পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি পিসিসিপির, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও উন্নয়ন–বৈষম্য নিয়ে কঠোর অবস্থান

পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি পিসিসিপির, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও উন্নয়ন–বৈষম্য নিয়ে কঠোর অবস্থান

পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি পিসিসিপির, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও উন্নয়ন–বৈষম্য নিয়ে কঠোর অবস্থান
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে “শান্তিচুক্তির প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও পুনঃমূল্যায়ন” শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি), ঢাকা মহানগর শাখা। মঙ্গলবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তারা শান্তিচুক্তির অগ্রগতি, সীমাবদ্ধতা এবং চলমান নিরাপত্তা–রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে চুক্তির সময়োপযোগী পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

সভায় বলা হয়—চুক্তির ২৮ বছর অতিক্রম করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যাশিত শান্তি, সমতা ও টেকসই উন্নয়ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশের কিছু প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠী ও একাংশের মানবাধিকারকর্মী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত পরিস্থিতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আসছে, যা রাষ্ট্রকে দুর্বল দেখায় এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপরাধকে আড়াল করে।

পিসিসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুক্তি-পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং তিন জেলা পরিষদ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। বক্তাদের অভিযোগ—আঞ্চলিক পরিষদের অনির্বাচিত চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও অন্যান্য সদস্যরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা না করে বরং নানা ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছেন। ফলে দুর্গম এলাকায় সড়ক উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা সুবিধা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছেনি।

বক্তারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালি—উভয় জনগোষ্ঠীই উন্নয়ন পরিকল্পনায় বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। স্বচ্ছতার অভাব, বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব এবং জবাবদিহির সংকট সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন করেছে। এসব কারণে শান্তিচুক্তির সময়োচিত পুনর্মূল্যায়ন এখন জরুরি বলে মন্তব্য করেন তারা।

পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি পিসিসিপির, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও উন্নয়ন–বৈষম্য নিয়ে কঠোর অবস্থান

সভায় সবচেয়ে গুরুত্ব পায় পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি। বক্তারা বলেন—জেএসএস (সন্তু লারমা গ্রুপ), ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এবং কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতা পাহাড়ের স্থায়ী শান্তির প্রধান বাধা। অপহরণ, চাঁদাবাজি, উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা, বিভেদ সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং কেএনএফের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মতো ঘটনা নিয়ে বহু সংগঠন নীরব থাকায় নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়ছে। তারা প্রশ্ন তোলেন—যখন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপরাধ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, তখন কেন তাদের বিরুদ্ধে নীরবতা এবং কেন নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি ওঠে?

বক্তারা বিদেশি কিছু মহলে ছড়ানো তথ্যকে উদ্দেশ্যমূলক ও বিভ্রান্তিমূলক বলে উল্লেখ করেন। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং সন্ত্রাসীদের ন্যারেটিভ শক্তিশালী হয় বলে তারা মন্তব্য করেন।

এছাড়া বহু এনজিও ও আইএনজিওর কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা, পক্ষপাত ও রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন—কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার অভিযোগও উঠেছে। তাই এনজিও সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার ও সার্বিক মূল্যায়নের দাবি জানান তারা।

পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দাবি পিসিসিপির, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও উন্নয়ন–বৈষম্য নিয়ে কঠোর অবস্থান

সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পাহাড়ি ও বাঙালি—সব নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি। উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সাংবিধানিক অধিকার—এসব কোনো গোষ্ঠীর একক দাবি নয়, এগুলো সব নাগরিকের অধিকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ রাসেল মাহমুদ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন—স্টুডেন্ট ফর সার্বভৌমত্বের আহ্বায়ক জিয়াউল হক, পিসিসিপির উপদেষ্টা শেখ আহমেহ রাজু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ভুইয়া, বিএনপি নেতা মো. ইলিয়াস মাতাব্বর, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সহসভাপতি কাওছার আলী, ম্রো স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সিংপং ম্রো, নারী নেত্রী ও কবি ফাতেমা খাতুন রুনা, স্বাধীনতা সুরক্ষা মঞ্চের মো. শামসুদ্দিন, ইসলামের সৌরভ, মোরহমত আলী ও পিসিসিপির সহসভাপতি আল আমিন।

প্রসঙ্গত, বক্তারা শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে চুক্তির অপূর্ণ ধারাগুলোর পুনর্মূল্যায়ন ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ওপর জোর দিয়ে বলেন—পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed