ধর্মীয় পরিচয়, পদ দখল ও আঞ্চলিক রাজনীতির ষড়যন্ত্রে ফাঁসানো হয়েছে শিক্ষক জসিমকে
 
                 
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ির গুইমারা কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগটি ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন শিক্ষক নিজে এবং এলাকার বহু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা।
অভিযোগ উঠেছে, একটি আঞ্চলিক সংগঠনের প্রত্যক্ষ মদদে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পালের নেতৃত্বে এই ঘটনা ‘স্ক্রিপ্টেড’ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজানো হয়েছে। মূল লক্ষ্য—নিবন্ধিত, যোগ্য এবং নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের পথ রুদ্ধ করে পছন্দের অযোগ্য প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে বসানো।
বহুমাত্রিক অভিযোগ ও পাল্টা দাবি
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন তিনজন ছাত্রী অভিযোগ করেন যে শিক্ষক জসিম উদ্দিন তাদের ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি’ করেছেন। কিন্তু অভিযোগের পরপরই এক ছাত্রী দাবি করে, তাকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে এবং সে শিক্ষক জসিম তাকে ‘সন্তানের মতো ভালোবাসে’।
জসিম উদ্দিন বলেন, “আমি ২০২১ সাল থেকে সম্মান নিয়ে কাজ করে আসছি। আমাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ছিল। বর্তমান প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পাল একজন অযোগ্য ও নিবন্ধনবিহীন প্রার্থীকে বসাতে ষড়যন্ত্র করেছেন।”
তাঁর দাবি, তার দাড়ি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকেও বিরূপ দৃষ্টিতে দেখা হয়, এবং এটি একটি স্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: ‘সুশীলীয় রাজত্ব’
একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন—বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পালের বিরুদ্ধে বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রী-সহ আত্মীয়স্বজন একই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত।
আরও পড়ুন: গুইমারায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে উত্তেজনা, নেপথ্যে ইউপিডিএফের ষড়যন্ত্র
একজন শিক্ষক জানান, “থোয়াচিং মারমা যাকে বসানো হচ্ছে, তার নেই শিক্ষক নিবন্ধন। অথচ যোগ্য ও অভিজ্ঞ জসিমকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুধুই পদলাভ ঠেকাতে।”
স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “এটি সরকারি অনুমোদনবিহীন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অথচ চলমান রয়েছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে। সুশীলের ইচ্ছাই এখানে আইন।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ ও তদন্ত
ঘটনা সামনে আসার পর উপজেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যা ৫ কর্মদিবসে প্রতিবেদন দেবে। ইউএনও আইরিন আক্তার জানান, “অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযুক্ত শিক্ষক আপাতত বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।”
গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক বলেন, “থানায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজে বিভাজনের শঙ্কা, সাবধানতা চান নাগরিক সমাজ
পার্বত্য নাগরিক পরিষদের নেতা আব্দুল মজিদ বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ সমাজে বিভাজন তৈরি করে। প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অপপ্রচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “২০২৪ সালে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুলের শিক্ষক সোহেল রানার মতো ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য
প্রধান শিক্ষক সুশীল রঞ্জন পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকেই পরিস্থিতির উদ্ভব। তদন্তেই সত্যতা জানা যাবে।”
এ ঘটনা শুধু একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, প্রভাব বিস্তার এবং ধর্ম ও জাতিগত বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখছেন স্থানীয়রা। এখন দেখার বিষয়, তদন্তে সত্য উদঘাটিত হয় কিনা এবং নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়—তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
