রাঙামাটিতে প্রসুতির গর্ভের সন্তান নিয়ে ২ হাসপাতালের কারসাজি, মৃত ঘোষিত নবজাতক জীবিত প্রসব
 
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র মাতৃমঙ্গলের মায়ের পেটেই মৃত ঘোষনা করা এক নবজাতক অবশেষে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সুস্থভাবেই জন্মগ্রহন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিশুটির পিতা-মাতাসহ খোদ চিকিৎসক ও নার্সরা।
মাতৃমঙ্গলে এই ধরনের খামখেয়ালিপনা রিপোর্টের মাধ্যমে জীবিতকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া চিকিৎসকের বিচারও দাবি করেছেন ভূক্তভোগীর স্বজনরা।
রাঙামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ডাঃ লেলিন তালুকদার জানিয়েছেন, আল্ট্রাসনোগ্রামের সময় হৃদয়স্পন্দন বন্ধ থাকায় এমন রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ভূক্তভোগী প্রসূতি নারী প্রভা চাকমা জানান, ‘আমার ব্যথা উঠায় স্বামীকে নিয়ে নানিয়ারচরের চৌদ্দমাইল থেকে অনেক কষ্টে সোমবার বিকেলে রাঙামাটি এসে মাতৃমঙ্গলে (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) যাই। সেসময় সেখানকার একজন নার্স আমার পেটে হাত দিয়েই বলে দেয় যে, বাচ্চা নড়াচড়া করছেনা। আমি বল্লাম বাচ্চাতো নড়ছে আমি টের পাচ্ছি। কিন্তু আমার কথা শুনলো না এবং কিছুক্ষণ পরে ডাঃ লেলিন আসলেন এবং আমার আল্ট্রাসনোগ্রাম করালেন। তিনিও আল্ট্রা রিপোর্টে আমার পেটের বাচ্চা মারাগেছে বলে লিখে দিয়ে বিকেলেই আমাকে জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দিয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টার সময় আমি জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হই।’
এদিকে জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেহেতু উক্ত রোগিটির পেটের বাচ্চা মারা গেছে বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে রেফার্ড পত্র পাঠিয়েছেন ডাঃ লেলিন তালুকদার। তার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আমরা প্রসূতিকে নরমাল ভেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগ করে অপেক্ষা করছিলাম। পরেরদিন মঙ্গলবার সকাল নয়টার সময় প্রসূতি মায়ের পেইন শুরু হওয়ায় তাকে ওটি রুমে নিয়ে গেলে সকাল ১১টা ২০ মিনিটের সময় একটি সুস্থ ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হয়। পুর্নাঙ্গভাবে চেকআপ নাকরে ভূল তথ্যনির্ভর রিপোর্ট প্রদানে উক্ত চিকিৎসকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষোদ অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্সরা।
রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, আল্ট্রা রিপোর্টে দেখিয়েছে বাচ্চাটা পেটেই মৃত অবস্থায় রয়েছে। তাহলে সেই বাচ্চাটিকে আবার রেফার্ড করলো কেন? উক্ত নারী মাতৃমঙ্গলে যাওয়ার মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই তাকে বাচ্চা মারা গেছে জানিয়ে জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রোগিকে সেখানে কিছুক্ষণ রেখে পরিস্থিতি অবজার করতে পারতেন ডাঃ লেলিন। ঐ চিকিৎসক জানান, আমরা যখনই কোনো রোগ নির্ণয় করতে গেলে প্রথমেই রোগির হিষ্ট্রিরি, তারপর পরীক্ষা তারওপরে ইনভেষ্টিগেশন, এই তিনটি একই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে তারপর আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারবো যে,উক্ত সন্তানটি আসলেই মারাগেছে কি না? কিন্তু এই ধরনে ভূল মাতৃমঙ্গলের ডাক্তার কিভাবে করলো সেটি আমার বোধগম্য হচ্ছেনা।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত নই। যদি এই ধরনের হয়ে থাকে তা অবশ্যই দুঃখজনক। তিনি বলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি মূলতঃ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এটা আমার নিয়ন্ত্রিত নয় বিধায় আমার কিইবা করার আছে। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো বিষয়টি।’
