পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন, বিশিষ্টজনদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন - Southeast Asia Journal

পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন, বিশিষ্টজনদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র মা চ য়ই এর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবান সদরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায় পার্বত্য মন্ত্রীর বাসভবন থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষ্যে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বান্দরবান মারমা বৌদ্ধ শ্মশানে গিয়ে প্রার্থনা ও পূজার পর মরদেহ সৎকার করা হয়।

এসময় শেষকৃর্ত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির মাতা মা চ য়ই এর মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কক্সবাজার ৩ (সদর-রামু) সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো: শাহিদুল এমরান, পার্বত্য চট্টগ্রাম সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ শাহিনুল ইসলাম, সদস্য (প্রশাসন) আশীষ কুমার বড়ুয়া, সদস্য (পরিকল্পনা) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, সদস্য (বাস্তবায়ন) মোঃ হারুন অর রশিদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এর আগে বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র মাতা মা চ য়ই এর মৃত্যুতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশিষ্টজনেরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র মায়ের মৃতদেহের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গত ১৩ অক্টোবর রোববার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ড. ইকবাল সোবাহান গোলাপ এমপি স্বাক্ষরিত ও গনমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর বাহাদুরের মা চ য়ই এর পবিত্র আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। এরপর একই দিন বিকেলে মন্ত্রী বীর বাহাদুরের সাথে দেখা করে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা ও মৃতদেহের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছেন উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদ্বয় ও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ।

প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর শনিবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে বান্দরবান শহরের ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন নিজ বাস ভবনে পরলোক গমন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র মাতা মা চ য়ই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি মৃত্যুকালে একমাত্র পুত্র বীর বাহাদুরসহ স্বজনদের রেখে যান। জানা যায়, বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

এখানে উল্লেখ্য, বীর বাহাদুর উশৈসিং ১৯৬০ সালের ১০ জানুয়ারি বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লালমোহন বাহাদুর এবং মাতার নাম মা চ য়ই। ১৯৬৫ সালে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকু শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে এবং পরে বান্দরবান সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকএ (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্রএ জীবনেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এসময় তিনি বান্দরবান ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৯ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াওু ১৯৯২ সালে বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বীর বাহাদুর ঊশৈসিং ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পূর্বে এ সংক্রান্ত সংলাপ কমিটির অন্যতম সদস্য এবং তৎকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরএ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হন। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগেরু সংসদীয় দলের হুইপ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বীর বাহাদুর উশৈসিং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি সংসদের সংসদ কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াএ তিনি এই সময় প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দ্বিতীয় বারের মত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চম বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি শেখ হাসিনার গঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফের বান্দরবান আসনে এমপি হিসেবে বিজয়ী হন এবং নব গঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।