খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে উপজাতি সন্ত্রাসীদের হামলা-অগ্নিসংযোগ, বহু আহত
নিউজ ডেস্ক
গত বুধবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পানখাইয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগ এনে স্থানীয় এক বাঙ্গালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে জেলার দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দীঘিনালা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা সরকারী কলেজ গেইট থেকে একটি মিছিল বাজার প্রদক্ষিন করে শহরের লারমা স্কয়ার প্রদক্ষিন করার সময় পাহাড়ের আঞ্চলিক উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গঠনের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়, গুলি করে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
তবে মুহূর্তেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পাশ্ববর্তী বাঘাইছড়ি, লংগদু ও সাজেক এলাকা থেকে চাঁদের গাড়ি যোগে বহিরাগত শতশত উপজাতি যুবক এসে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মালিকানাধীন দোকানপাটসহ বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা চালায় বাঙ্গালী ছাত্র ও বাজার ব্যবসায়ীদের উপর। এ সময় উপজাতিদের পক্ষ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়।
এ ঘটনায় কয়েকশ মানুষ আহত হলেও গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে রাতেই পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি আসতে চাইলে বাঁধা দেয়া হয় তাদের। ফলশ্রুতিতে মুহুর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় লারমা স্কয়ার ও আশেপাশের পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের অন্তত ১০২টি দোকান। দীর্ঘসময় পরে ঘটনাস্থলে এসে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট কয়েকঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে কিছু দোকানপাটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় আতঙ্কিত হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রাজেশ বড়ুয়া জানান, আগুনে ১০২টির মতো দোকান পুড়ে গেছে।
ঘটনা শুরুর পর পরই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা মাঠে নামেলেও উপজাতিদের বাঁধার মুখে পড়তে হয় তাদের। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর টহল দলের সামনে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় উপজাতি যুবকরা। এসময় সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে নানা উস্কানীমূলক বক্তব্যও দেয় তার। তবে সব বাঁধা উপেক্ষা করে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি।
পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, “সেখানে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা চলছিল। সেখান থেকেই আজকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।”
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান রাতেই জানান, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সমন্বিত টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনার পর জেলার অন্যান্য উপজেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাত ৯টার দিকে পানছড়ি সরকারী কলেজের সামনের সড়কে সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি আটকে দিয়ে নানা সাম্প্রদায়িক স্লোগান দেয় উপজাতি উগ্র যুবকরা। তবে শান্ত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্র করার চেষ্টা করে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
পানছড়িতে ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া, রাতে জেলা সদরের নারায়নখাইয়া এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষে প্রায় অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা।
অপরদিকে, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না গুজবের দেখা মিলেছে। ছাত্রদের মিছিলে অতর্কিত হামলা চালানো উপজাতি সন্ত্রাসীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে প্রায় অর্ধশত ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে গুজব ছড়ানো হয়। এসব আইডি ও পেজে বলা হয়, সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালীরা মিলে পাহাড়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামের একটি পেজ থেকে পোষ্ট করে বলা হয়, ‘খাগড়াছড়ির দীঘিনালা-পানছড়ি গণহত্যা চালানো হচ্ছে, ৬৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।’ এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মুজিব ফোর্স (এম ফোর্স) এর ফেসবুক পেজ থেকেও নানা গুজব ছড়ানো হয়। আর এসব গুজবের কারনে জেলাজুড়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত।
তবে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে এ ঘটনায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোর রাতে খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগ এনে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা কিছু পাহাড়ি। সে খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নুরনবীর ছেলে। মামুনকে পিটিয়ে হত্যার একটি ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।