আসামকে মিয়ানমারের অংশ বলে দাবি সাবেক কংগ্রেস নেতার, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিজেপির - Southeast Asia Journal

আসামকে মিয়ানমারের অংশ বলে দাবি সাবেক কংগ্রেস নেতার, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিজেপির

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সওয়াল-জবাব চলাকালে কংগ্রেসের সাবেক শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিবাল দাবি করেছেন, পূর্ব ভারতের আসাম একসময় মিয়ানমারের অংশ ছিল। তাঁর এই দাবির প্রবল বিরোধিতা করে আসামের বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, সাবেক কংগ্রেস নেতা ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস বিকৃত করছেন।

ভারতের সংসদে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে জনস্বার্থে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতে গতকাল বৃহস্পতিবার কপিল সিবাল আসাম নিয়ে মন্তব্য করেন। তাঁর মন্তব্য ঘিরে প্রবল আলোড়ন শুরু হয়েছে আসামে। ২০২২ সালের ১৬ মে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবাল।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬এ ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক পিটিশনের শুনানি শুরু করেছেন ৫ ডিসেম্বর। এই ধারায় বলা হয়েছে, সব বিদেশি অভিবাসী, যাঁরা ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে ভারতে এসেছিলেন, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আসামের কিছু আদিবাসী গোষ্ঠী এই ধারা চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের বক্তব্য, এই ধারা বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অভিবাসীদের অবৈধ অনুপ্রবেশকে বৈধ করেছে’।

বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে আসামের মানুষের একাংশ। তাদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন কপিল সিবাল। এ সময় আদালতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া মানুষের ইতিহাসের একটা অংশ। এই আসা-যাওয়াকে মানচিত্রের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব নয়।

শুনানিতে অংশ নিয়ে কপিল সিবাল বলেন, মানুষের অভিবাসন ইতিহাসে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। একে মানচিত্র দিয়ে বোঝা যায় না। আসাম মিয়ানমারের একটি অংশ ছিল। তারপর ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের একটি অংশ জয় করে এবং এভাবেই আসাম ব্রিটিশদের হাতে গিয়েছিল। এখন এটা প্রায় কল্পনারও অতীত, কী পরিমাণ মানুষ সে সময় অর্থাৎ দেশ বিভাজনের সময় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়েছিল।

কপিল সিবাল আরও বলেন, তখন মানুষের আসা-যাওয়ায় পূর্ববঙ্গ ও আসাম এক হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বাংলা ভাষার চর্চা শুরু হয়েছিল এবং তার ব্যাপক বিরোধিতাও হয়েছিল। এভাবেই আসামে বাঙালির সঙ্গে একটা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সে সময় (আসামের) সমাজে তারা (বাঙালিরা) এভাবেই ধীরে ধীরে মিশে গিয়েছিল। এর একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে।

আসামের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১৯৫৫ সালের আইনের এই নির্দিষ্ট ধারাই প্রধানত আসাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে। যেসব অভিবাসী ১৯৬৬ সালে জানুয়ারি ১ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে আসামে ঢুকেছিলেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আবেদন করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কিন্তু আসাম একসময় মিয়ানমারের অংশ ছিল বলে সিবাল বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক তুললেন।

আসামে বিজেপির প্রতিক্রিয়া
আজ শুক্রবার কপিল সিবালের বক্তব্যের বিরোধিতা করে আসামের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী পীযুষ হাজারিকা বলেছেন, রাজ্যের ভাবমূর্তি কলুষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন তত্ত্বকে সামনে এনে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও সিবালের বক্তব্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) হাজারিকা আজ লিখেছেন, ‘কপিল সিবালকে বিকৃত ইতিহাস পরিবেশন করা হয়েছে। এই ইতিহাস থেকে বাম-উদারপন্থীদের মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে, যে মনোভাব এই ধরনের তত্ত্বকে সামনে এনে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আসামের ইতিহাসে কোনো সময়ই আমরা মিয়ানমারের অংশ ছিলাম না। মহাভারতের সময় থেকে আমরা দৃঢ়ভাবে ভারতবর্ষের অঙ্গ ছিলাম।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাকাব্য মহাভারতে উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো অংশ স্থান পেয়েছে কি না, এ নিয়ে ভারতে দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক বহুদিনের। বামপন্থী ইতিহাসবিদদের বক্তব্য, মহাভারতে উত্তর-পূর্ব ভারতকে স্থান দেওয়া হয়নি। দক্ষিণপন্থীদের বক্তব্য বিপরীত, তবে বিষয়টি বিতর্কিত। সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কের সময় সিবালের এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নতুন বিতর্কে ইন্ধন জোগাতে পারে।

আসাম বিজেপির অন্যান্য নেতাও কপিল সিবালের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই বলেছেন, তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে তাঁরা গণ-আন্দোলন গড়ে তুলবেন। ভারতে নির্বাচনের বাতাবরণে বিষয়টি আসামসহ উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও একটি ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। বিজেপি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।