এনসিপি'র সভা ঘিরে গোপালগঞ্জ টানা সংঘর্ষ, রাত ৮টা থেকে কারফিউ

এনসিপি’র সভা ঘিরে গোপালগঞ্জ টানা সংঘর্ষ, রাত ৮টা থেকে কারফিউ

এনসিপি'র সভা ঘিরে গোপালগঞ্জ টানা সংঘর্ষ, রাত ৮টা থেকে কারফিউ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বুধবার ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি শেষে ফেরার সময় হামলার মুখে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এনসিপি’র শীর্ষ নেতারা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় তারা গোপালগঞ্জ ছাড়েন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলাকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় এবং শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

গোপালগঞ্জে রাত ৮টা থেকে কারফিউ

গোপালগঞ্জে এনসিপির সভা ঘিরে কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করেছে সরকার।

রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না, আইজিপির দাবি

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ধৈর্য ধরে তারা গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন।

মি. আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”উচ্ছৃঙ্খলতা যা হয়েছে, সেটা যতটুকু সম্ভব আমরা ধৈর্যের সাথে প্রশমন করার চেষ্টা করছি, আমরা এখন রিইনফোর্সড (আরো পুলিশ সদস্য পাঠানো) করছি, পুরো জিনিসটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। আমরা লিথ্যাল (প্রাণঘাতী অস্ত্র) কোনো কিছু ব্যবহার করছি না, তাই আমাদের একটু সময় লাগছে।”

এনসিপির সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকে গোপালগঞ্জে উত্তেজনা চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে যদিও সেনা-পুলিশ পাহারায় এনসিপির নেতাকর্মীদের গোপালগঞ্জ শহর থেকে বের করে আনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি

এনসিপি’র কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে।

গোপালগঞ্জে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বুধবার বিকেলে অন্তর্বতী সরকারের তরফ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়।

বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে বাধা দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিষ্ঠুর আক্রমণের মাধ্যমে ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্ঠি, পুলিশ ও গণমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

”নিষিদ্ধ ঘোষিত ছঅত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ অ্যাকটিভিস্টদের এই জঘন্য কর্মকাণ্ড বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না। দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে এবং বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ওপর এরকম সহিংসতা করার জায়গা নেই,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের প্রশংসা করা হয়েছে বিবৃতিতে। এছাড়া হুমকির পরও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ায় কর্মসূচির আয়োজকদের প্রশংসা করা হয়।

সেনা-পুলিশ পাহারায় নাহিদ, আখতারসহ এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ ছেড়েছেন

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ ছেড়ে গেছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় তারা গোপালগঞ্জ ছাড়েন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহিন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা বিকাল ৫টা পরে গোপালগঞ্জ ছেড়ে বের হয়ে যান।

কড়াপাহাড়ায় তাদের ১৫ থেকে ১৬টি গাড়ির বহর গোপালগঞ্জ ছাড়েন। এই বহরে এনসিপি নেতাদের মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ শীর্ষ নেতারা রয়েছেন।

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় পুলিশের সমালোচনা সারজিসের

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনার পর একটি ভবনে ‘অবরুদ্ধ’ থাকা অবস্থায় দলটির নেতা সারজিস আলম সেখানে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।

সেখানে অবস্থানের সময় এক ফেসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেছেন, “গোপালগঞ্জে খুনি হাসিনার দালালেরা আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে”।

আজ বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়। পরে দলের শীর্ষ নেতারা একটি ভবনে নিরাপদ অবস্থানে চলে যান বলে জানান দলের অন্য নেতারা।

এদিকে সারজিস তার ফেসবুক পোস্টে মানুষকে গোপালগঞ্জে আসার আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন “সারা বাংলাদেশের মানুষ গোপালগঞ্জের ছুটে আসুন”।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় ব্লকেড পালনের ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, সারা দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামলাতে ১৪৪ ধারা জারি

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামলাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

১৪৪ ধারা জারি করার মানে হলো, সেখানে কোনো সভাসমাবেশ বা জমায়েত আইন বিরুদ্ধ বলে গণ্য হবে।

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালাচ্ছে: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে।

এনসিপি’র ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার পর দলের নেতারা ‘একটি ভবনে’ নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন মি. আখতার।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশে স্থানীয় একটি ভবনে অবস্থান নিয়েছে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। মাঠে আমাদের কর্মীরা প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে”।

“আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালাচ্ছে, তারা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্লিপ্ত অবস্থায় দেখেছি। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। কিন্তু মসজিদের মাইকগুলোতে ঘোষণা দিয়ে সন্ত্রাসীদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।”

“আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধের মানসিকতা নিয়ে আছে। প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই আমরা এখান থেকে অন্যত্র রওনা দেবো,” বলেন তিনি।

এনসিপি নেতাদের কেউ আহত হয়েছেন কি না জানতে চাইল মি. আখতার বলেন, এই হামলায় শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দের কেউ এখনো আহত হয়নি।

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ প্রকাশ

গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ”ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতিকারীরা আবারো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। আজ গোপালগঞ্জে এসসিপি’র পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার বর্বর ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আওয়ামী দোসররা মরণকামড় দিয়ে ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতিকারীতের কঠোর হস্তে দমন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই,” তিনি বলেছেন ওই বিবৃতিতে।

হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন।

অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।

ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।