কাউখালীতে প্রেমের সম্পর্ককে ঘিরে উত্তেজনা: ষড়যন্ত্রের গন্ধ, প্রশ্ন উঠছে অভিযোগের উদ্দেশ্য নিয়ে
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ঢুলু পাড়ায় এক মারমা তরুণী ও বাঙালি যুবক মো. ফাহিমের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক এখন স্থানীয় রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সূত্রপাত হয় ফাহিমদের ভাড়াবাড়িতে অবস্থানের সময় থেকেই। তবে এই সম্পর্ককে সহজভাবে নিতে পারেননি এলাকার কিছু রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে ফাহিমের বাবা, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ার পর থেকে, প্রতিপক্ষরা এই সম্পর্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
ঘটনার সূত্রপাত ১৭ এপ্রিল রাতে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ফাহিম ও তরুণীকে আটকের চেষ্টা চালায়। ফাহিম তখন তার বন্ধু রিমন চাকমার সহায়তায় পালিয়ে যান। পরবর্তীতে মারমা তরুণীকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করানো হয়। অথচ মামলার তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে বলা হচ্ছে ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে, আবার ১৬ এপ্রিল – অথচ এতদিন অভিযোগ না এনে হঠাৎ করে এমন অভিযোগ অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হক সাব বলেন, “এটা ছিল পরস্পরের সম্মতিতে গড়ে ওঠা সম্পর্ক। এখন এটাকে ধর্ষণ বলে চালানো হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়।” তিনি অভিযোগ করেন, “বাঙালি যুবকদের ‘ধর্ষক’ হিসেবে উপস্থাপন করে গোটা পার্বত্য অঞ্চলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফাহিমকে ‘সেটেলার বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করে শুধু তার দিকেই অভিযোগের তীর ছোঁড়া হয়েছে, অথচ ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা রিমন চাকমার নাম অনেক জায়গায় গায়েব। স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে, কিছু সংবাদকর্মী অর্থের বিনিময়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন ছড়াচ্ছেন।
গত ১৯ এপ্রিল কাউখালী সদরে ইউপিডিএফের মিছিলে ধর্ষণের অভিযোগ ছাপিয়ে “সেনা হটাও” স্লোগানের ব্যবহার ঘটনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে আরও স্পষ্ট করেছে। ২০ এপ্রিল ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে এবং আজ ২১ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের ঘটনা পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্কের উপর চাপ তৈরি করছে। একজন বাঙালি তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক হলেই তা “ধর্ষণ” হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, অথচ পাহাড়িদের অভ্যন্তরীণ অনেক অনিয়ম বা অপরাধ নিয়ে নীরবতা পালন করা হচ্ছে।
একজন স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “২৩ বছর বয়সী একজন তরুণী যদি প্রেমের সম্পর্ক ও শারীরিক সম্পর্কে স্বেচ্ছায় জড়ায়, তবে সেটি কীভাবে জোরপূর্বক ধর্ষণ হয়? ধর্ষণের সংজ্ঞা কি কেবল বাঙালিদের জন্যই প্রযোজ্য?”
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের সক্রিয় ভূমিকা এবং কিছু স্থানীয় নেতার নিরবতা কিংবা সহযোগিতামূলক ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদি প্রমাণিত হয় যে এসব ষড়যন্ত্রে কেউ জড়িত, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
এই ঘটনায় আবারও প্রমাণ হলো, প্রেম-ভালোবাসা যখন রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তা শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ককেই নয়, গোটা সমাজকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এখন দরকার পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি সম্মিলিত মনোভাব।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।