পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধু
 
                 
প্রভাংশু ত্রিপুরা
১৯৭০ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর নাম তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিত না থাকলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে সুপরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, অতঃপর পার্বত্য চট্টগ্রামে সবত্র মুক্তিযুদ্ধের তৎপরতা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম পার্বত্য অধীবাসীদের অন্তরের অন্তরস্থলে গেঁথে যায়। ৭ মার্চের ভাষণের ডাকে অনুপ্রাণিত হয়ে পার্বত্য অধীবাসীদের বৃহৎ অংশ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সর্বতভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো। স্বাধীনতা উত্তরকালে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সারাদেশে নানা ধরনের চিত্র, ছবি, পোস্টার, ক্যালেন্ডার ও বিভিন্ন প্রকার প্রচারপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেও অনেকের ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধুর ছবি শোভা পেয়েছিল। অনেকে বঙ্গবন্ধুকে দেবতার জ্ঞানে শ্রদ্ধা করেছিল। বিশেষ করে, ৭ মার্চের ভাষণদানরত বঙ্গবন্ধুর ছবি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল।
আমার জানা মতে, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে তিনবার রাঙামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছিলেন। প্রথমবার সফর করেছিলেন ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে নির্বাচনী প্রচারণা কাজে। দ্বিতীয়বার সফর করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘বাকশাল’ গঠনের পর তৃতীয়বার সফর করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তারিখে বেতবুনিয়াস্থ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্ধোধন উপলক্ষে।
১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সফর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল রাঙামাটির প্রদর্শনী ময়দানে। বিশাল আকারে জনসভা হয়েছিল। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে এক নজরে দেখার জন্য দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দলে দলে গিয়ে জনসভায় যোগদান করেছিল। শত শত পুষ্পমাল্য দিয়ে, প্রাণের আকুতি দিয়ে সেদিন পাহাড়ি জনগণ প্রিয় নেতাকে বরণ করেছিল। উক্ত জনসভায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের এক পর্যায়ে যুগ যুগ ধরে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার পার্বত্যবাসীদেরকে সদ্য অর্জিত স্বাধীনতার সুফল গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা এখন সবাই বাঙালি। আজ থেকে আপনাদেরকে উপজাতি থেকে জাতিতে প্রমোশন দিলাম’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদত্ত ভাষণের উক্ত অংশটি নিয়ে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। বিশ্লেষকদের অভিমত, বঙ্গবন্ধু বোঝাতে চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রকৃত পক্ষে কোন জাতিভেদ থাকবে না। একজন বাঙালি নাগরিক সাংবিধানিকভাবে যে সুযোগ সুবিধা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে ঠিক তেমনিভাবে ভোগ করার অধিকার থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদেরও। অখন্ড জাতীয় স্বার্থে বঙ্গবন্ধু এমন কথা বলেছিলেন।
১৯৭৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চারু বিকাশ চাকমা ও সাংসদ সুদীপ্তা দেওয়ানের নেতৃত্বে একটি পাহাড়ি প্রতিনিধি দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন পাহাড়ি প্রতিনিধির দলটি বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকালে পাহাড়িদের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস, কৃষ্ঠি, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় সংরক্ষণের জন্য এবং বাংলাদেশের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদা দানের জন্য দাবী জানিয়েছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ মূলে এতোদিন যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষ্ঠি, সংস্কৃতি ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখেছিলেন। অদ্যবধি তা বলবৎ রয়েছে।
‘বাকশাল’ গঠনের পর ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটি সফর করেছিলেন। তখন আমি পুলিশ বিভাগে দারোগা পদে চাকরির জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে রাঙামাটিতে অবস্থান করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী হেলিকাপ্টারটি রাঙামাটিতে এসে পৌঁছুলে সমবেত জনগণ ব্যাপক উল্লাস ও গগনবিদায়ী জয়ধ্বনি দিয়ে মাল্য ভূষিত করে জাতির পিতাকে বরণ করেছিল।
রাঙামাটির রাজপথের দু’পাশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও ম্রো নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত দিনে রাঙামাটির প্রদর্শনীর মাঠে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন জাতীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সংখ্যালঘুদের ধর্ম, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য অবশ্যই রক্ষা করা হবে। পাহাড়িদের উপর কোন মহলের অত্যাচার সহ্য করা হবে না।
পাহাড়িদের জমি, ধন, সম্পদ কাউকে স্পর্শ করতে দেয়া হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ বাহিনীতে তিনশত এবং রক্ষী বাহিনীতে দু’শত পাহাড়ি যুবক নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেছিলেন, পাহাড়িদের অধিকতর সুবিধা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তিনি একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ অবস্থা উত্তরণের জন্য স্বতন্ত্র বিশেষায়িত একটি উন্নয়ন সংস্থার প্রয়োজনীয়তা বঙ্গবন্ধু উপলদ্ধি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় তাঁর ঘোষণার আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে, তাঁর সরকারের আমলে গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে ১৯৭৮ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীগণ অনগ্রসর ছিল। রাঙামাটি ও বান্দরবান শহর কেন্দ্রিক লোকরাই কেবল শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সুবিধা লাভ করতো। পাকিস্তান আমলে অর্থ্যাৎ ১৯৬১ সালে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষার হার ছিল ১৩ শতাংশ। বঙ্গবন্ধুর আমলে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৭৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও জাতীয়করণ হয়ে যায়। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতি দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিটেকনিক, কৃষি ও বিশ^বিদ্যালয় সমূহে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছিল। অধিকন্তু বিদেশে তথা বিশেষ করে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, জার্মানী, রাশিয়া, ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা প্রভৃতি দেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে। তবে দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, একমাত্র উচাথোয়াই চৌধুরী নামে এক মারমা ছাত্র ছাড়া সরকারিভাবে প্রদত্ত সুযোগটি কেবল চাকমারই এক তরফাভাবে ভোগ করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্টাইপেন্ড’ প্রথা প্রবর্ত্তন করা হয়েছিল। সরকারি চাকুরি পাবার ক্ষেত্রে পাহাড়িদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছিল এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো ব্যয়বহুল শহরে অবস্থান করে যাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে একটি করে পরিত্যাক্ত বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল।
স্বতন্ত্র বৈচিত্রের অধিকারী পাহাড়িদের বস্ত্র ও হস্ত শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসার ঘটাতে এবং পাহাড়িদের মাঝে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। বর্তমান কালের কুটির শিল্প সংস্থার যে উন্নয়ন অবকাঠামো আমরা দেখতে পাই তা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাস্তবায়িত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটিতেই বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্ধোধন করেছিলেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মং রাজা মং প্রু সেইনের নেতৃত্বে পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয় নিয়ে চার দফা দাবিসহ বঙ্গবন্ধুর সকাশে গিয়েছিলেন। উক্ত প্রতিনিধি দলে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাও ছিলেন। চার দফা দাবির মধ্যে
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি স্বশাসিত অঞ্চল হবে এবং নিজস্ব একটি আইন পরিষদ থাকবে।
২. উপজাতীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির অনুরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকতে হবে।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজপ্রথা সংরক্ষণ করতে হবে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় নিয়ে কোন শাসনতান্ত্রিক সংশোধন বা পরিবর্তন হয় এরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকতে হবে।
কিন্তু তখন বঙ্গবন্ধু জরুরী কাজে বাইরে অবস্থান করায় প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ পাননি। চার দফা দাবিনামা জনসংযোগ কর্মকর্তার কাছে রেখে এসেছিলেন প্রতিনিধি দল। পরবর্তীকালে সংবিধান প্রনয়ন কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য কোন বিশেষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মর্যাদা প্রদানের দাবি আমলে না নেয়ায় পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের দাবি ব্যর্থ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ি জনগণকে সংগঠিত করে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ২৪ জুন তারিখে রাঙামাটিতে পাহাড়ি নেতাদের নিয়ে একটা সম্মেলনের আয়োজন করেন। উক্ত সম্মেলনে ‘ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল এবং ‘পাহাড়ি ছাত্র সমিতি’ নামে একটি ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। জানা যায়, বিশিষ্ট ত্রিপুরা নেতা ও খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়া নিবাসী বি. কে. রোয়াজা ছিলেন জনসংহতি সমিতির প্রথম সভাপতি এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ‘বাকশাল’ গঠন হলে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাকশালে যোগদান করেন।
‘বাকশাল’ গঠন করার পর বঙ্গবন্ধু মং প্রু সেইনকে খাগড়াছড়ি অঞ্চলের গভর্নর ও অনন্ত বিহারী খীসাকে সেক্রেটারী, বোমাং রাজা মং শোয়ে প্রু চৌধুরীকে বান্দরবান অঞ্চলের গভর্নর ও কে. এস. প্রু চৌধুরীকে সেক্রেটারী এবং চাকমা রাজার অবর্তমানে জেলা প্রশাসক আব্দুল কাদেরকে রাঙামাটি জেলা গভর্নর ও চারু বিকাশ চাকমাকে সেক্রেটারী নিযুক্ত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পট-পরিবর্তন ঘটলে সেপ্টেম্বর মাসে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আত্মগোপনে চলে যান।
চাকমা ত্রিদিব রায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন। ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা নিয়ে বঙ্গবন্ধু নাখোশ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ত্রিদিব রায়কে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করেছিলেন। তথাপি, ত্রিদিব রায়কে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বঙ্গবন্ধু রাজমাতা বিনীতা রায় ও কুমার কোকনাদাক্ষ রায়কে নিউইয়র্কে পাঠিয়েছিলেন। তখন ত্রিদিব রায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ত্রিদিব রায় ফিরে আসেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মহত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিন্নত আলী পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে সমতল থেকে বাঙালি এনে পুর্নবাসন করার জন্য একটি পরিকল্পনা ও প্রস্তাব গোপনে সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি পুর্নবাসনের সেই প্রস্তাব নাচক করে দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর শাসন ক্ষমতায় অধিষ্টি ছিলেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন, পাহাড়িদের জন্য অধিকার সংরক্ষণ ও ভাগ্য উন্নয়নে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা কোন সময়ে মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা আজও দূর হয়নি। কম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু অনগ্রসর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামতো বটেই বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সূত্র:
১. দৈনিক ইত্তেফাক: ১৭ জুন ১৯৭৩, ২. জনপদ: সোমবার, ১৮ জুন ১৯৭৩, ৩. শুভবাণী: ১ম সংখ্যা, বৈশাখী পূর্ণিমা, ১৯৭৪, ৪. দি বাংলাদেশ অভজারভার: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫, ৫. পূর্বদেশ: ৭ জুন ১৯৭৩, ৬. দৈনিক বাংলা: শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫, ৭. দৈনিক ইত্তেফাক: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
