পাহাড়জুড়ে নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদযাপন
 
নিউজ ডেস্ক
৫০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ ১৬ ডিসেম্বর বুধবার নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত দের স্মরণ ও বিজয় উদযাপন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী। সূর্য উদয়ের সাথে সাথে ভোর ৬টা ৩২ মিনিটের দিকে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্মুতি সৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয় প্রশাসন, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সর্ব সাধারণের ব্যাপক সমাবেশ বাতিল করায় সীমিত পরিসরে এ বছরের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এবং এসব কর্মসূচিতে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্য বিধি বজায় রাখা হচ্ছে।
খাগড়াছড়িঃ
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন,বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতার স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা, আত্মত্যাগীদের সম্মানে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ। সকালে নারিকেল বাগানস্থ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় থেকে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউনস্থ বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতার স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় ১ মিনিট নীরবতা পালন করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে চেঙ্গী এস্কায়ারে অবস্থিত শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয় আত্মত্যাগী শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, খাগড়াছড়ি মহিলা সংরক্ষিত আসনের এমপি বাসন্তী চাকমা , খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসিইপ্রু চৌধুরী অপু, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, ,সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, জেলা পরিষদ সদস্য এড. আশুতোষ চাকমা, জেলা পরিষদ সদস্য খোকনেশ্বর ত্রিপুরা ,জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা, মহিলা আওয়ামীলীগের সম্পাদিকা ও জেলা পরিষদ সদস্য শাহিনা আক্তারসহ দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের উদ্যোগে নানা ভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। এদেশের জন্য মহান আত্মত্যাগীদের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্মরণ করে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সংগঠনটি। সকাল ১০টায় কোর্ট বিল্ডিং থেকে বিজয় দিবসের র্যালী নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ সম্মিলিত ভাবে শাপলা চত্বর প্রদক্ষিন করে চেঙ্গী স্কয়ার শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে, পরে শহীদদের স্মরণ করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর কবির,খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মোঃ আঃ মজিদ,পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদ উল্লাহ আসাদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমা আহম্মেদ মৌসহ নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেয়। এছাড়াও বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আত্মত্যাগীদের স্মরণের পাশপাশি বক্তারা বলেন, এদেশ আজ বিজয় অর্জন করেছে বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে পিছু হটেনি। নিজের জীবণ বিসর্জন দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করায় আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

অন্যদিকে, খাগড়াছড়িতে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে এদেশের জন্য রক্তদানকারী মহান আত্মত্যাগীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। বুধবার খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ারে স্থাপিত শহীদ বেদিতে সূর্যোদয়ের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির পর বিভিন্ন সংগঠনের সাথে নিজেদের পার্টির পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।
এছাড়াও বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে আত্মত্যাগীদের স্মরণের পাশপাশি শহীদদের স্মরণ করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সংগঠনের কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা করে সংগঠনটি। এতে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধর জন্ম না হলে এদেশ আজ বিজয় অর্জন করতো না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে পিছু হটেনি। নিজের জীবণ বিসর্জন দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
রাঙামাটিঃ
দিবসটির প্রথম প্রহরে আজ বুধবার সকালে রাঙামাটির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যদিয়ে বিজয় উৎসবের সুচনা করা হয়। সকালে রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূষ্পার্ঘ অর্পন করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুরর রশিদ, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির-পিপিএম, বীর মুক্তিাযোদ্ধাগণ, জেলা পরিষদের নবাগত চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, জেলার সিভিল সার্জন বিপাশ খীসাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুষ্পার্ঘ অর্পন করেন।

শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পনের পর পর আগত সকল শ্রেণী পেশার মানুষ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের পাশাপাশি শপথ বাক্য পাঠ করেন। অংশ নেন সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্থরের জনগণ।
এছাড়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর সেনানিদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ৯টার দিকে “রাজা দেবাশীষ রায় এবং চাকমা সার্কেলের সকল আদিবাসীবৃন্দ” এই মর্মে পুষ্প মাল্য অর্পন ও শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হাজী কামাল, নুরুল আলম, সাথোয়াই প্রু মারমা, পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মল কান্তি চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পরে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে শহীদদের স্মরনে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন তারা।

অন্যদিকে, বাঘাইছড়িতে মহান বিজয় দিবস ২০২০ উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলার ২৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম। পরে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের হাতে নগদ অর্থ ও সম্মাননা স্বারক তুলে দেওয়ার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ কারী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও পুরোষ্কার বিতরণ করা হয়।
এ সময় ২৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্য সহ পৌর মেয়র জাফর আলী খান, সহকারী ভূমি কমিশনার কেএম আবু নওশাদ, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমা, ওসি বাঘাইছড়ি মোঃ আশরাফ উদ্দিন, বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি দীলীপ কুমার দাশ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আলী হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন মামুন সহ উপজেলার সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও জেলার বাঘাইছড়িতে এবং লংগদুতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’র উদ্যোগে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে বিজয় দিবস।
বান্দরবানঃ
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চত্তরে মুক্তিযুদ্ধের নতুন স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় ফুল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। পরে মুক্তিযুদ্ধের নতুন স্মৃতিস্তম্ভ প্রাঙ্গনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জেরিন আখতার,পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী ,পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন, সিভিল সার্জন ডা.অংসুই প্রু মারমা, পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশ, সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুরসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, যারা ইতিহাস বিকৃতির সঙ্গে জড়িত, যারা অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করেছে তারা ইতিহাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, বিজয়ের এই মাসে ও অনেক স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশের ক্ষতির জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আর সেই সকল ষড়যন্ত্রকারীদের আমাদের সকলকে মিলে প্রতিহত করতে হবে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গৌরব গাঁথা ইতিহাস সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করতে আর এতে ব্যয় হয়েছে ১কোটি ৯০ লক্ষ টাকা।
উল্লেখ্য, ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনীর বিজয় স্মরণে ১৬ ডিসেম্বর এ দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসানে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং এর মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হয়।
