তাইওয়ানে চীন ‘বিপদ নিয়ে খেলছে’, হুমকি বাইডেনের, ‘উল্টো জবাব’ চীনের
 
                 
নিউজ ডেস্ক
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, তাইওয়ানের ব্যাপারে চীন “বিপদ নিয়ে খেলছে”। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে দ্বীপটি রক্ষার জন্য আমেরিকা সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে।
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা যে নীতি অনুসরণ করে আসছিল, মি.বাইডেনের এই মন্তব্য তার বিপরীত। যদিও হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলছে তারা তাদের নীতি থেকে সরে আসেনি।
জাপানে মি. বাইডেন তার বক্তব্যে তাইওয়ান পরিস্থিতির সাথে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার তুলনা টানেন, যার উত্তরে বেইজিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার পর জো বাইডেন প্রথমবারের মত এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। তিনি ওই অঞ্চলে আমেরিকার মিত্র দেশগুলো সফর করছেন।
মি. বাইডেন তার বক্তব্যের ভূমিকায় বলেন তাইওয়ানের ব্যাপারে আমেরিকান নীতি “বদলায়নি”। তবে সাম্প্রতিক কয়েকমাসে এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন যে চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে আমেরিকা তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা দেবে। টোকিওতে এই হুমকি যেভাবে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তাতে এটাকে আমেরিকার সুর পরিবর্তন বলেই দেখা হচ্ছে।
এধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আমেরিকা কী অবস্থান নেবে সে বিষয়ে আমেরিকা আগে কখনই এতটা স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি।
বাইডেন কী বলছেন- এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?
মি. বাইডেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিডার সঙ্গে টোকিওতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যখন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তখন একজন তাকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তরের শুরুতেই চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের সাথে ইউক্রেনের ওপর রুশ হামলার যোগাযোগ টানেন।
শেষ পর্যন্ত যদি ইউক্রেন এবং রাশিয়ার ব্যাপারে একটা মীমাংসা হয়ে যায় এবং রাশিয়া যদি নিষেধাজ্ঞার চাপ সামাল দিতে না পারে, “সেটা থেকে চীন কি ইঙ্গিত পাচ্ছে জোর করে তাইওয়ান দখল করলে তার কী মূল্য চীনকে দিতে হবে?” তিনি প্রশ্ন রাখেন।
“চীন তাইওয়ানের একেবারে কান ঘেঁষে জঙ্গী বিমান উড়িয়ে এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে ইতোমধ্যেই বিপদ নিয়ে খেলছে,” বলেন মি. বাইডেন। এ প্রসঙ্গে তাইওয়ানের স্বঘোষিত বিমান প্রতিরক্ষা এলাকায় চীনা জঙ্গী বিমানের ঢুকে পড়ার ঘটনা বৃদ্ধির উল্লেখ তিনি করেন।
মি. বাইডেন আরও বলেন যে “আমি আশা করি না এটা (চীনা আক্রমণ) ঘটবে এবং তার চেষ্টাও করা হবে বলে আমি আশা করছি না,” কিন্তু তারপরেও “এধরনের পদক্ষেপের ফল দীর্ঘ মেয়াদে কতটা নেতিবাচক হবে সেটা বিশ্ব কতটা কঠোর ভাষায় স্পষ্ট করে দিচ্ছে” তার ওপরেও এর সম্ভাবনা নির্ভর করে।
এরপরেও মি. বাইডেনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হয়, চীন তাইওয়ান দখলের চেষ্টা করলে আমেরিকা সামরিকভাবে তা প্রতিহত করবে কিনা, বিশেষ করে আমেরিকা যখন ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সেটা করেনি। তিনি উত্তর দেন: “হ্যাঁ…সে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি।
“বিষয়টা হল তাইওয়ান যদি জোর করে দখলের চেষ্টা হয়, সেটা যথাযথ হবে না। এতে পুরো অঞ্চল বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং ইউক্রেনে যা ঘটেছে, সেখানে আবার একই ঘটনা ঘটবে।”
আমেরিকার কৌশল কি স্পষ্ট? – বিশ্লেষণ
আমেরিকা তাইওয়ানের ওপর আক্রমণ প্রতিহত করবে এমন কথা জো বাইডেন এই প্রথম বললেন না।
তবে তিনি এই মন্তব্য করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই অঞ্চল বিষয়ে তাদের নীতিতে কোন বদল ঘটেনি।
মার্চ মাসেও মি. বাইডেন প্রায় একইধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন “ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন না”। এর পরপরই আমেরিকান কর্মকর্তারা দ্রুত অস্বীকার করেন যে তারা মস্কোয় প্রশাসন বদলের ডাক দিচ্ছেন।
কিন্তু বিবিসির জাপান সংবাদদাতা রুপার্ট উইংফিল্ড-হেইস বলছেন মি. বাইডেনকে পরে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার মন্তব্যে অটল থাকেন। তিনি বলেন, মি. পুতিনের পদক্ষেপে তিনি তার “নৈতিক ক্ষোভ” প্রকাশ করে ওই মন্তব্য করেছিলেন।
আজও টোকিওর সংবাদ সম্মেলনে তিনি যেটা বলতে চেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে সেটা হল “আমি তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এটা ঘটতে দেব না”।
তাইওয়ান বিষয়ে আমেরিকান সরকারের সরকারি অবস্থান হল “কৌশলগত ধোঁয়াশা” বজায় রাখা – বলছেন মি. উইংফিল্ড-হেইস। অর্থাৎ তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আমেরিকা কোন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না, কিন্তু তারা যে তা করবে না তাও তারা বলছে না। এর একটা উদ্দেশ্য হল চীনকে অনুমান-নির্ভর করে রাখা।
তবে চীন যতই শক্তিশালী হয়ে উঠছে, ততই তাইওয়ানের জন্য চীনা আক্রমণের আশংকা আরও বাস্তব হয়ে উঠছে। এবং এ বিষয়ে বিশ্বের কণ্ঠও আরও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্প্রতি বলেছেন এখন সময় হয়েছে অমেরিকার বেইজিংকে স্পষ্ট করে তাদের মনোভাব জানিয়ে দেবার এবং বলার যে আমেরিকা তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা জোগাবে।
তবে কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন এটা খুব একটা সুবিবেচনার কাজ নয়, কারণ এতে করে চীন এই দ্বীপটি আবার অধিগ্রহণের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করতে উৎসাহিত হতে পারে।
তবে ওয়াশিংটন ও টোকিওর অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাইওয়ানে চীনের সামরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং এই হুমকি মোকাবেলায় নতুন কোন কৌশল কাজ করবে কিনা তা নিয়ে স্পষ্ট কোন দিক নির্দেশনা দিতে পারছেন না বলে বলছেন বিবিসির জাপান সংবাদদাতা।
‘উল্টো জবাব’ চীনের
চীন সোমবার জানিয়েছে বেইজিং তাইওয়ানে তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীন আক্রমণ করলে তাইওয়ানের পাশে থাকার ‘প্রতিশ্রুতি’ দেওয়ার পর তার কথা আমলে না নিয়ে উল্টো ‘তিরস্কার’ করে এই মন্তব্য করল চীন। বার্তা সংস্থা এএফপি সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কখনই স্ব-শাসিত তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণ করেনি। তবে চীন বরাবরই দ্বীপটিকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ মনে করে। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করেও একদিন তাইওয়ান দখল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বেইজিং।
