ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন শুরু

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন শুরু

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন শুরু
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার উস্কানি, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও, দুই দেশের কূটনীতিককে তলব-পাল্টা তলবের ঘটনায় ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লিকে আবারো খুব স্পষ্ট করে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে,  শেখ হাসিনা ভারতে বসে কোনো প্রকার উস্কানি যেন না দেন, যার ফলে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে তাদের মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা    হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে উদ্বেগ:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে উস্কানি দিচ্ছেন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে বসে বাংলাদেশের ভেতর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে দেশটিকে জানানো হয়। আর তার এসব কর্মকাণ্ড দেশের নির্বাচনী পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছে ঢাকা। সে কারণে বাংলাদেশ এসব নিয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে থামাতে না চায়, তাহলে আমরা সেটা থামাতে পারবো না। আমরা চাই, শেখ হাসিনাকে ভারত থামাক। যাতে তার উসকানিমূলক বক্তব্য আমাদের নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত করতে না পারে। তারা এটা করলে সেটাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা গ্রহণ করবো।

কূটনীতিককে তলব-পাল্টা তলব:
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গত ১৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তলবের পর ভারতে বসে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানায় ঢাকা। তবে সেইদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের আনা অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়। এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে কূটনীতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

দেড় ঘণ্টার নোটিশে বাংলাদেশের কূটনীতিককে জরুরি তলব:
১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। উদযাপন অনুষ্ঠানে  ভারতের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। তবে তারপর দিনই ছিলো বাংলাদেশে জুলাই ঐক্যসহ কয়েকটি সংগঠনের ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি। এই কর্মসূচির জন্য মাত্র দেড়ঘণ্টার নোটিশে ১৭ ডিসেম্বর দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে।

এদিকে জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলবের জন্য একদিন আগেই নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো।

ইস্যু ছিলো ওসমান হাদিরও:
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গত ১৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।  সে সময় শেখ হাসিনার উস্কানি ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যা চেষ্টায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণে ভারতের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। সে সময় হাইকমিশনারকে জানানো হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যার চেষ্টায় জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালানো রোধ করা এবং যদি তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করতে হবে।

ভারতের যেখানে উদ্বেগ:
বাংলাদেশে ‘চরমপন্থী’ কার্যকলাপের জন্য ভারতের কূটনৈতিক মিশনগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলবের পর ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকায় ভারতীয় মিশনের আশেপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে, সে বিষয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এনসিপি নেতার বক্তব্য সরকারের নয়:
জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপি নেতা হাসানাত আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সময়ে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। তার এই    বক্তব্য সরকারের নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন।

উপদেষ্টা বলেছেন, তার এই বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়। সরকারের বক্তব্য হলে তো আমি বলতাম। অন্য কোনো উপদেষ্টা বলতেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বলছেন:
ঢাকা-দিল্লির মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে সরকারের (বাংলাদেশ) শুরু থেকে আজ পর্যন্ত টানাপোড়েন আছে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল—এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে এসেছি—আমরা একটি গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। আমরা চাইলেই সেটা হবে, এমন কোনো কথা নেই।

দুই পক্ষ থেকেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরও বলেন, আমার  মনে হচ্ছে, আমরা দু’পক্ষ মিলেই হয়তো অতটা এগোতে পারিনি—টানাপোড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানিং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে, তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *