক মত বিনিময় সভা আয়োজনের প্রচেষ্টা নেয়া হবে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
খ। পরবর্তী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খেলার জনপ্রিয়তা, পদক অর্জনের সম্ভাবনা এবং পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক অর্জনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেকটি ফেডারেশন নিজ নিজ খেলায় স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষনের কর্মসূচী প্রণয়ন তা বাস্তবায়ন এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
গ। অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল ফেডারেশনসমূহকে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে স্পন্সর সংগ্রহে সহায়তা এবং বিওএ’র আর্থিক সামর্থ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন আয়ের উৎস অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা নেয়া হবে বলে সভাপতি আশ্বাস প্রদান করেন।
ঘ। বিভিন্ন খেলার প্রসার এবং খেলোয়াড়দের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্ভিসেস সংস্থাসমূহকে সম্ভাবনাময় নতুন নতুন খেলা সংযোজনের জন্য সভাপতি সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান।
ঙ। সভাপতি সভাটি সুষ্ঠভাবে আয়োজনের জন্য বিওএ’র সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং একই সাথে সভা আয়োজনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ শ্যূটিং ফেডারেশনের সভাপতি এবং মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিওএ’র সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের প্রতি ও তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
৭। পরিশেষে বিওএ’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে সার্বিক সকল সহযোগিতা এবং পরামর্শ দানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবারও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সহ তাঁর পরিবারের যে সকল সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেন তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া এবং মোনাজাত করার মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, সহ-সভাপতি জনাব কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি, সহ-সভাপতি মাহাবুব আরা বেগম গিণি, এমপি, সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ, বিওএ’র কোষাধ্যক্ষ এ কে সরকার, বাংলাদেশ শ্যূটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, এসবিপি, এসজিপি,এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি, উপ-মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, উপ-মহাসচিব নজীব আহমেদ এবং বিওএ’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সামছ এ খান, বিএসপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিইঞ্জি, পিএইচডি (অব.) সহ কার্যনির্বাহী কমিটি এবং সাধারণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ।