দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার: মনগড়া রিপোর্টে ক্ষোভ ও উদ্বেগ
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে neighboring দেশের কিছু গণমাধ্যম—এমন অভিযোগ উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছ থেকে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একই ফ্রেমে দাঁড় করিয়ে ভারতের কয়েকটি মিডিয়া যে বর্ণনা হাজির করছে, তা শুধু ভিত্তিহীনই নয়, বরং প্রতিবেশী দুই দেশের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
ভারতীয় সরকারের হাতে এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরণের তদন্তে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতার কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য নেই। কিন্তু এ অবস্থাতেও ভারতের কয়েকটি প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশের সরকারী দুই কর্মকর্তাকে ‘সমন্বিত নেটওয়ার্কে’ যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলে খবর প্রকাশ করছে। অভিযোগ করা সেই দুই কর্মকর্তার নাম, পদবী কিংবা তাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর—কোনো কিছুই এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি, যা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, দিল্লি বিস্ফোরণ ঘটনাটিকে ভারত নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে তুলে ধরতে চাইছে। পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাম জুড়ে দিয়ে তাদের লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবিরোধী কৌশলে একটি নতুন তাত্ত্বিক কাঠামো দাঁড় করানো। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, গ্রহণযোগ্য তদন্তসূত্র ছাড়াই এ ধরনের প্রচার প্রতিবেশী দেশের প্রতি দায়িত্বহীন আচরণের শামিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কোলকাতা২৪/৭–এ প্রকাশিত ‘দিল্লি বিস্ফোরণে আরও স্পষ্ট বাংলাদেশ-পাকিস্তান যোগ’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিস্ফোরণের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই আন্তর্জাতিক যোগসূত্র “স্পষ্ট” হয়ে উঠছে। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইবার (LeT) এক শীর্ষ হ্যান্ডলার সৈফুল্লাহ সাইফ নাকি বিস্ফোরণের আগে ঢাকার বনানীতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। আরও দাবি করা হয়, ওই বৈঠকে ছিলেন মোট সাতজন অংশগ্রহণকারী, যাদের মধ্যে হিজবুত তাহরির ও আনসার আল ইসলামের নেতৃত্বের কয়েকজন এবং বাংলাদেশ সরকারের দুই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন—যাদের পরিচয় তদন্তকারীরা নাকি গোপন রেখেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অপারেশন পরিচালনায় ‘ইক্তিয়ার’ নামের এক বাংলাদেশি নাগরিক দিল্লি বিস্ফোরণে জড়িতদের নিরাপদ আশ্রয় ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি। সীমান্তবর্তী এলাকায় তার মোবাইল ফোনের লোকেশনের কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে হামলাকে “ট্রায়াল রান” হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করা হয়, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতের একাধিক বড় শহর ও সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল।
নিরাপত্তা মহলের বরাত দিয়ে কোলকাতা২৪/৭ জানায়, ভারতীয় সংস্থাগুলো এখন ঢাকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই সাতজনের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে এ যোগাযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনার জন্ম দেবে বলে দাবি তাদের।
তবে এসব দাবির কোনোটিই বাংলাদেশ সরকার বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো তদন্ত সংস্থা এখনো নিশ্চিত করেনি। বরং, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিসংবেদনশীল একটি ঘটনার তদন্তকে রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক কৌশলের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, দিল্লি বিস্ফোরণকে ঘিরে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে জড়িয়ে প্রকাশিত খবরগুলো এখনো পর্যন্ত একতরফা, অসমর্থিত এবং তথ্য-অসম্পূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে; যা দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।