দুর্যোগের মাঝেও রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করছে আরাকান আর্মি
 
                 
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় আবারও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। টানা মৌসুমি বৃষ্টির মধ্যে যখন অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে, ঠিক তখনই সেখানে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো থেকে মানুষজনকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে আরাকান আর্মি। এই খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সূত্র এবং ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপ। এ অবস্থায় নতুন করে হাজার হাজার মানুষের খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, মংডু টাউনশিপের অন্তত ছয়টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে এই উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব গ্রামের মানুষদের বলা হয়েছে, তারা যেন “নিরাপত্তার স্বার্থে” দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এসব মানুষ ইতোমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়ে নানা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এখন আবার তাদের ওপর নতুন করে এই চাপ আসায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আউং বালা নামের এক গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি বলেন, “আমরা যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছি, কিন্তু যাবো কোথায়? চারদিকে পানি, রাস্তাঘাট ভাঙা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও ভর্তি।”
যেসব গ্রামে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মূলত এমন পরিবারদের নিয়ে গঠিত যারা আগে থেকেই বাস্তুচ্যুত। তারা কোনও সরকারি সহায়তা বা স্থায়ী পুনর্বাসন না পেয়েই এখানে বসবাস করছিলেন। এখন আবার উচ্ছেদের মুখে পড়ে তারা চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, বর্ষার এই সময়ে যদি এত মানুষের স্থানান্তর ঘটে, তাহলে তা হবে এক বিশাল মানবিক বিপর্যয়। খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানিসহ সব কিছুরই সংকট দেখা দেবে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের অবস্থা হবে সবচেয়ে করুণ।
আরাকান আর্মি নিজেদের সামরিক জান্তা-বিরোধী শক্তি বলে দাবি করলেও রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের আচরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। এর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর আরোপিত চলাচলের বিধিনিষেধ, জোর করে খাটানো এবং বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এখন উচ্ছেদের ঘটনা নতুন করে সেই প্রশ্নগুলো সামনে এনেছে।
সিন থেই পিন গ্রামের এক প্রবীণ বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি পুড়িয়েছিল। এখন আরাকান আর্মি বলছে, গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। আমরা আর কতবার পালিয়ে বেড়াবো?”
রোহিঙ্গা রাজনীতিবিদ রো ময়্যু ইসলাম বলেন, “বিশ্বকে বুঝতে হবে, রাখাইন এখন আর কোনো নিরাপদ জায়গা নয়। এখানে আবারও নীরবে জাতিগত নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।” তিনি জাতিসংঘ, আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা এখন আর শুধু সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন না, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছ থেকেও তারা শান্তি পাচ্ছেন না। একদিকে সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না, অন্যদিকে আরাকান আর্মি তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক সমাজ এসব দেখে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
