পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ অংকে আবারও বৈষম্য, নিজেই সুবিধাভোগী পাজেপ সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা!
 
                 
নিউজ ডেস্ক
চলতি (জুন) মাসের ১৬ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৬৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম)। এই বরাদ্দ জেলার ২০২টি প্রকল্পে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প তালিকা বিশ্লেষণ করে চমকে উঠেছে সচেতনমহল—এ যেন সরকারিভাবে অনুমোদিত বৈষম্যের পাঠশালা!
তথ্য অনুসারে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে শুধুমাত্র চাকমা সম্প্রদায়ই পেয়েছে ১ হাজার ১৫ টন খাদ্যশস্য, ১০৪টি প্রকল্পের অনুকূলে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৩৮৩ টন (৫০টি প্রকল্প) এবং মারমা সম্প্রদায়ের জন্য মাত্র ১২১ টন (১৬টি প্রকল্প)। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৩৩০ মেট্রিক টন, ৩১টি প্রকল্পে। হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৩০ টন, একেকজন বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি—এ যেন চরম অবহেলার প্রতিচ্ছবি।
অবাক করার মতো ঘটনা হলো, এই তালিকায় পার্বত্য জেলা পরিষদের একজন বর্তমান সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা নিজের নামে নিজেই বরাদ্দ নিয়েছেন ৬ মেট্রিক টন চাল, যা সরাসরি স্বার্থবিরোধী আচরণ ও নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনকে প্রশ্ন করলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, এই বরাদ্দ তালিকা চূড়ান্তকরণে জেলা প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই, এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত।
তালিকার এ ধরনের বিভাজন, পক্ষপাত ও বাঙালিদের প্রতি অব্যাহত অবহেলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং এটি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা একটি ‘রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের ধারাবাহিকতা’। প্রতিবারের মতো এবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করে রেখে বরাদ্দের সিংহভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণের এই রীতি যেন প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি!
কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের নির্লজ্জ বৈষম্য শুধু সামাজিক অস্থিরতা নয়, জাতিগত সম্পর্কের উপরও চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্র যখন বরাদ্দের নাম করে একপক্ষকে বারবার বঞ্চিত করে, তখন সেই রাষ্ট্র তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। বরাদ্দ নয়, এটি এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক অবিচার।
প্রসঙ্গত, এই ‘বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি’ মূলত দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের সহায়তা ও উন্নয়নের জন্য চালু। অথচ তালিকাভুক্ত অনেক প্রকল্পেই বরাদ্দ পেয়েছেন বিত্তশালী, রাজনীতিক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। এর মাধ্যমে প্রকৃত দরিদ্ররা আরও একবার উপেক্ষিত থেকে গেলেন, আর বরাদ্দের নামে প্রতিষ্ঠা পেল পক্ষপাতের এক নগ্ন প্রতিকৃতি।
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সোচ্চার হওয়াই এখন সময়ের দাবি। কারণ প্রশ্ন তোলা থেমে গেলে, অন্যায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
