করোনা পরিস্থিতিতে রাঙ্গামাটির দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৮০ পরিবারের কাছে হেলিকপ্টারযোগে সরকারী ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে সেনাবাহিনী
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন দূর্গম এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনের অনুরোধক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে ৩৮০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে।
বর্তমানে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঘরে অবস্থানের নির্দেশনা জারি রয়েছে। সেই সাথে করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে গত ২৬ মার্চ অফিস-আদালত, কল- কারখানা এবং স্কুল- কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে বন্ধ আছে গণপরিবহন চলাচল। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং প্রান্তিক জনগণ যেন খাদ্যসংকটে না পড়ে সে উদ্দেশ্যে সরকার ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় দূর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গামাটি জেলাতেও সরকারের ত্রাণ সামগ্রী এসে পৌঁছায়। কিন্তু রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলা দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এবং সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি এ সমস্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রেক্ষিতে, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সেনা রিজিয়নের নিকট সহযোগিতা কামনা করে। এমতাবস্থায়, বরাবরের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
যার প্রেক্ষিতে আজ ৭ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের (চট্টগ্রাম সেনানিবাস) সার্বিক সহযোগিতা ও তত্বাবধানে ‘আর্মি এভিয়েশন’-এর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে ঐ সমস্ত এলাকায় ৪০০০ কেজি ওজনের বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, লবণ, আলু ও সাবান । এ সকল ত্রাণ সামগ্রী জুরাছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত দূর্গম পাহাড়ী এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৮০ টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়। এ সময় রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, রাঙ্গামাটি বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এ এস এম ফয়সাল, মেজর মোঃ মহিউদ্দিন ফারুকীসহ স্থানীয় হেডম্যান এবং কারবারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার জানান, “শান্তি, সম্প্রীতি এবং উন্নয়ন- এই মূল মন্ত্রকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্রগ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে সন্ত্রাস দমন অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় অসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখবে।”
এ ব্যাপারে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলা, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।”
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক জনাব এ কে এম মামুনুর রশিদ সেনাবাহিনীর এই দ্রুত সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে বলেন, “দূর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আমরা এ সমস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারছিলাম না। বিষয়টি রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়নকে অবহিতপূর্বক অনুরোধ করার পর তারা দ্রুততম সময়ে হেলিকপ্টারযোগে দূর্গম এসব এলাকাগুলোতে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, আমি এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
সরকারি ত্রাণ সামগ্রী হাতে পেয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসাধারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এ সময় পাড়ার হেডম্যান ও কারবারীরা বলেন, “মরণ ঘাতক করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমরাও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অন্যান্য সকল এলাকার মত ঘরে অবস্থান করছি। দেশব্যাপী গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারছিলাম না। এতে করে আমাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। পরিবার ও সন্তানদেরকে নিয়ে আমরা না খেয়ে মরার পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে ত্রাণ সরবরাহ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”