মিজোরামে ১০ কোটি টাকার মাদকসহ দুই জেএসএস সদস্য আটক

মিজোরামে ১০ কোটি টাকার মাদকসহ দুই জেএসএস সদস্য আটক

মিজোরামেচাকমাদের ‘নারকো-টেররিস্ট’ অপবাদ থেকে মুক্ত করতে ভারতের চাকমা রাজনীতিবিদদের কাছে খোলা চিঠি ১০ কোটি টাকার মাদকসহ জেএসএস দুই সদস্য আটক
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য মিজোরামে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর মাদকপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই সদস্যকে আটক করেছে আসাম রাইফেলস। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ মেথামফেটামিন ট্যাবলেট।

উদ্ধার ও আটকের ঘটনাটি ঘটেছে মিজোরামের লুংলেই জেলার পুকপুই এলাকায়।

আসাম রাইফেলসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মেথ ট্যাবলেট, যা মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন—সপনা চাকমা ও পুন্যসূর চাকমা। তদন্তে জানা গেছে, তারা উভয়েই জেএসএস (সন্তু গ্রুপ)-এর সক্রিয় সদস্য এবং সংগঠনের শীর্ষ নেতা বিধায়ক চাকমার সরাসরি ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সূত্রমতে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মিজোরাম হয়ে মাদক পাচার করে আসছিল এবং সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি বড় উৎস হিসেবেই এই মাদক চোরাচালানকে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বহু বছর ধরেই মাদক পাচার, অবৈধ অস্ত্র বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে সংগঠনের তহবিল গড়ে তুলছে। এবার মিজোরামে বড় পরিসরে জেএসএস সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ আরও একবার সেই আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করল।

আটককৃতদের এবং জব্দকৃত মাদকদ্রব্যকে মিজোরামের লুংলেই এক্সাইজ ও নারকোটিকস বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং তদন্তে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, একই দিনে মিজোরামের চামফাই জেলার ত্লাংসাম এলাকায় আরেকটি সফল অভিযানে ৬৩ কেস অবৈধ ওআরআইএস ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে আসাম রাইফেলস। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮১ লক্ষ টাকা। এ সিগারেটগুলোও চোরাপথে মিজোরামে প্রবেশ করেছিল এবং জেএসএস সংশ্লিষ্ট চক্রের মাধ্যমে বিতরণ হওয়ার কথা ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চামফাই থানায় হস্তান্তর করে তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শান্তিচুক্তির আড়ালে জেএসএস যে পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাস, মাদক ও চোরাচালানের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, এই দুটি ঘটনা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। তারা বলছেন, সময় এসেছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণের। বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে দেশজুড়ে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তা রোধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

এই ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো—জেএসএস এখন আর কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং একটি সশস্ত্র ও অপরাধচক্রে পরিণত হয়েছে, যারা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মাদক সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে দেশ ও সমাজকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।