বান্দরবানে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে উপজাতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে এমএনপি সদস্য নিহত
 
                 
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামায় শ্বশুর বাড়িতে জামাইকে গুলি করে হত্যা করেছে উপজাতি আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাত ১টায় রূপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লা পাড়ায় আথুইমং মার্মার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মংক্যচিং মার্মা (৩৫) রাঙামাটির রাজস্থলীর বাঙ্গালখালী এলাকার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

নিহত মংক্যচিং মার্মার শ্যালক অংসিং মার্মা বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় বেড়াতে আসে আমার বড় বোনের স্বামী মংক্যচিং মার্মা। রাত সাড়ে ১২টায় ৬ জন অস্ত্রধারী উপজাতি সন্ত্রাসী আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা ঘরের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বোন জামাইকে গুলি করে। সন্ত্রাসীরা তিন রাউন্ড গুলি করে ও কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। সন্ত্রাসীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও রশি ছিল। ঘটনার পর থেকে আমার বোন ম্রাবোচিং মার্মা পাগলের মতো হয়ে গেছে।
অংহ্লা পাড়ার বাসিন্দা ও লামা উপজেলা জেএসএস’র সভাপতি অংগ্য মার্মা বলেন, রাত ২টায় আমি ঘটনাটি জানতে পারি। খামার বাড়িটি আমাদের পাড়া থেকে ৫০০ গজ পূর্বে। আঞ্চলিক রাজনীতির দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে মংক্যচিং খুন হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সীতারঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান ও লামা থানাকে অবহিত করি। কি কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে আমরা জানি না।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, নিহত মংক্যচিং মারমা মগ লিবারেশন পার্টির (এমএনপি) ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ ছিলেন। আজ (৪ জানুয়ারি) তার আলীকদম নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই তাকে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের অধুনালুপ্ত আরাকান লিবারেশন পার্টির দলছুট সদস্যদের নিয়ে ২০১৯ গঠিত মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির সঙ্গে। মগ লিবারেশন পার্টিকে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে দ্বন্দ্ব, পরে এই দ্বন্দ্ব আওয়ামী লীগের সাথেও জড়ায়। গত পাঁচ বছরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ২৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মী সমর্থক নিহত হয়েছে বান্দরবানে। মগ লিবারেশন পার্টির বেশ কিছু নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার পর মংক্যচিং মারমা গত বছর মগ লিবারেশন পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব নেন।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন থেকেই জনসংহতি সমিতি এই নেতার ওপর নজরদারি করছিল। সর্বশেষ মংক্যচিং রূপসীপাড়ার অংহ্লা পাড়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। লামার রূপসীপাড়া এলাকাটি জনসংহতি সমিতির প্রভাবিত এলাকা বলে জানা গেছে।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, নিহত মংক্যচিং মারমা এমএলপির সাথে জড়িত ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কারা তাকে হত্যা করেছে এখনো বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
