কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ছে এইডস!
![]()
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশেও। আর এতে করে রোহিঙ্গা শিবিরের আশেপাশের স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার সূত্র মতে, কক্সবাজারে বর্তমানে এইডস রোগীর সংখ্যা ৫৩৮ জন। এর মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা। এক বছর আগেও এই রোগীর সংখ্যা ছিল ৪১১ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হলে এইডস রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ৩ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণী কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে যাচ্ছেন। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছে। ফলে গোটা কক্সবাজারেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ও এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টারের প্রধান ব্যক্তি ডা. শাহীন আবদুর রহমান বলেন, ২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা স্রোত শুরু হওয়ার পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আক্রান্ত ৫৩৮ জনের মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ, ২৫৫ জন নারী ও ৬৩ জন শিশু রয়েছে। গত বছরও এই সংখ্যা ছিল ৪১২ জন। ২০১৭ সালে ছিল ১৩২ জন। এ রোগে ২৯ রোহিঙ্গাসহ ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এইডস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, “২০১৫ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালু করা হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল এইডস বা এসটিডি কর্মসূচি নামে একটি প্রকল্প চালু আছে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জন্য ‘প্রিভেনশন মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন (পিএমসিটি)’ নামে একটি প্রোগ্রাম চালু হয়। এ প্রোগ্রামে এইচআইভি পজিটিভ নারীর গর্ভের সন্তানটি যাতে সুস্থ থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ।” অন্য একটি সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছে, তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারে থাকা অবস্থায়ই এই রোগে আক্রান্ত হন।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সচেতনতার বিকল্প নেই। কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মতিন বলেছেন, রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে এই রোগের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলার অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেসময় সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এর পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।