নানা আয়োজনে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি পালিত
 
নিউজ ডেস্ক
আজ বুধবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালিন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা। শান্তিচুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছরপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য এলাকার সকল অধিবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এছাড়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশালাকার আয়োজন না করলেও এবার শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমিত আকারে নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। ঢাকায় পার্বত্য মন্ত্রানালয়, বরিশালে জেলা আওয়ামীলীগ, পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি, গুইমারা, রাঙামাটি ও বান্দরবান রিজিয়ন ছাড়াও পাহাড়ের বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠনও এবছর শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করেছে।

খাগড়াছড়িঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এদিন সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট এ কেক কাটা, আলোচনা সভা ও জেলার ৯টি উপজেলায় ৯জন গৃহহীন পরিবারকে গৃহ উপহার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় অনষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, সাবেক সাংসদ যতিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর সালাহ উদ্দিন, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শানে আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি দেশে ও বিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালির মাঝে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে রাস্তা, ঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ পর্যটন খাতে। চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্ট ধারাগুলোও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান প্রধান অতিথি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। সকলকে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানান তিনি।

এছাড়া খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর দিবস উপলক্ষে রিজিয়নের আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা এবং ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের আওতাধীন খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি, দিঘিনালা,বাঘাইহাট, লংগদু,মারিশ্যা ও লোগাং জোনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই মহতী উদ্যোগের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, রিজিয়নের সদস্যরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করছেন। রিজিয়নের চিকিৎসকবৃন্দ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের মাঝে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন একই সাথে প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেন তারা। এছাড়া খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রান্তিক মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়।
জেলার মহালছড়িতে ২৩ তম শান্তি চুক্তি দিবস উপলক্ষে মেডিকেল সামগ্রী বিতরন করেছে সেনাবাহিনী। দুপুর সাড়ে ১২ টায় মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল সামগ্রীসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরন করেছেন মহালছড়ি সেনা জোনের জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল মেহেদী হাসান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ধনিষ্ঠা চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীলসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পার্বত্য চুক্তির ২৩তম দিবস উপলক্ষে দূর্গম এলাকায় ত্রান ও মেডিকেল ক্যাম্পিং করে অসহায় দু:স্থ পাহাড়ি-বাঙ্গালী মানুষের মাঝে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করেছেন দীঘিনালা সেনা জোন। সকাল ৮ টা থেকে উপজেলার মাইনী-ব্রীজ সংলগ্ন (ডকইয়ার্ড মাঠে) পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩ তম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোভি-১৯ ভাইরাস নীতিমালা অনুসরণ করে দীঘিনালা উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের গরিব ও দু:স্থ অসহায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী পরিবার এর মাঝে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরন করেন দীঘিনালা সেনানিবাস। এসময় ৩ টি বুথ ৫ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্স এবং উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা টিমের সহযোগীতায় মেডিকেল ক্যাম্পিং ও চিকিৎসা প্রদান করেন। এসময় পাহাড়ি ৫৫০ ও বাঙ্গালী ৬৫০ জন রোগির মাঝে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরন করেন দীঘিনালা সেনা নিবাস। সকাল ১০ টায় দীঘিনালা সেনা জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো: তৌহিদুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো: কাশেম মেডিকেল ক্যাম্পিং পরিদর্শন করেন। দুপুর ১২ টায় উপজেলার দূর্গম মধ্য বানছড়া এলাকায় হতদরিদ্র ও অসহায় পাহাড়ি ৫০ টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা পেয়েছেন তিন শতাধিক গরিব ও দুস্থ মানুষ। গুইমারা রিজিয়নের ব্যাবস্থাপনায় এবং চট্টগ্রামের লায়ন্স আই হাসপাতালের সহযোগিতায় পাহাড়ের গরিব ও দুস্থ চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসায় চক্ষুশিবির আয়োজন করে ৩০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি মাটিরাঙ্গা জোন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত চক্ষু শিবির উদ্বোধন করেন গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান। এ সময় তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে।’
চক্ষু শিবির উদ্বোধনের সময় মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নওরোজ নিকোশিয়ার, মাটিরাঙ্গার নবাগত জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোহসীন হাসান, গুইমারা রিজিয়নের জিটুআই মেজর মঈনুল আলম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজ তৃলা দেব, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক ও মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিরন জয় ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিন খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তি পূনঃমূল্যায়নের দাবী জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি। খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মোঃ আব্দুল মজিদ, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তাহের। এসময় সংগঠনটির জেলা কমিটির সহ-সভাপতি এসএম মাসুম রানা, সাধারণ সম্পাদক মোঃ লোকমান হোসেন, জেলা কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্রপরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উল্লাহসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা বলেন, শান্তিচুক্তি করার সময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে তাদের ‘অ-উপজাতি’ আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। শুধু তাই নয় চুক্তির ‘ক’ খন্ডের ১ নং ধারায় ‘উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালির অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধায় পার্বত্য উপজাতিদের নানা অগ্রাধিকার শর্তযুক্ত করে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রথাগত রীতি অনুসরণের বিধান যুক্ত করায় সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা ভূমিহীন ও বাস্তচ্যুত হবার আশঙ্কায় দিন গুনছে। সন্তু লারমার জেএসএস সহ কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ নিজেদের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। সেখানে চাঁদাবাজি একটা সিস্টেমে পরিণত হয়েছে। ডিম, মুরগী, ফল, সব্জি বিক্রি থেকে শুরু করে সব ধরনের কৃষিকাজ, ব্যবসা, অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সব ধরনের পেশার উপর নির্ধারিত হারে চাঁদা ধার্য করে বছরে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। চাঁদা না দিলে তারা হত্যা, গুম, অপহরণ, নির্যাতন চালায়। শান্তিচুক্তি করা হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য পোষণ করে। অথচ জেএসএস সভাপতি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা ভোগ করার পরও একুশে ফেব্রুয়ারী , শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসগুলো পালন করেন না। তিনি এখনো বাংলাদেশের ভোটার হননি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।শান্তিচুক্তিতে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মূল স্রোতধারা থেকে সর্বক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। অথচ এর সুযোগ নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো ও তার সমর্থকেরা বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা, উন্নয়ন, যুথবদ্ধতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ও ঘৃণা ব্যাঞ্জক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। তারা দেশি-বিদেশি ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। শান্তিচুক্তিতে তারা ‘উপজাতি’ হিসেবে নিজেদের স্বীকৃতি দিলেও এখন নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে দাবি করছে। শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পরপরই সন্তু লারমার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শান্তিচুক্তির একটি অলিখিত রূপ ছিলো এবং সেই অলিখিত শান্তিচুক্তিও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের সেই দাবি মেনে ভূমি কমিশন আইন-২০০১ এর অধিকতর সংশোধনী ২০১৬ জাতীয় সংসদের পাশ করা হয়েছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পূর্বেই বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তি হচ্ছে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের একটি আকাংখা। কিন্তু সেই শান্তিচুক্তিতেই এমন কিছু ধারা সংযোজিত হয়েছে যা বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান ও প্রচলিত বহু আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে তা বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক।

একই দিন দুপুরে জেলার দীঘিনালায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির (শান্তি চুক্তি) ২৩ বৎসর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কর্তৃক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দীঘিনালা উপজেলা সদরের কল্পরঞ্জন মাঠে (মন্ত্রীর মাঠ) আয়োজিত আলোচনা সভায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’র কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে তরুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমএন লারমা সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির শরনার্থী বিষয়ক সম্পাদক প্রফুল্ল কুমার চাকমা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেএসএস (এমএন লারমা)’র কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক প্রীতিময় চাকমা, ফটিকছড়ি-চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাধন দে, মানবাধিকার কর্মী আব্দুর রহিম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (গনতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দীপন চাকমাসহ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস (এমএন লারমা)’র কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করে এসময় বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন, শান্তি চুক্তির বিরোধীতাকারী প্রসীত বিকাশ খীসা, চুক্তি স্বাক্ষরকারী ও অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে চুক্তির বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত জেএসএস প্রধান সন্তু লারমাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। বক্তারা বলেন, প্রসীত পন্থি ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্রের সাহায্যে খুন, অপহরন, চাদাবাজি, ধর্ষনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিনিয়তই ঘটিয়ে আসছে যা পার্বত্য অঞ্চলকে দিনের পর দিন অস্থিতিশীল করে তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে ইউপিডিএফ ও জেএসএস’র সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। শান্তিচুক্তির বিষয়ে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি আনয়নের জন্য সম্পাদিত শান্তিচুক্তি পূর্নবাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের প্রতি পাহাড়ী জনগণকে সহযোগীতামূলক আচরণ প্রদর্শন করতে হবে, এসময় তিনি শান্তিচুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের জন্য ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’র পক্ষ হতে সরকারকে সব ধরণের সহায়তারও আশ্বাস দেন তারা।

এছাড়া জেলা সদরের মিলনপুরস্থ মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এক সমাবেশের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা গ্রুপ) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা গ্রুপ)’র কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার বিষয়ক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরার সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অডিও কলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রদূত (নেপাল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা গ্রুপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুদর্শন চাকমা। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমেন মন্ডল, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট তাপস সাহা, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অংসুমান চাকমা, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক বিভূ রঞ্জন চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি প্রীতি খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সভাপতি জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জগদীশ চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা আর ভ্রাতৃত্ব সংঘাত চাই না, আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। এই ভূমি সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ নিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এমএন লারমার সমর্থন থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা সভা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সকল বাসিন্দাদের দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়ার দাবি উত্থাপন করা হয়। এর আগে সকালে শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার এলাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বর্ষপূতি উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করে শহরের প্রদক্ষিণ করে মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশে মিলিত হয়।

রাঙামাটিঃ
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি জোনের ব্যবস্থাপনায় ও রাঙ্গামাটি রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেকুর রহমান। এসময় রাঙ্গামাটি জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল রফিকুল ইসলাম, পিএসসি, রাঙ্গামাটি বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার এ এস ফয়সাল, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির (পিপিএম সেবা), জেলা ত্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিউল আযম , পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মহসিন রোমানসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি, নৌবাহিনী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেকুর রহমান বলেন, যুদ্ধ কখনোই দেশের উন্নয়ন করতে পারে না। ইতিপূর্বে প্রায় ২১ বছর ধরে পাহাড়ে ভ্রাতৃত্বঘাতি যুদ্ধ হয়েছে ও রক্তপাত হয়েছে। তারপরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি করেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী উদার মন নিয়ে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এমন একটি চুক্তি করলেন যাতে সবাই শান্তির ধারপ্রান্তে উপনীত হতে পারি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা পাহাড়ে ফলপ্রসূ শান্তি আনতে পারবো এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবো। এজন্য প্রয়োজন ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐকান্তিক ইচ্ছা। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকলে একসাথে কাজ করবো। জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের জনগণ তাদের সবাইকে নিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো এটিই তার দৃঢ় বিশ্বাস ।
এর আগে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের মধ্য টিলা হতে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত বিশেষ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিদের মধ্যে পুরুষের (২১ জন) বড় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী দলকে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী দলকে ৩৫ হাজার টাকা ও তৃতীয় বিজয়ী দলকে ২৫ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়। মহিলাদের (১৫জন) বড় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী দলকে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী দলকে ৩৫ হাজার টাকা ও তৃতীয় বিজয়ী দলকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এবং পুরুষের (২জন) সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী দল ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী দল ৭ হাজার ৫ শত টাকা ও তৃতীয় বিজয়ী দল ৫ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হয়। মহিলাদের (২জন) কায়াক প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী দল পাবে ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী দল ৭ হাজার ৫ শত টাকা ও তৃতীয় বিজয়ী দল ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলকে বিশেষ পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার গত ২৩ বছর ধরে কোন আন্তরিকতা দেখায়নি উল্লেখ করে রাঙামাটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। গত ২৩ বছর ধরে সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের মন গড়া কথা বলে যাচ্ছে, মুলতঃ সরকার তা ঝুঁলিয়ে রেখেছে। সকালে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস সন্তু)’র রাঙামাটি জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত শান্তিচুক্তির ২৩তম বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌখিন চাকমার সভাপতিত্বে এসময় বক্তৃতা করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক ভানু মারমা, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখার পিসিপির সভাপতি জগদীশ চাকমাসহ দলটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বান্দরবানঃ
বান্দরবানে মেডিকেল ক্যাম্প, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি পালন করা হয়েছে। সকালে ৬৯পদাতিক ব্রিগেড এর সার্বিক তত্বাবধানে ও ৭ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্স এর আয়োজনে শহরের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেডিকেল ক্যাম্পেইন অুনষ্ঠিত হয়েছে। এসময় সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা প্রদান ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করেন। এসময় শতাধিক নারী পুরুষকে মেডিসিন, ডেন্টাল, গাইনি, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
এছাড়া সকালে শহরের জাফরান রেস্তোরায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ বান্দরবান শাখার উদ্যোগে শান্তিচুক্তির ২৩ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন ও চুক্তির বিতর্কিত ধারাসমুহ সংস্কার পূর্বক বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি কাজী মো. মজিবর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মো. মজিবর রহমান, সংগঠনটির সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলামসহ সংগঠনের নেতাকর্মী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মো. মজিবর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার আইডি কার্ড না থাকলেও উনার পাসপোর্ট কিভাবে হয়? এসময় তিনি একজনের বক্তব্য উদ্ধুতি দিয়ে আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তিন পার্বত্য জেলায় বছরে ৪শ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। পাহাড়ে চাঁদাবাজী,খুন,গুম ও ধর্ষণসহ সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে পাহাড়কে করে তুলেছে অস্থির ও অস্থিতিশীল।
অন্যদিকে দুপুরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে আলোচনা সভা অংশ নেন ও অসহায় দু:স্থ পরিবারের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লৎফর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, জেলার সিভিল সার্জন অংসুই প্রু, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্যসাপ্রু, ফাতেমা পারুলসহ অনেকে। আলোচনা সভায় পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, সরকার পাহাড়ে শান্তির জন্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছে এবং আন্তরিকতার সাথে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নও করছে।

চট্টগ্রামঃ
শান্তিচুক্তির ২৩ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন ও চুক্তির বিতর্কিত ধারাসমুহ সংস্কার পূর্বক বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আলকাছ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় নেতা পারভেজ তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ ফরাজি সাকিবসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে তৎকালীন শান্তি বাহিনী রক্তের হোলি খেলায় মেতে ছিল। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি হলে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনার অবসান ঘটে। আগামীকাল বুধবার (২রা ডিসেম্বর) সেই শান্তি চুক্তির ২৩ বছর পূর্তি হচ্ছে। শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শান্তি বাহিনীর শীর্ষ গেরিলা নেতা সন্তু লারমা তার বিপুলসংখ্যক সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান করে। আশা ছিল পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, তবে চারটি সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে চলছে অস্ত্রের মহড়া, মহা উৎসবে চলছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড । শান্তি চুক্তির পর কেটে গেছে ২৩টি বছর। একের পর এক চুক্তির বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে পাহাড় জুড়ে। সরকারের দাবি চুক্তির অধিকাংশ ধারাই এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু ধারা বাস্তবায়নাধীন। তবে জেএসএসের এ শান্তি চুক্তি সম্পাদনের বিরোধিতায় রয়েছে সংগঠনটির বিবদমান একটি গ্রুপ। পরবর্তীতে যারা ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট) নামে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে। শান্তি চুক্তির পর জেএসএসের সামরিক উইং শান্তি বাহিনী বিলুপ্ত ঘোষিত হয়েছে। এ উইংয়ের সদস্যদের অনেককে সরকার নানাভাবে পুনর্বাসিত করেছে। এর পাশাপাশি পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য গত ২১ বছরে যে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে নানা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা অভাবনীয় হলেও গত দুই দশকে চারটি গ্রুপের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়ের বাসিন্দারা যদি একটা কলার ছড়া বাজারে বিক্রি করতে যায়, তাহলে চাঁদা দিতে হয়। মূলত এই চার সশস্ত্র গ্রুপকে নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়া ছাড়া কোনো পাহাড়ি ও বাঙালির রক্ষা নেই। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকা এ চারটি গ্রুপ পার্বত্য অঞ্চলে যার যার নির্ধারিত এলাকা থেকে তুলছে। এ চারটি গ্রুপের চাঁদা ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তাদের দাবি, কোনো চুক্তি বা আইন তো আর সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান পেতে পারে না। কেননা, আইন ও চুক্তি হয়ে থাকে সংবিধানের আওতায়। শান্তিচুক্তিও সেভাবে বাংলাদেশ সংবিধানের আওতায়ই হয়েছে। সেকারণে শান্তিচুক্তিতে সংবিধান বহির্ভূত বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু থাকা উচিত নয়। শান্তিচুক্তির দুই দশক পরে আজ সময়ের দাবি শান্তিচুক্তি পুনর্মূল্যায়নের। তাতে একদিকে সংবিধান, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক যেসব ধারা, উপধারা দৃশ্যমান হবে তা সংশোধন করা যেতে পারে, অন্যদিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বেগবান হতে পারে এমন ধারা সংযোজনও করা যেতে পারে।
পরে সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির, বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধণ পূর্বক চুক্তির পূনঃমূল্যায়ন করার দাবী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পূনঃস্থাপনের জোর দাবী জানান বক্তারা।

বরিশালঃ
ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে বরিশালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে আওয়ামী লীগ। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর সদর রোডের সোহেল চত্বরের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। পরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও ফেস্টুন উড়ানো হয়। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস সহ অন্যান্যরা।

ঢাকাঃ
শান্তিচুক্তির ২৩ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। এদিন শান্তিচুক্তির ২৩ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ হতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্দুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির এখনো যেসব বিষয়ে সমাধান হয়নি তা সংঘাত নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে-এমনটি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। মন্ত্রী জানান, সংঘাত, সংঘর্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব না। জীবন মানের দিক দিয়ে দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করছে সরকার ।
মন্ত্রী আরও বলেন, শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভূমি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ প্রায় শেষদিকে। এই কাজ সম্পন্ন হলে পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করেন তিনি। অপরদিকে, পার্বত্য এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সমস্যা সমাধান পারস্পরিক আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
