কোটি টাকার অনিয়ম: রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য-প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
![]()
নিউজ ডেস্ক
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আহসান তারেক এ আদেশ দেন।
আদালতের জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় যাদের নাম এসেছে তারা হলেন— জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সবির কুমার কুমার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ ও বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মানুনুর রশীদ এবং ঠিকাদার চিং হেন রাখাইন, মিলন তালুকদার ও অমলেন্দু চাকমা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বরকল উপজেলায় বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের বিপরীতে মাঠপর্যায়ে কোনো দৃশ্যমান কাজ হয়নি। স্থানীয়ভাবে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক প্রকল্প কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৮ জুন দুদকের রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহমেদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চার্জশিট জমা দিলে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন এবং সোমবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান সাংবাদিকদের জানান, “রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলায় পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আদালত আসামিদের অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।”
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বরকলসহ রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে। ফলে সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নের তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। আদালতের এ পরোয়ানা ভবিষ্যতে দুর্নীতি দমনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
দুদক জানিয়েছে, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলমান মামলাগুলোর কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কি আছে মামলার এজহারে?
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত কামিনী চাকমার জমির ওপর মৎস্য বাঁধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রৌকশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রৌকশলী জ্যার্তিময় চাকমা, উপ-সহকারী প্রৌকশলী রিগ্যান চাকমা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সমৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছর গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয় এজাহারে।
দ্বিতীয় মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজার পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণসহ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পর মাধ্যমে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাৎর অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় উপরোক্ত তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহন রাখাইনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়।
তৃতীয় মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়ন সুবলং কমিউনিটি সেটের ঘর ও পাকা সিঁড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমান সিলেট কর্মরত) কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সবির কুমার চাকমার নামে মামলা হয়।
চতুর্থ মামলার এজাহারে বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ থেকে হারুন টিলা এলাকার আহাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১৬-১৭ সালে এবং প্রকল্পে ব্যয় ছিল ১০ লাখ টাকা। তবে তদন্তে উক্ত স্থানে কোনো মৎস্য বাঁধ এবং হারুন টিলা নামের কোনো জায়গা পাওয়া যায়নি। এ মামলার আসামিরা হলেন নির্বাহী প্রৌকশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রৌকশলী কাজী আবদুস সামাদ, সহকারী প্রৌকশলী জ্যার্তিময় চাকমা, উপ-সহকারী প্রৌকশলী রিগ্যান চাকমা, ঠিকাদার নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহন রাখাইন, ৪নং ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মামুনুর রশীদ এবং জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।