রামগড়ে অনুমতিবিহীনভাবে অবস্থানরত দুই চাইনিজ নাগরিক আটক; উদ্ধার সন্দেহজনক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি
![]()
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলা সদরে অনুমতি ছাড়া অবস্থান ও সন্দেহজনক কার্যক্রমের অভিযোগে দুই চাইনিজ নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর ২০২৫) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা সদরের ইলিয়াস হোসেনের মালিকানাধীন চারতলা ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইন্টারনেট রাউটার সদৃশ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে ওই দুই বিদেশি গোপনে সেখানে বসবাস করছে—এমন তথ্য পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন, জিয়াং চেংতং (JIANG CHENGTONG) এবং তাং তংউ (TANG TONGWU)।
জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর তারা চট্টগ্রামের কুমিরা এলাকায় অবস্থিত ‘অবর্না ক্লাসিক’ নামের একটি অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানির ফোরম্যান মোঃ রোকন উদ্দিনের মাধ্যমে রামগড়ে আসে। কোনো সরকারি অনুমতি ছাড়াই তারা নগদ ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়। তারা ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথা জানালেও তাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র, কোম্পানির নাম কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতিপত্র পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্র হতে বিষয়টি রামগড় থানা পুলিশকে জানানো হলে সার্কেল এএসপি উবাইন এবং ওসি মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা চাইনিজ ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি-রপ্তানির কথা বললেও তাদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি পাওয়া যায়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ৬টি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে, যেগুলো প্রাথমিকভাবে অবৈধ বেতার যোগাযোগ (ভিওআইপি) কার্যক্রমে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুলিশের একটি অনানুষ্ঠানিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাটি বিস্তারিত তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসিকে জানানো হয়েছে। তাদের ফরেনসিক টিম পৌঁছে জব্দকৃত ডিভাইসের যাচাই-বাছাই শেষে আাটককৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। বর্তমানে ওই দুই বিদেশী নাগরিক পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
এদিকে, সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলে অনুমতি ছাড়া বিদেশির বসবাস ও যোগাযোগ ডিভাইস ব্যবহারের ঘটনাকে নিরাপত্তা-ঝুঁকি হিসেবে দেখছে স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিকদের জন্য বিশেষ আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো বিদেশী নাগরিক পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা—রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে—প্রবেশ বা অবস্থান করতে চাইলে পূর্বানুমোদিত ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)’ অথবা পারমিট সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এ অনুমতি প্রদান করে থাকে। পারমিট ছাড়া এই এলাকায় অবস্থান করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। নিরাপত্তা-সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চল হওয়ায় বিদেশিদের যাতায়াত, অবস্থান, গবেষণা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম বা যোগাযোগ সরঞ্জাম ব্যবহারের ওপর কঠোর নজরদারি থাকে এবং অনুমোদনহীন যেকোনো কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।