ডেঙ্গুর হটস্পট এখন রোহিঙ্গা শিবির
 
নিউজ ডেস্ক
এত দিন ধারণা ছিল, ডেঙ্গু জ্বর ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। চলতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৯৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো এখন ডেঙ্গুর হটস্পট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছে। এসব রোগীকে রোহিঙ্গা শিবিরের ফিল্ড হাসপাতালের পাশাপাশি ঘরেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সেখানে কারও মৃত্যু হয়নি। অপর দিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে ৩১ জন ম্যালেরিয়া রোগীও শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর আশঙ্কাজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা শিবিরকে ডেঙ্গুর হটস্পট বলা যায়। শিবিরগুলোতে ঘনবসতি বেশি। এ ছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে পানি জমে থাকছে। ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ জ্বর ও তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়। এরপর সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরেই সারাক্ষণ মশারি টানিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এম আর ভূঁইয়া নিজেও ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করতে গিয়ে নিজেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণার পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করছে।
অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘিঞ্জি পরিবেশে অবস্থিত। প্রতিটি ঘরে ৮ থেকে ১০ জন গাদাগাদি করে থাকে। এ কারণে একজনের ডেঙ্গু হলে অন্যদেরও আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। পানিনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে মশা জন্মানোর সুযোগ বেশি। অপর দিকে মশার লার্ভা ও উড়ন্ত মশা মারার উদ্যোগও কম। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতারও অভাব আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে, ব্যবস্থা করা হয়েছে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষার। এ ছাড়া যেসব স্থানে পানি জমে থাকে, সেগুলো নষ্ট করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রলম্বিত বর্ষা মৌসুম, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেখে তাঁরা ধারণা করছেন, এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন বেশি হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার দ্বিগুণের বেশি রোগী পাওয়া গেছে রোহিঙ্গা শিবিরে। অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে ৮৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭২১ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। বর্তমানে রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। আর বাকি পাঁচজন রোগী ভর্তি অন্যান্য জেলায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, কীটনাশক দিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। মশার লার্ভা নষ্ট করতে পারলেই ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়। জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাস জোরালো পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
