মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন কাল, ১২ দফা সুপারিশসহ প্রস্তুত ৮০ পৃষ্টার তদন্ত প্রতিবেদন
নিউজ ডেস্ক
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ৬৮ জনের বক্তব্য গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এসব বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে কমিটির সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে ১২ দফা সুপারিশসহ প্রায় ৮০ পৃষ্টার প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছে। সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি কেন ঘটেছে এবং এ ঘটনায় কারা দায়ী তা প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে। প্রতিবেদনের সাথে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। যা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে জমা করা হবে।
গত শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউজে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এর মধ্যে দিয়ে তিন দফা সময় বাড়িয়ে ৩৫ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানালেন কমিটির এই প্রধান।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলি।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কমিটির তদন্ত কার্যক্রমের পাশাপাশি এই ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। আইনি প্রক্রিয়ায় ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ হত্যার ঘটনার জন্য কারা দোষী তা আদালতই নির্ধারণ করবেন। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ারও আদালতের। আমাদের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন মনে করলে বিচার কাজে ব্যবহার করার এখতিয়ার আদালতের আছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকবে মেজর সিনহাকে হত্যার ঘটনায় অনাকাঙ্খিতভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ, গুলি করার মতো পরিবেশ বা পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়নি। ঘটনার সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আচরণ ও ব্যবহার ছিল অমানবিক।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার ঘটনাটি আমাদেরকে যেমন ব্যথিত করেছে। তেমনিভাবে আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছে। আমি এটুকুই বলতে পারি, আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, পেশাদারিত্ব, চেইন অব কমান্ড মেনে চলা উচিত। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ বলেন, আইনের রক্ষক হয়ে আমরা যেন ভক্ষকে পরিণত না হই। আমাদের হাতে অস্ত্র দিয়ে যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে আমরা তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। এই অস্ত্র যেন আমাদেরকে মানব থেকে দানবে পরিণত না করে। ভবিষ্যতে মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মো. রাশেদ খানের মত অন্য যেকোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন মৃত্যুবরণ না করে আমি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগষ্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গত ২ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে সদস্য করা হয়েছিল কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি।
কিন্তু একদিন পর (৩ আগষ্ট) পুনরায় উক্ত তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে পুনর্গঠন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। আর সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।
গত ৩ আগষ্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছিল। এসময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সরকার ৭ কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দেয়া হলেও এ নিয়ে তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দফায় ২৪ আগষ্ট। পরে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরো ৭ দিনের সময় চায় এবং তা বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। একপর্যায়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত দল।