করোনা দমনে ভুটানের অভিজ্ঞতা
 
                 
নিউজ ডেস্ক
৪৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারে বসবাসকারী প্রায় ৮ লাখ সুখী মানুষের দেশটা জানুয়ারির শুরুতেই করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। পর্যাপ্ত পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি প্রস্তুত রেখে ফেব্রুয়ারীর শুরুতেই কাজে নেমে পড়ে। প্রত্যেকটা ল্যান্ড এবং এয়ারপোর্টে আধুনিক পিপিই পরিহিত স্বাস্থ্যকর্মীরা ভুটানে প্রবেশকারী প্রত্যেক যাত্রীর স্ক্রিনিং সম্পন্ন করে। ইন্ডিয়ায় কভিড পজিটিভের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে পশ্চিম বঙ্গ ও আসামের সাথে লাগোয়া দু্টি ডিস্ট্রিক্ট সারপাং এবং সাম্টস-এ অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়।
ভুটানে প্রথম কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত করা হয় মার্চের ৬ তারিখে। ভারত আসাম প্রদেশের বর্ডার দিয়ে প্রবেশকারী একজন মার্কিন নাগরিক প্রথম পজিটিভ চিহ্নিত হন। তার সংস্পর্শে আসা ৯০ জনকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একে একে সর্বমোট ৫ জনকে পজিটিভ শনাক্ত করা হয় যার মধ্যে এপ্রিলের ২ তারিখ পর্যন্ত ২ জন সুস্থ হয়ে গেছেন। এদের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকটি মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে সরকারী ব্যবস্থাপনা ও খরচে। বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি ছাড়া কোন শহরে ইন-আউট পুরোপুরি নিষেধ। প্রত্যেকটি শহর লক ডাউননের আওতায় আনা হয়েছে। ডোর টু ডোর সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রচারণা চালিয়েছে। ২২ এবং ২৩ মার্চ তারা প্রত্যেকটি ল্যান্ড এবং এয়ারপোর্ট সিল করে দেয়। সাফল্যও তাদের মাথায় শোভা পাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোন ডেথ রিপোর্ট নেই।
ভুটান কিছু নাগরিককে বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত এনেছে। এদের জন্য সরকারী খরচে ৫ তারকা মানের হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছে কোয়ারান্টাইনের জন্য। সরকারী হিসেবে এই মুহূর্তে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে এসব হোটেলে রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে আসা সব যাত্রীর স্ক্রিনিং ও ডাটা সংরক্ষণ করেছে। কে কোথায় থাকছে তা ট্র্যাক করেছে। যে কারণে শুরুতেই ভুটান করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পেরেছে। কোয়ারান্টাইনের মেয়াদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক নির্ধারিত ১৪ থেকে ২১ দিনে বর্ধিত করায় প্রতি জনের জন্য কমপক্ষে ২০ হাজার ডলার খরচ হচ্ছে সরকারের। ভুটানে কর্মরত সকল বিদেশি নাগরিকগণও একই সুবিধা ভোগ করছেন। বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত এবং তার দুই ছেলেও নাকি আলাদাভাবে কোয়ারেন্টিনে আছেন।
সারাদেশে তো বটেই, ইস্টার্ন রিজিয়নের মনগার ডিস্ট্রিক্ট-এর রয়্যাল গেস্ট হাউজে সার্জারী সুবিধাসহ ৩৯ বেডের একটি স্পেশাল আইসোলেশন হসপিটাল প্রস্তুত করেছে। মনগার রিজিওনাল রেফারাল হসপিটালে একটি কভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব বানিয়ে তাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। মনগার ডিস্ট্রিক্ট এ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেখানে মোট ৩০টি কোয়ারেন্টিন সেন্টার স্থাপন করেছে। তাতে এখন মাত্র ০১ জন কোয়ারেন্টিনে আছেন।
সমগ্র ভুটান থেকে কভিড-১৯ পজিটিভ কেইস খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন এবং আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসার সকল ব্যয় বহন করছে ভুটান সরকার। দূর্গম অঞ্চল থেকে কভিড-১৯ পজিটিভ কেইস পরিবহনে ব্যবহার করছে হেলিকপ্টারও। এ সব কিছু তারা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত গাইডলাইন অনুসরণ করে। প্রতিটি ধাপ ওয়েল অর্গানাইজড্। এখন পর্যন্ত সময়ের তাগিদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় National Preparedness and Response Plan for Outbreak of Novel Coronavirus (COVID-19) শিরোনামে গাইডলাইনের তিনটি এডিশন প্রকাশ করেছে। প্রস্তুতকৃত গাইডলাইন যে তারা অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং সতর্কতার সাথে অনুসরণ করেছে তা ভুটানের বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।
