সাজেকে পযটকদের জন্য জেলা পরিষদের মসজিদ- একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ - Southeast Asia Journal

সাজেকে পযটকদের জন্য জেলা পরিষদের মসজিদ- একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি

মুসলিম সম্প্রদায়ের পর্যটকদের ইবাদতের সুবিধার্থে রাঙামাটি জেলার সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে সরকারী খাস ভূমি ব্যবহার করে পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রথমবারের মতো নির্মিত হচ্ছে একটি মসজিদ। দারুস সালাম জামে মসজিদ নামে নির্মিতব্য মসজিদটিকে ঘিরে সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার চালিয়ে নির্মান কাজ ব্যহত করার পাঁয়তারা করছে বলে জানা গেছে। পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে ইতিমধ্যে সাজেক সড়কে মসজিদটির নির্মান কাজ বন্ধ করে সেখানে স্কুল নির্মানের দাবিতে প্রতিবাদও জানিয়েছে গুটিকয়েক গ্রামবাসী। আর হিল ভয়েস নামের একটি ভূয়া অনলাইন পোর্টাল থেকেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে অব্যাহতভাবে। সচেতন মহলের দাবী, স্থানীয় উপজাতি গ্রামবাসীকে ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে প্রকৃিতির টানে প্রায় সারা বছরই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড় থাকে। সাজেকে মসজিদ না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে আসা মুসলিম পর্যটকরা সবসময়ই নামাজ পড়তে গিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে সম্প্রতি এই সাজেকে একটি মসজিদ নির্মান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সাজেকের মসজিদটি তৈরী হচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের টাকায় শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য। আমি সাজেকে যত বার গিয়েছি, দেখেছি শুক্রবারে জুম্মার নামাজের সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের দারুন সমস্যায় পড়তে হয়। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু বাবুকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। হিল ভয়েস অনলাইন পোর্টালে দেওয়া তথ্যটি বিভ্রান্তিকর বলে মনে হচ্ছে। কারন সাজেকে পর্যটনের কারনেই স্থানীয় পাহাড়ীদের দিন বদলেছে। অনেকেই চরম দারিদ্রতা থেকে শুধুমাত্র পর্যটনের কারনেই স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে। পাহাড়ী যুবকেরা দোকান-পাট দিয়ে স্বচ্ছল হয়েছে। বহুকাল ধরে সেখানে অবহেলায় পড়ে থাকা লুসাই সম্প্রদায়টির লোকেরাও শুধুমাত্র এই পর্যটকদের আনাগোনার কারণে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নিজেদের নিয়ে। এমনকি সাজেকে রিসোর্ট তৈরী করে ব্যবসা ও রিসোর্ট তৈরীতে ভূমি লীজ দিয়ে রাতারাতি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক পাহাড়ীই।

সাজেকের পর্যটন শুধুমাত্র স্থানীয়দের জীবন বদলেছে তা নয়, খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে সাজেক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের জন্য ব্যপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। হোটেল, চাঁদের গাড়ী, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়ীক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সাজেক পর্যটনকে ঘিরে। হিল ভয়েস অনলাইন পোর্টালের বিভ্রান্তিকর তথ্য স্থানীয় পাহাড়ী ও বাঙালিদের স্বার্থের পরিপন্থী হচ্ছে বলে মনে হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় জমি দখলের মাধ্যমে কেয়াংঘর বা ভাবনা কেন্দ্র তৈরী করার প্রবনতা অনেক পাহাড়ীদের মধ্যেই রয়েছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তারা সরকারের অনুমতি নেবার নিয়মের তোয়াক্কা করে না। হিল ভয়েস অনলাইন পোর্টালে সাজেকের মসজিদ বিষয়ে যা লেখালেখি হচ্ছে তা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে মনে হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য ওখানে একটা মসজিদ হতেই পারে। তাছাড়া সাজেকের রুইলুই পাড়ায় স্কুল থাকা স্বত্তেও হিল ভয়েস অনলাইন পোর্টালে সাজেকে কোন স্কুল নেই মর্মে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে সাজেকের আশে-পাশে আরো বেশ কয়েকটি পাড়াকেন্দ্র রয়েছে।

মূলত, অনলাইন পোর্টালের জগতে নতুনভাবে গজিয়ে ওঠা হিল ভয়েস পত্রিকা বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত তথ্য ছড়াচ্ছে। শুনেছি সাবেক গেরিলা নেতা, জেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমার মেয়ের জামাই কানাডাতে বসে এই অনলাইন পত্রিকা চালান। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারন মানুষের জীবন জীবিকা অনেকটাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। সাজেকে পর্যটকদের জন্য তৈরীকৃত মসজিদকে ঘিরে হিল ভয়েসের নিউজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া সংবাদে ‘সাজেকে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই’ এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ পাঠকদের বিভ্রান্ত করার দায়ে হিল ভয়েসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাই।