ভারতের ইতিহাসে অজিত দোভাল এর অবদান - Southeast Asia Journal

ভারতের ইতিহাসে অজিত দোভাল এর অবদান

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ ফকরুল ইসলাম, নাজমুল কবীর ও মোঃ রিফাতউল্লাহ

অজিত দোভাল বর্তমানে ভারত প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চম নিরাপত্তা উপদেষ্টা। অজিত দোভাল তার কর্মজীবন থেকে শুরু করে ভারতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাকে ভারতের ইতিহাসে জেমস বন্ড বলা হয়ে থাকে। তিনি তার চৌকস বুদ্ধিমত্তা কলা-কৌশল ও তীক্ষ্ণ মেধা খাটিয়ে একের পর এক অসাধ্যকে সাধন করেছেন। যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কষ্টসাধ্য ছিল এবং পুলিশের IB (Intelligence Branch) ব্যর্থ ছিল সেখানে এই অজিত দোভাল তীক্ষ্ণ মেধা খাটিয়ে চৌকস বুদ্ধিমত্তার ধারা ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় দুর্বিষহ ঘটনাগুলো সমাধান করেছেন। তিনি কর্মজীবনে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজের জীবন বিপন্ন করে শত্রুদের সামনে গিয়েছেন। আর বিভিন্ন ছদ্মবেশ যেমন রিক্সাওয়ালা কখনো ভিক্ষুক কখনোবা আইএস এর জঙ্গী হিসাবে পরিচয় দিয়ে জঙ্গিদের সাথে কাজ করেছেন। অজিত দোভাল ভারতে ১৯৭১ সালে হিন্দু-মুসলমানদের দাঙ্গা সমাধান করেছেন। মিজোরামকে তিনি ভারতের অভিন্ন অঙ্গে শামিল করেছেন। তিনি ১৯৮৮ সালে Oparation Black Thunder চালিয়ে জঙ্গিদের হাত থেকে অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির উদ্ধার করেছেন। ১৯৯৬ সালে কাশ্মীরের উগ্রবাদী সমস্যা সমাধান করেছেন। অজিত দোভাল দীর্ঘ সাত বছর পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তি করে নির্বিঘ্নে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় এয়ার লাইসেন্স IC-৮১৪ বিমান ১৪৪ জন যাত্রীসহ জঙ্গিদের হাত থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। ২০১৪ সালে ইরাকে অবস্থানরত ভারতের ৪৪ জন নার্সকে জঙ্গিদের হাত থেকে উদ্ধার করে ভারতে নিয়ে আসেন। সম্প্রতি ভারত ও চীনের মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনিই সমাধান করেন। ভারতের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির জন্য অজিত দোভাল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার অংশবিশেষ।

শিক্ষা জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনঃ অজিত দোভাল হাজার ২০ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পূর্ব গাড়োয়ালে এক গাড়োয়াল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মেজর গুনানন্দ দোভাল এবং তিনি পেশায় ভারতের একজন সেনা অফিসার ছিলেন। অজিত দোভাল রাজস্থানের এক মিলিটারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন। তিনি দিল্লিতে বিবাহ করেন ও তার স্ত্রীর নাম অনু দোভাল এবং তার দুই ছেলে একজন হলেন শৌর্য দোভাল এবং অপরজন হলেন বিবেক দোভাল।

কর্মজীবন ও স্বীকৃতিঃ ১৯৬৮ সালে অজিত দোভাল ভারতের আইপিএস অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি দূরদর্শী তীক্ষ্ণ মেধা খাটিয়ে কর্মজীবন এর প্রতিটি ধাপে ধাপে সফলতার সাথে এগিয়ে যান। ক্রমান্বয়ে তাকে Intelligence Buero তে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭১ সালে অজিত দোভালকে এএসপি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এএসপি পদে তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হন। ১৯৭২ সাল থেকে Intelligence Buero এ সুনামের সাথে তিনি বুদ্ধিমত্তা, চৌকস ও তীক্ষ্ণ দিমাগ খাটিয়ে দেশের জন্য সুদক্ষ গোয়েন্দা হিসেবে সেবা করেছেন। অজিত দোভাল৭ বছর পুলিশ অফিসার হিসেবে চাকরি করেছেন এবং ৮ বছরের মাথায় প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল গৌরব অর্জন করেন এবং ১৯৮৮ সালে তাকে কৃতি চক্র দেওয়া হয়। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তি করে নির্বিঘ্নে দেশে ফিরে আসেন। অজিত দোভাল এর অন্যতম কৃতি হচ্ছে তিনি ২০০৪-২০০৫ সাল পর্যন্ত IB-র ডাইরেক্টর পদে নিয়োজিত ছিলেন এবং ২০০৫ সালে তিনি অবসর নেন। ২০০৯ সালে অজিত দোভাল Vivekananda International Foundation গঠন করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থাকে সুরক্ষা পরামর্শ দিতেন। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার নরেন্দ্র মোদি তাকে ভারতের তৃতীয় জাতীয় সুরক্ষা পরামর্শদাতা (NSA) হিসাবে নিযুক্ত করেন। বর্তমানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চম নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

ভারতীয় ইতিহাসে অজিতের স্মরণীয় সাফল্য সমূহঃ

১। থালাসের হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে কোট্টায়াম জেলার থালাসেরে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়। থালাসের দাঙ্গা পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত হয়ে পরে যে সেখানে দোকানপাট লুটপাট, রেপ, মাডার এর মত জঘন্ন কাজ গুলি, দিনের আলোতে জনতার সামনে ঘটতে থাকে। পরিস্থিতি পুলিশ প্রশাসনের আওতার বাইরে চলে যায়। এই দুঃসময়ে অজিত দোভালকে থালাসের দাঙ্গা মোকাবিলার জন্য ভারতের সরকার মনোনীত করেন। উক্ত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য তিনি ঠিক করেন প্রথমে দাঙ্গায় লুট হওয়া মালামাল অনুসন্ধান করতঃ উদ্ধার করে জনতাকে তাদের লুট হওয়া মালামাল ফেরত দিতে হবে। সর্বপ্রথমে তিনি দাঙ্গাগ্রস্থ মানুষদের সাথে দেখা করে সাধারণ মানুষকে তিনি আশ্বাস দেন দুই দিনের মধ্যে তাদের লুট হওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এর জন্য শুধু তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন। তার আশ্বাসে স্থানীয় সাধারণ জনগণ তাকে দাঙ্গাকারীদের সনাক্ত করার জন্য সাহায্য করেন এবং তিনি একে একে দাঙ্গাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা শুরু করেন। গ্রেফতার হওয়া দাঙ্গাকারীদের কাছে থেকে লুট হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয় এবং কথামত লুট হওয়া মালামাল সাধানণ জনগণকে ফিরিয়ে দেন। পুরো দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে অজিত ডোভাল তার দূরদর্শী তীক্ষ্ণ দিমাগ ব্যবহার করে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করেন।

২। MNF (Mizoram National Front) এর জোরদার আন্দোলন। সত্তর দশকে MNF (Mizoram National Front) মিজোরামকে ভারত থেকে আলাদা করার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলছিল। এই আন্দোলন কে নেতৃত্ব দিচ্ছিল লাল ডেঙ্গা। মিজোরামে পরিস্থিতি তখন এতটাই বয়াবহ হয়েছিল যে নিয়মিত যেখানে সেখানে গোলাগুলি, খুন খারাপি হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সবমিলিয়ে মিজোরাম তখন লাল ডেঙ্গা-র আতঙ্কে কাঁপছিল। এহেন পরিস্থিতিতে মিজোরামে খুন হয়ে যায় একজন আইপিএস অফিসার। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য দিল্লী থেকে IB-র পুরো টিম মিজোরামে আসে। কিন্তু মিজোরামের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল তাই IB-র টিম দিল্লীতে ফিরে যায়। লাল ডেঙ্গার আতঙ্ক এতটাই প্রবল ছিল যে কেউ মুখ খুলতে রাজি ছিল না। এরকম উতপ্ত পরিস্থিতে নতুন করে IB-র কোনো অফিসার সেখানে যেতে চাইছিলনা। মিজোরামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে অজিত দোভাল নিজের ইচ্ছেই মিজোরামে যান। তিনি মিজোরামে গিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য MNF এর তদন্তে নেমে তিনি লাল ডেঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ৬ জন নেতার হদিস পেয়ে তাদের নাম ও পরিচয় জোগাড় করেন এবং তিনি লাল ডেঙ্গা অনুগামী ৬ নেতার সঙ্গে দেখা করেন। এই ৬ জন নেতাদের পিঠে হাত রেখে লাল ডেঙ্গা মিজোরামে অশান্তি ছড়াচ্ছিলেন। মিজোরামে এসেও তিনি তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি প্রয়োগ করেন। অজিত দোভাল লাল ডেঙ্গার সহগামী নেতাদের বোঝাতে শুরু করে মিজোরাম ভারতের অভিন্ন অঙ্গ। তাই মিজোরামকে ভারত থেকে আলাদা করা সম্ভব নয় বিধায় মিজোরামকে আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি কোনোদিন ভারত সরকার মেনে নেবে না। মিজোরামকে আলাদা করা ছাড়া অন্য সব দাবি ভারত সরকার মানতে রাজি আছে। এরপর অজিত দোভাল ভারত সরকারের সঙ্গে লাল ডেঙ্গা এবং বাকি ৬ জন নেতার এক শান্তি বৈঠকের আয়োজন করেন। সেই বৈঠকে লাল ডেঙ্গাকে বোঝানো হয় যে তার অনুগামী ৬ জন নেতা ভারত সরকারের শর্তে রাজি হয়েছে তাই তাকে সরকারের শর্ত মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। এইভাবে অজিত দোভাল মিজোরামকে ভারত থেকে আলাদা করার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ইতি টানে এবং মিজোরাম ভারতের অভিন্ন অঙ্গে সামিল করতে সফল হন। অজিত ডোভালের রণকৌশলে মিজোরামে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে লাল ডেঙ্গা নির্বাচিত হয়ে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী হন। এই ঘটনার পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয় অজিত দোভালকে। তাকে মাত্র ৮ বছর চাকুরীতে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল দেওয়া হয়। সাধারণ ভাবে ভারতে কোনো পুলিশ অফিসারকে তার কেরিয়ার এবং কর্মনিষ্ঠা বিশ্লেষণ করার পর ১৪-১৫ বছর সময় লেগে যায় প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল প্রাপ্তির জন্য।

৩। Oparation Black Thunder এর মাধ্যমে স্বর্ণ মন্দির ফিরিয়ে আনা। অজিত দোভাল জীবনী অধ্যয়নের, আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল (Opration Black Thunder 1988)। ১৯৮৮ সালে খালিস্থানি জঙ্গিরা অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির কব্জা করে ফেলে। তারা পাঞ্জাবকে ভারত থেকে আলাদা করে খালিস্তান গঠন করার দাবি জানিয়ে ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজীব গান্ধী। রাজীব গান্ধি খালিস্থান জঙ্গি দমনের জন্য আবার অজিত দোভালকে দায়িত্ব প্রদান করেন। অজিত দোভাল অমৃতসরে পৌঁছে সেখানে গিয়ে ঘটনার তদন্তে নামেন। সেখানে গিয়ে তিনি রিক্সাওয়ালার ছদ্মবেশ নেন এবং বেশ কয়েকদিন তিনি সেখানে রিক্সা চালান। সেখানকার পথঘাট চেনার চেষ্টা করতে থাকেন। এভাবে স্বর্ণ মন্দিরের এর ভিতরে আসা যাওয়া প্রতিটি লোকের উপর তিনি নজর রাখতে থাকেন। অজিত দোভাল স্থানীয়দের চোখে সন্দেহের তালিকায় এসে যায়। কারো বুঝতে অসুবিধা হয়না মাথায় ফেটা বাঁধা লুঙ্গি পড়া লোকটা স্থানীয় রিক্সাওয়ালা নয়। খালিস্থানি সমর্থকরা অজিত দোভালকে ধরে নিয়ে যায়। আসলে তিনি নিজেও চাইছিলেন কোন প্রকারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ হতে এবং সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে। কারণ এভাবে রিক্সা চালিয়ে বাইরে থেকে ভিতরের কোনো তথ্য তিনি আদায় করে উঠতে পারছিলেন না। অজিত দোভালকে খালিস্থানি জঙ্গি প্রধান পরিচয় জানতে চায়। পরিচয়ে অজিত দোভাল নিজেকে পাকিস্থানি আইএসআই এর এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দেয়। কিন্তু অজিত দোভাল এর এই কথা তারা কোনো মতেই বিশ্বাস করেনা। তারা তাকে ভারতের কোনো গুপ্তচর বলেই সন্দেহ করে। যাইহোক অজিত দোভাল অবশেষে খালিস্থানিদের বুঝিয়ে উঠতে সমর্থ হলেন যে তিনি পাকিস্তানি আইএসআই এজেন্ট এবং তিনি তাদেরকে সাহায্য করার জন্য জঙ্গি প্রধান তাকে পাঠিয়েছে। স্বাধীন খালিস্থানের সমর্থন পাকিস্তান তাদের সাহায্য করতে চায়। এইভাবে অজিত দোভাল তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে তাদের সমস্ত রণকৌশল হাতিয়ে নেয় এবং তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন। তারপর Opration Black Thunder এর পরিকল্পনা তৈরি করে NSG (National Security Guard) কমান্ডো দ্বারা স্বর্ণ মন্দিরে অপারেশন করেন এবং সফলতা অর্জন করেন। এইভাবে খালিস্থানি জঙ্গিদের কাছ থেকে স্বর্ণ মন্দিরকে উদ্ধার করা হয়। অজিত দোভাল কে এই ঘটনার জন্য কৃতি চক্র (Kriti Chakra) দেওয়া হয়।

৪। কাশ্মীরে উগ্রবাদী সমস্যার সমাধান। নব্বয়ের দশকে কাশ্মীর আতঙ্কবাদীদের কার্যকলাপে তপ্ত হয়ে উঠে। তারা কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করে স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল। ভারত সরকার কাশ্মীরের পরিস্থিতি খারাপ দেখে অজিত দোভালকে কাশ্মীরে প্রেরণ করেন এবং পরিস্থিতির গতিক বুঝে কাশ্মীরে পাঠানো হয়। তিনি কাশ্মীরে এসে পরিস্থিতির উষ্ণতার পারদ মাপা শুরু করেন এবং তার তদন্তে পাকিস্তানে আইএসআই এজেন্টের দ্বারা সক্রিয় ব্যাক্তি কুকাপাড়ে এর নাম সামনে আসে। কুকাপাড়ে নামের ওই ব্যাক্তি তার ২৫০ জন লোক লস্কর নিয়ে সমগ্র কাশ্মীরে ভারত বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। অজিত দোভাল জীবনের পরোয়া না করে আতঙ্কবাদী শিবিরে গিয়ে কুকাপাড়ের সাথে দেখা করে এবং কুকাপাড়েকে তিনি বুঝাতে সক্ষম হন। ফলে কাশ্মীরে ১৯৯৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন করা সম্ভব হয়। কুকাপাড়ে নিজেও একটি পার্টি গঠন করেন এবং তিনি কাশ্মীরের এমএলএ হিসাবে নির্বাচিত হন। এইভাবে অজিত দোভাল নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরে উগ্রবাদী সমস্যার সমাধান করেন।

৫। কান্দাহার বিমান অপহরণ। ১৯৯৯ সালে নেপালের কাঠমান্ডু থেকে দিল্লী আসার পথে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের IC-৮১৪ বিমান তালিবানি জঙ্গিরা অপহরণ করে নেয়। বিমানটিতে মোট ১৪৪ জন ভারতীয় যাত্রী ছিল। জঙ্গিরা বিমানটিকে প্রথমে পাঞ্জাব তারপরে লাহোর অতঃপর দুবাই নিয়ে যায় এবং অবশেষে আফগানস্থানের কান্দাহারে বিমানটিকে অবতরণ করেন। জঙ্গিদের দাবি ছিল ১৪৪ জন যাত্রীদের বদলে ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দি থাকা ১০০ জন তালিবানি জঙ্গী কে মুক্তি দিতে হবে। ভারত সরকার তখন প্রতিবারের ন্যায় অজিত দোভালসহ আরো দুই জনকে মধ্যস্থতা করার জন্য কান্দাহারে পাঠায়। অজিত দোভাল অজিত দোভাল আতঙ্কবাদীদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন। ১০০ জন জঙ্গির বদলে শুধুমাত্র ৩ জন জঙ্গিকে (মৌলানা মাসুদ আজাহার, আহমেদ ওমর সাঈদ শেখ এবং মুস্তাক আহমেদ) মুক্তি দিয়ে ১৪৩ জন ভারতীয় যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।

৬। ভারতীয় ৪৪ জন নার্সকে ISIS জঙ্গীর হাত থেকে উদ্ধার। ২০১৪ সালে ইরাকের Tirki আইএসএস জঙ্গিরা কব্জা করে নেয়। ঐ Tirkit এ ভারতের সাউথ ইন্ডিয়ার ৪৪ জন নার্স এক হাসপাতালে কাজ করতেন বিধায় ভারতীয় নার্সরাও জঙ্গিদের হাথে বন্দি হয়ে যায়। এমন ঘটনায় ভারতে নার্সদের আত্মীয় স্বজনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং ভারত সরকারে কাছে নার্সদের পরিবার চাপ সৃষ্টি করে। এহেন পরিস্থিতিতে অজিত দোভাল জঙ্গিদের সাথে কথা বলেন। এছাড়াও তিনি আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে উক্ত বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এরপর তিনি জঙ্গিদের কমান্ডার এর সাথে যোগাযোগ করে এবং ৪৪ জন ভারতীয় নার্সকে বিনা শর্তে ছেড়ে দিতে আহবান করেন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, যদি ৪৪ জন ভারতীয় নার্সকে বিনা শর্তে ছেড়ে দেওয়া না হয় তাহলে এর পরিনাম ভাল হবেনা এবং ভবিষ্যতে ভারত তাদের জন্য সবথেকে বড় শত্রু হয়ে সামনে আসবে। জঙ্গিরা চিন্তা করে তাদের সামনে যে মিশন আছে, তাতে ভারত প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তাই জঙ্গিরা বিনা শর্তে ৪৪ জন ভারতীয় নার্সকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

৭। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের সমস্যা সমাধান। ২০১৭ সালে যখন BRICS সভা চলাকালীন ডোকলামে ভারত ও চীনের সৈন্যরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। এই ডোকলাম বিবাদ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে যে সমস্যা চলচিল। তখন ভারত সরকার নরেন্দ্র মোদী চীনের সাথে ডোকলাম বিবাদে দোভালকে তার প্রধান আলোচক হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। এই ডোকলাম সমস্যার সমাধান করতে অজিত দোভাল চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে দু’ঘন্টার ভিডিও কনফারেন্সের পরে চীনকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি করিয়েছিলেন এবং বিষয়টি সামাধান করেছিলেন।

অজিত দোভাল এই চৌকস বুদ্ধিমত্তা, কলাকৌশল ও তীক্ষ্ণ মেধা ব্যবহার করে ভারতের ইতিহাসে একের পর এক অসাধ্য কাজ সাধন করেছেন। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে ভারতের গোয়েন্দা এজেন্ট হয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। পাকিস্তানে থাকাকালীন তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। এইজন্য অজিত দোভালকে ভারতের জেমস বন্ড বলা হয়। তার এই সাফল্য সমূহ ভারত তথা বিশ্বের সকল দেশের গোয়েন্দা এজেন্টদের উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করে। দেশের জন্য যে তার জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিতে কখনো পিছপা হয়নি। স্বদেশের জন্য এমন অবদান রাখা অজিত দোভালের কৃতকর্ম এক অনুকরণীয় দৃষ্ঠান্ত হিসাবে ইতিহাসে লিখা থাকবে।