চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে বিদেশি অপারেটর নিয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি- স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির
![]()
নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব বিদেশি অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বিডা ও সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা বিদেশি পোর্ট অপারেটরদের “মার্কেটিং অফিসারের মতো আচরণ করছেন”, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা বলেন, দেশের নিজস্ব সক্ষমতা, বিদ্যমান অপারেটরদের অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘদিনের বন্দর ব্যবস্থাপনার কাঠামোকে অবমূল্যায়ন করে বিদেশি কোম্পানির প্রশংসা করা এখন কিছু উপদেষ্টার প্রধান দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, বন্দরকেন্দ্রিক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অস্বচ্ছতা থাকলে তা চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু কোনো দুর্নীতিবাজ বা চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়েই বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংগঠনের নেতারা বলেন, I2U2 (India, Israel, UAE, USA) কাঠামোর অংশ হওয়ায় ডিপি ওয়ার্ল্ড চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব পেলে পরোক্ষভাবে তিনটি দেশ— ভারত, আমেরিকা ও ইসরাইল—বাংলাদেশের কৌশলগত বন্দর ব্যবস্থাপনায় প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। এর ফলে জাতীয় সার্বভৌমত্ব যে কোনো সময় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সম্মেলনে জানানো হয়, বিদেশি অপারেটররা দায়িত্ব পেলে অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা হবে ব্যাপক। বর্তমানে নিউমুরিং টার্মিনালে প্রতিটি কনটেইনার থেকে দেশে আসে প্রায় ১১৯ ডলার। কিন্তু লালদিয়ার চরে এপিএম টার্মিনালস যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করছে, সেখান থেকে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ২১ ডলার। ফলে প্রতিবছর কোটি কোটি ডলার বিদেশে চলে যাবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়াবে। এছাড়া বিদেশি অপারেটররা ইচ্ছামতো ট্যারিফ বাড়ালে দেশের পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে ভোক্তা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ঢেউ তৈরি হবে।
সংগঠনটি আরও অভিযোগ করে, জনমত বিভ্রান্ত করতে ‘সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের বন্দর বিদেশিরা চালায়’—এমন ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবে সিঙ্গাপুরে কোনো কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে নেই এবং ভিয়েতনামেও কোনো টার্মিনাল এককভাবে বিদেশি অপারেটরকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে ভারত ও আফ্রিকার মডেল চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র নেতারা বলেন, অর্থনীতিকে ট্রিলিয়ন ডলার লক্ষ্যে উন্নীত করতে হলে বন্দর বিকেন্দ্রীকরণ, নদীনির্ভর অভ্যন্তরীণ বন্দর গড়ে তোলা, রেল সংযোগ বৃদ্ধি এবং দেশীয় পোর্ট অপারেটিং ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশি পোর্ট অপারেটরদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের মুনাফা ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ তুলে দিলে দেশীয় ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দুটি দাবি উপস্থাপন করা হয়—
১. নিউমুরিং টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. এপিএম টার্মিনালস ও মেডলগের সঙ্গে লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনাল চুক্তি বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত, দপ্তর সদস্য মো: সাইফুল ইসলাম, জুবায়েদুল ইসলাম শিহাব, জাবির বিন মাহবুব, আব্দুল্লাহ আল মাহিনসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বন্দর ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত অবকাঠামো বিদেশি কোম্পানির হাতে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক স্বাধীনতা দীর্ঘমেয়াদে হুমকির মুখে পড়তে পারে—বিশেষজ্ঞমহলে এমন সতর্কবার্তাও জোরালো হচ্ছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।