পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে, অনিয়ম-দূর্নীতি প্রতিরোধে চলবে অভিযান- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
![]()
নিউজ ডেস্ক
সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামকেও সরকার সমান চোখেই দেখছে মন্তব্য করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অবিচ্ছেদ্য অংশকে নিয়ে সরকারের উন্নয়নমুখী স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার পাঁয়তারা করে কেউ ছাড় পাবে না। সারা দেশের মতো পার্বত্য এলাকার মানুষও যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত করতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটছে, সেগুলো খতিয়ে দেখছে সরকার।

১৬ অক্টোবর বুধবার সকালে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির রামগড়ে গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত রামগড় থানা ও ব্যারাক ভবন উদ্বোধন শেষে রামগড় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সব জেলার মত পার্বত্য তিন জেলাও সমানতালে এগিয়ে চলছে। পার্বত্য তিন জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি পর্যটনের জন্য পৃথিবীর মধ্যে অনন্য স্থান। এরকম পরিবেশ কখনো অশান্তির হতে পারে না। “আমরা পার্বত্য এলাকার শান্তি সংরক্ষণে পার্বত্য এলাকার জনগণের সহযোগিতা কামনা করছি।” পাহাড়ে যারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুনসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন তারা যদি ভুল স্বীকার করে সরকারের কাছে আবেদন করেন তাহলে সরকার তাদের পুনর্বাসনে সবকিছু করবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে ৬৩০ জন চরমপন্থী সন্ত্রাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের পুনর্বাসন করেছে। “যারা চাঁদাবাজি করে; তারা দেশের ক্ষতি করে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজদের সবাই বর্জন করবেন, তাতে করে পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকবে এবং অপার সৌন্দর্যময় এ এলাকা বিশ্ব পর্যটকদের এক আকর্ষণীয় স্থান হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে মন্ত্রী বলেন, “দেশের জনগণের সহযোগিতায় বর্তমানে দেশ অনেকটা জঙ্গিবাদ মুক্ত। সবার সহযোগিতায় মাদকমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার সক্ষম হবে। চরমপন্থিরা আত্মসমর্পণ করেছে এবং তারা এখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী কেউ যদি আত্মসমর্পণ করতে চান তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সরকার সহযোগিতা করবে।”
রামগড়-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণকাজ ও নির্মানাধীন স্থলবন্দরের কাজ সম্পন্ন হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। সেসময় রামগড় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রামগড়কে জেলায় রুপান্তরের দাবী যৌক্তিক। ১৭৯৫ সালে যখন অনেক দেশের নামও ছিল না, সেসময় রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে বর্তমান বিজিবির জন্ম এই রামগড়ে বলে স্মৃতিচারণ করে এসময় তিনি রামগড়বাসীর প্রতি সরকারের সবসময় বিশেষ নজর থাকবে বলে জানান। এছাড়া তিনি বলেন, “আপনারা রামগড়কে জেলা বাস্তবায়নের দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসেন, আমি রামগড়কে জেলা ঘোষনা করতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ করবো।”
সমাবেশ পরবর্তী উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসময় মন্ত্রী বলেন, সারা দেশের মতো খাগড়াছড়িতেও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানো হবে। যত বড় ব্যক্তি হোক, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি করে কেউ পার পাবে না। প্রয়োজনে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজাতীয় শরণার্থী ট্রাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব ত্রিপুরা, পৌর মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী নুরুল আলম, রামগড় পুলিশিং কমিটির সভাপতি মংপ্রু চৌধুরী। এ সময় পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য জেলা রাঙামাটির উদ্দেশ্য হেলিকপ্টার যোগে রামগড় ত্যাগ করেন। আগামী ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার তিনি রাঙামাটি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে হেডম্যান-কার্বারী সম্মেলন ও স্থানীয় রাজনৈতিক এবং সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলত হবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির তৎকালীন মহকুমা শহর রামগড় হানাদার মুক্ত দিবসে রামগড় থানা ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেসময় থানা ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন শেষে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে, পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চলমান চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে র্যাবের একটি ইউনিট গঠন করা হবে। পাহাড়ের অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে সেসময় তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের শান্তি প্রচেষ্টার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছে। যেকোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, যখনই প্রয়োজন হবে তখনই পার্বত্য চট্টগ্রামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) আসবে।