চাঁদাবাজির অর্থে পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-মিজোরামে কোটি টাকার জমি জেএসএস-ইউপিডিএফের শীর্ষ ৯ নেতার
![]()
নিউজ ডেস্ক
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) শীর্ষ ৯ নেতার বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মিজোরামে বিপুল পরিমাণ জমি কেনার তথ্য ফাঁস হয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়েই এসব জমি কেনা হয়েছে বলে গোপন নথিতে উঠে এসেছে।
ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব নেতা ভারতীয় ভুয়া নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে জমি ক্রয় করেছেন। জমি কেনার সময় প্রত্যেকে নতুন ভারতীয় নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, যা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে গোপন নথিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি কিনেছেন জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের নেতা বিশাল চাকমা। তিনি একাই ত্রিপুরায় ১১ কানি জমির মালিক হয়েছেন।

জমি কেনা নেতাদের তালিকা ও ভারতীয় পরিচয়
গোপন নথিতে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়—
-
সন্তু লারমা (জেএসএস নেতা) ভারতীয় নাম ‘প্রভাত চন্দ্র সরকার’ পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সুভাষ পল্লীতে ১ কানি জমি কিনেছেন।
-
ঊষাতন তালুকদার (জেএসএস নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য) ভারতীয় নাম ‘ভবেস দেব বর্মা’ পরিচয়ে ত্রিপুরার আগরতলার নন্দনগরে ২ কানি জমি কিনেছেন।
-
শক্তিপদ ত্রিপুরা (জেএসএস নেতা) ভারতীয় নাম ‘অভীক ত্রিপুরা’ পরিচয়ে ত্রিপুরার ভাটি অভয়নগরে ২ কানি জমি কিনেছেন।
-
জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা (জেএসএস নেতা) ভারতীয় নাম ‘সুদীপ সরকার’ পরিচয়ে আগরতলার নন্দনগরে ১ কানি জমি কিনেছেন।
-
সঞ্জীব চাকমা (জেএসএস নেতা) ভারতীয় নাম ‘অনিময় চাকমা’ পরিচয়ে মিজোরামের আইজল শহরে ২ কানি জমি কিনেছেন।
-
বিশাল চাকমা (জেএসএস নেতা) ভারতীয় নাম ‘সুমতি রঞ্জন চাকমা’ পরিচয়ে ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে ১০ কানি রাবার বাগান কিনেছেন এবং ‘বিনয় চাকমা’ নাম ব্যবহার করে আরও ১ কানি জমি, মোট ১১ কানি জমি ক্রয় করেছেন।
-
অংশুমান চাকমা (জেএসএস সংস্কারপন্থী নেতা) ভারতীয় নাম ‘চারু বিকাশ দেওয়ান’ পরিচয়ে ত্রিপুরার মনু ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় ২ কানি জমি কিনেছেন।
-
বিমল কান্তি চাকমা (ইউপিডিএফ প্রসীতপন্থী নেতা) ভারতীয় নাম ‘রতন চৌধুরী’ পরিচয়ে ত্রিপুরার কৃষ্ণনগরে ১ কানি জমি কিনেছেন।
-
জুপিটার চাকমা (জেএসএস সংস্কারপন্থী নেতা) ভারতীয় নাম ‘সত্য জীবন চাকমা’ পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ৩ কানি জমি কিনেছেন।
আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তাঁর ফেসবুক পেজে এসব গোপন নথি প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন— “পাশ্ববর্তী দেশে নিজ আবাস নিশ্চিত করে এবং তাঁদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রেখে, যারা যুগ-যুগ ধরে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন, তাঁরা আসলে কাদের স্বার্থে কাজ করছেন?”
ফাঁস হওয়া নথি থেকে স্পষ্ট হয় যে, পাহাড়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে পাচার করে পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলছেন। সীমান্তবর্তী ভারতের তিন রাজ্যে তাদের গোপন সম্পদ সাম্রাজ্য প্রমাণ করে, দেশের ভেতরে সহিংসতা উসকে দেওয়ার পাশাপাশি তারা বিদেশেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করছে।
এ ঘটনায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের বিদেশে অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় বসতে হবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।