পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসে পাহাড়জুড়ে দোয়া মাহফিল, বিচার দাবি - Southeast Asia Journal

পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসে পাহাড়জুড়ে দোয়া মাহফিল, বিচার দাবি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভয়াল ৯ সেপ্টেম্বর আজ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতিহাসে শোকাবহ এক কালোদিন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের প্রাক্কালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীর গহীন অরণ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনীর হাতে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে প্রাণ হারায় ৩৫ জন নিরীহ বাঙালী কাঠুরিয়া। এ ঘটনার দীর্ঘ ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও বিচার পায়নি ক্ষতিগ্রস্থরা। দিবসটিকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলাসহ রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লংগদুঃ
১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির পাকুয়াখালীতে ৩৫ বাঙ্গালী কাঠুরিয়াকে হত্যার ২৪ বছর উপলক্ষে শোক র‌্যালী, দোয়া ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় লংগদু উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আয়োজনে শোক র‌্যালী বের করা হয়। লংগদু বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নিহতদের সমাধিস্থলে দোয়ার আয়োজন করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত শোক সভা থেকে ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সংগঠিত হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা সন্তু লারমাসহ সকল খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসনের দাবি জানান।

শোক সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ, এসএম মাসুম রানা, আসাদুল্লাহ আসাদ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। পরে নিহত ৩৫ কাঠুরিয়ার স্বজনদের সংগঠনের পক্ষ হতে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবঃ

পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস’র স্মরণ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ পালণ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। এসময় সংগঠনটির চেয়ারম্যান আলকাছ আল মামুন ভূইয়া, শেখ আহাম্মদ রাজু, ছাত্র নেতা শাহাদাত ফরাজি সাকিব অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে ৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে তৎকালীন শান্তিবাহিনী মিটিং এর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ডেকে নিয়ে ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই নৃশংসতম গণহত্যার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও আজো সেই তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ তো দেখেই নি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসন করা কথা থাকলেও কোন সরকার তাদের খবরও রাখে নি।

রাঙামাটিঃ

পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস’র স্মরণ উপলক্ষে রাঙামাটিতে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। বুধবার সকালে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভা কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যেগে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রেীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর কবির, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক প্রমুখ।

গত ২৪ বছর পরও পাকুয়াখালী গণহত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে বক্তারা বলেন, পাহাড়ে যতদিন অবৈধ অস্ত্র থাকবে, ততদিন এখানে পাহাড়ি বাঙালি কেউ নিরাপদ নয়। পাহাড় থেকে দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান জানানো হয়।

এসময় তারা আরো বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ পাহাড়ে সকল বাঙালী গণহত্যাকান্ডের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। অন্যথায় পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা কোনোদিনই সফল হবে না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সম্প্রীতি রক্ষায় সশস্ত্র অবৈধ অস্ত্রধারী ও দেশদ্রোহী সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যার দায়ে খুনি সন্তু লারমা ও প্রসীত বিকাশ খীসা সহ তাদের সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

বান্দরবানঃ

সকালে বান্দরবান সদরের হোটেল রিভারভিউ সংলগ্ন মুসাফির পার্কস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের জেলা কার্যালয়ে পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দীন, বান্দরবান জেলার সহ-সভাপতি জনাব রুহুল আমিন, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ শাহজালাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরুল আফসার, মোঃ কামাল, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল হক,
ছাত্র পরিষদ নেতা মোঃ মিজানুর রহমান আখন্দ ও আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে তৎকালীন গেরিলা সংগঠন শান্তিবাহিনী মিটিং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ডেকে নিয়ে ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির আগমুহুর্তে সংঘটিত এই হত্যাকান্ড দেশেবিদেশে তুমুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিলো।