আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রমও পুরোদমে চলমান রয়েছে- ব্রিফিংয়ে ডিএমও ব্রি. জেনারেল নাজিম
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদর দফতরের মিলিটারি অপারেশন্স পরিদফতরের (ডিএমও) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন, এই মহুর্তে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের দিকে সর্বচ্চো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে যে সকল সেনা মোতায়েন ছিল সেই কার্যক্রমও পুরোদমে চলমান রয়েছে।
ফেনী-কুমিল্লাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী পরিচালিত সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অভ্যন্তরে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে সৃষ্টি হওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনসহ উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম বলেন, বেহাত হওয়া বা লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কাজে যদি বেসামরিক প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহায়তা চায় তাহলে প্রয়োজনের নিরীখে অবশ্যই সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে। মূলত, বেসামরিক প্রশাসন যেভাবে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাচ্ছে সেভাবে আমরা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এই কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, সার্বিকভাবেই চলমান রয়েছে।
এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট সেনাবাহিনীর ১৭, ২৪ ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যদের বন্যাদুর্গত এলাকায় মোতায়েন করা হয়। স্রোতের তীব্রতা এবং আবহাওয়া অত্যান্ত প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও মোতায়েনরত সেনা সদস্যরা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ প্রদানের কার্যক্রমে সর্বাত্মকভাবে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছে। এ সকল কাজের জন্য সেনাবাহিনীর সকল হেলিকপ্টার এবং প্রয়োজনীর জলযানের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। তিনি জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার সকল সড়ক ডুবে যাওয়ায় সামরিক হেলিকপ্টার ও জলযান ছাড়াও স্থানীয় নৌকা ও বাহনসমূহকে ব্যবহার করে প্রত্যান্ত অঞ্চলে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দুর্গত অঞ্চলে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য আর্মি এভিয়েশনের আওতায় মোট ৮টি হেলিকপ্টার নিয়োজিত আছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর দুটি এমআই, দুটি বেল ও একটি ডওফিন হেলিকপ্টার এবং বিজিবির একটি এমআই ও র্যাবের দুটি বেল হেলিকপ্টার এ কাজে নিয়োজিত আছে। সেনাবাহিনী বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত মোট ৪৮টি হেলি মিশন পরিচালনা করেছে। এর বাইরেও বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীও নিজস্বভাবে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
নাজিম-উদ-দৌলা আরো বলেন, প্রথম দুই দিন তীব্র স্রোত ও প্রতিকূলতার কারণে উদ্ধারের কাজ কিছুটা ব্যহত হলেও তৃতীয় দিন থেকে আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে চলমান রয়েছে। উদ্ধার কাজের অংশ হিসাবে দূর-দূরান্ত থেকে পানিবন্দি রোগী, গর্ভবতী মা, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রদানের জন্য হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কুমিল্লা সিএমএইচসহ অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সামগ্রীক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সেনাবাহিনীর ডাক্তার ও মেডিকেল টিম নিরলসভাবে এসব এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কসহ সার্বিক সড়ক ব্যবস্থা সচল রাখা এবং বাঁধ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেনন। যানজটকে উপেক্ষা করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সচল রাখতে মিলিটারি পুলিশও (এমপি) কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভেঙে পড়া মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর সিগনাল কোর, বিআরটিএ ও মোবাইল কোম্পানীর অপারেটরদের আমরা সাহায্য করছি। যার ফলে কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যে মোবাইল যোগাযোগ সচল হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেনে, ইতিমধ্যে আমরা দুর্গত এলাকা থেকে ২০ হাজারের অধিক আক্রান্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছি। ১৩টি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে দুই হাজারের বেশি অসুস্থ্য ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। তিনজন সন্তান সম্ভাবনাসহ ২২ জন অতি অসুস্থ রোগীকে হেলিকপ্টারের মাধম্যে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমাদের উদ্ধার করা একজন সন্তানসম্ভাবনা মা কুমিল্লা সিএমএইচে একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই পর্যন্ত সুখনো খাবারের ৩০ হাজারের বেশি প্যাকেট বিতরণ ছাড়াও ৬ হাজার অধিক মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। বন্যার পরবর্তী কার্যক্রমেও সেনাবাহিনী তাদের কাজের ধারা অব্যাহত রাখবে।
প্রতিকূল পরিবেশ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। হেলিকপ্টার নামার মতো জায়গা না পাওয়ায় অনেককে সঠিক সময়ে উদ্ধার করা যায়নি। আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই, কিন্তু সকল জায়গায় যেতে না পারায় সেবা দিতে পারছি না। তবে গত দুই দিন ধরে পানি নামতে শুরু করেছে। যাতায়াতের পথ সুকালে ত্রাণের কাজ আরও গতিশীল হবে। এলাকাভিত্তিক সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২১ আগস্ট থেকে অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিশেষত ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি জেলার বেশ কিছু অংশ ভয়াবহ বন্যার সম্মুখিন হয়েছে। এছাড়াও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ ও মৌলবীবাজার জেলাও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রধানও বন্যাদুর্গত এলাকায় পরিদর্শন করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোবাবিলায় সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) ও সংশ্লিষ্ট জিওসিবৃন্দসহ ঊর্ধবতন সামরিক কর্মকর্তারা এসব এলাকায় পরিদর্শন করে তদারকি করছেন। এই মহাকর্মযজ্ঞ সম্পাদনে নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, ছাত্র ও অন্যান্য সংস্থাসমূহ সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে। দেশের এই বন্যার পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। যত দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।