জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনে রাঙামাটিতে প্রস্তুতি সভা, পাহাড়ে এনজিও কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ - Southeast Asia Journal

জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনে রাঙামাটিতে প্রস্তুতি সভা, পাহাড়ে এনজিও কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায়, আগামী ১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর রচনা প্রতিযোগীতাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। সভায় জানানো হয়, এবারে করোনা পরিস্থিতির কারণে রাঙামাটিতে আনন্দ র‌্যালী ও শিশু কিশোর সমাবেশ পালন করা হবে না।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মামুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিল্পী রানী রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহেম্মেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বোরহান উদ্দিন, জেলা শিশু একাডেমির উপ-পরিচালক অর্চনা চাকমাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাগণসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জীবন মানোন্নয়নের নামে অত্রাঞ্চলে দেশী-বিদেশী শতাধিক বেসরকারি এনজিও, দাতা সংস্থা কাজ করলেও সরকারি বিভিন্ন দিবসগুলো পালনে দৃশ্যত কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে এমন কথা চাউর করে বেড়ালেও অত্যাবশ্যকীয় দিবসগুলোর একটিতেও পাহাড়ের এনজিওগুলো অংশগ্রহণ করেনা। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য থেকে কাজ করবে এমন শর্তাবলীতে আবদ্ধ হয়ে মূলতঃ কাগজেই কাজ করে যাওয়ার প্রবণতা অধিকাংশ এনজিও সংস্থার।

সম্প্রতি রাঙামাটিতে একুশে ফেব্রুয়ারীসহ আরো কয়েকটি দিবস সরকারিভাবে জেলা প্রশাসন পালন করলেও এসব দিবসগুলোতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো, এনজিওগুলোর কোনো প্রতিনিধি বা তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব দিবস পালনে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি, ব্র্যাক, ইউনিসেফ, আশা, আইডিএফ, এডিবি, ফাও, ডাব্লিউএফপি, আইএলও, ইউএনএফপিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিওগুলোর কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসক এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রণকারি প্রতিষ্ঠানসহ এনজিও প্রতিনিধিদের চিঠি দিয়ে বিয়ষটি জানানোর জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। মামুনুর রশিদ বলেন, দেশের প্রতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি যদি আন্তরিকতার ঘাটতি থাকে তাহলে সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ-কেউ এসব সরকারি কর্মসূচীতে আসতে কুণ্ঠাবোধ করবে। এসময় রাঙামাটির কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তার প্রতি ইঙ্গিত করে জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙামাটিতে সরকারী বিভিন্ন দিবস পালন ও প্রস্তুতি সভায় অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকেন না। আগামী ১৭ই মার্চ জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট্য সকল সরকারি কর্মকর্তাগণকে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় এনজিওর ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। এরপরও পাহাড়ে জেঁকে বসেছে এনজিওরা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ শুরু করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও)। এরপর পাহাড়ে দ্রুত বাড়তে থাকে এনজিও কার্যক্রমের ডালপালা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে বিচরণ করা এসব এনজিওদের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নানা মহলে।
অনেকেই খুলে বসে ব্যাঙের ছাতার মতো নতুন নতুন এনজিও। তাদের কেউ কাজের প্রতি শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আবার অনেকেই এটিকে স্রেফ ব্যবসা হিসেবেই বেছে নিয়েছে। অনিয়মের যত পথ এর সবটাই চেনা ওই এনজিওর নাম ভাঙানো ব্যবসায়ীদের। ফলে গত আড়াই দশকে জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও, বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এ অঞ্চলের উন্নয়নে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও পাহাড়ের সাধারণ মানুষের জীবনে দৃশ্যমান খুব একটা উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্ত মেনে পাহাড়ে এনজিও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ। পাহাড়ের বড় বড় এনজিওর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতা। ফলে এনজিওগুলো যতটা না উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে, এর চেয়ে বেশি ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছানোর কাজে।