লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তার
![]()
নিউজ ডেস্ক
লালমনিরহাটে প্রস্তাবিত বিমানঘাঁটি নিয়ে সরব হয়েছেন ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সুব্রত সাহা। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী কলামে তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশ সরকার চীনের সহযোগিতায় শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে একটি সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ করতে চাচ্ছে, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
সুব্রত সাহা বলেন,
“বিমানঘাঁটি হোক বা অন্য যে কোনও পরিকাঠামো, প্রয়োজন পড়লে তা গুঁড়িয়ে দিতে ভারতের খুব একটা সময় লাগবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর উদ্দেশ্যে ‘বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের আড়ালে নিঃশব্দে’ প্রস্তুতি চলছে। তার ভাষায়,
“ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলার অদম্য ইচ্ছা। নিজের ক্ষমতায় না কুলোলে অন্য কাউকে প্ররোচিত করে সেই উদ্দেশ্যসাধনের চেষ্টা।”
লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
লালমনিরহাটে অবস্থিত বিমানঘাঁটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিমানবাহিনী ১৯৩১ সালে তৈরি করেছিল। যুদ্ধ শেষে সেটি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এটি যাত্রী পরিবহনের জন্য চালু করলেও পরবর্তীতে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
শেখ হাসিনার সরকার আমলে ওই ঘাঁটিতে একটি বিমান ও মহাকাশ প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে ভারতের সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে সেখানে সামরিক বিমানঘাঁটি সচল করতে বেশি আগ্রহী।
শিলিগুড়ি করিডর ও ভৌগোলিক সংবেদনশীলতা
সুব্রত সাহা তার লেখায় ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন,
“শিলিগুড়ি করিডরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারত সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকে।”
লালমনিরহাট থেকে ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার দূরত্ব খুবই কম—মাত্র ১৫ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ি করিডর থেকে এই বিমানঘাঁটির দূরত্ব মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার।
এই ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ করিডরের কোনো কোনো অংশের প্রস্থ মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার। এর চার পাশে রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীন। এরই মধ্যে দুটি বড় সামরিক সংঘর্ষ—১৯৬৭ সালে নাথু লা ও ২০১৭ সালে ডোকলাম—এই অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সংঘটিত হয়েছে।
“বাংলাদেশের নীতিতে চিনা ছায়া”
সুব্রত সাহা মনে করেন,
“বাংলাদেশের বর্তমান নিয়ন্ত্রকেরা শিলিগুড়ি করিডরের সংবেদনশীলতা আরও বাড়াতে চাইছেন। তারা চীনকে করিডরের পূর্ব পাশে পা রাখার সুযোগ করে দিচ্ছেন।”
তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন,
“বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কথাবার্তায় বারবার উত্তর-পূর্ব ভারতে হস্তক্ষেপ করার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রফেসর ইউনূস সরাসরি না বললেও নানা ‘মোড়কে’ ও ইঙ্গিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে একধরনের সক্রিয় কৌশল নিচ্ছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, ইউনূসের সমর্থকেরা প্রকাশ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে ইউনূস এসব কথা প্রকাশ্যে বলছেন না, কিন্তু ‘ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে’ একই বার্তা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুব্রত সাহার এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র নীতির ওপর ভারতের উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সতর্ক দৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়। শিলিগুড়ি করিডর সংক্রান্ত যেকোনো সামরিক তৎপরতা বা কাঠামো ভারতের জন্য সংবেদনশীল বলে বিবেচিত, এবং বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বর্তমান ধারা ভারতের কৌশলগত অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভবিষ্যতে অঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উত্তেজনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।