সীমান্ত হত্যা ও পুশ-ইন নিয়ে বিজিবির উদ্বেগ, বিএসএফের আশ্বাস
![]()
নিউজ ডেস্ক
ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী অবস্থান করলে সে ব্যাপারে উভয় প্রতিনিধিদল ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হন।
তাছাড়া, সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরী, আইপিএস। বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক সম্মেলনের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তাঁরা সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪ দিনব্যাপী ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন ২৫ আগস্ট শুরু হয়ে আজ ২৮ আগস্ট ঢাকায় শেষ হয়। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণও প্রতিনিধিত্ব করেন।
অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরী, আইপিএস এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ছাড়াও ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাগণও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আলোচনার সারসংক্ষেপ পয়েন্ট আকারে সংবাদ মাধ্যমে পাঠিয়েছে বিজিবি। নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-
ক. বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের বেলায় টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পূনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা প্রদান এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
খ. বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ কর্তৃক অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, ভারতীয় নাগরিক ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক (এফডিএমএন) বাংলাদেশে পুশইনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান। বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে পারস্পরিকভাবে সম্মত প্রক্রিয়া অনুযায়ী ফেরত পাঠানোর আশ্বাস দেন।
গ. সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য, স্বর্ণ, জাল মুদ্রা নোট (এফআইসিএন) এবং অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)’র গুরুত্ব তুলে ধরে উভয় পক্ষ পাচার ও পাচারকারীদের রিয়েল-টাইম তথ্য শেয়ার এবং অধিক সতর্কতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক ও দৃঢ় থাকার বিষয়ে একমত হয়।
ঘ. উভয় পক্ষ সীমান্তবর্তী জনগণকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত স্তম্ভ উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়। সার্বিকভাবে উভয় পক্ষ সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
ঙ. উভয় পক্ষ সীমান্ত শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়। এছাড়া যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সহজতর করা এবং সীমান্তবর্তী অভিন্ন নদীগুলোতে অননুমোদিত কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়।
চ. ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিনবিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রামকে সংযুক্ত করার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
ছ. উভয় প্রতিনিধিদল আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী অবস্থান করলে সে ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হন।
জ. বিজিবি মহাপরিচালক ফেনীর মুহুরীর চর এলাকায় স্থায়ী সীমান্ত পিলার নির্মাণ এবং ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ও হারিয়াভাঙ্গা নদী এলাকায় সীমান্ত রেখা নির্ধারণের কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে জোর তাগিদ দেন। বিএসএফ মহাপরিচালক এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।
ঝ. উভয় পক্ষ কোনো ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে একমত হয়। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে সেজন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট সম্পর্কে রিয়েল-টাইম তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে পরস্পরকে অবহিত করার বিষয়ে সম্মতি জানায়।
ঞ. উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে পরস্পর বিরোধী বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার বা গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে উভয় দেশের গণমাধ্যমকে পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে একমত হয়।বাংলাদেশ পর্যটন প্যাকেজ
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।