অরক্ষিত খাগড়াছড়ির ৮৮,১৮১ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল, তথ্য নেই বন কর্মকর্তাদের কাছেও!
 
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বৃহত্তম বনাঞ্চল রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। পার্বত্য তিন জেলায় শ্রেণীভুক্ত এবং অশ্রেণীভুক্ত রাষ্টীয় বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ৪,৪০০ বর্গমাইল। এরমধ্যে উত্তরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভৌগলিক অংশে রয়েছে ৮৮ হাজার ১’শ ৮১ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তবে এসব বনের খবর জানেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তারা। নানা সীমাবদ্ধতা, বনের সীমানা চিহ্নিত করে না দেয়া এবং নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে দায় এড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের অভাবে দেড়শো বছরের কাচালং মাইনি হেড ওয়াটার বনাঞ্চলসহ খাগড়াছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো দিন দিন হয়ে পড়ছে বৃক্ষ শূন্য।
সরকারি অব্যবস্থাপনা এবং চোরাকারবারীদের উৎপাতে ধ্বংস হচ্ছে খাগড়াছড়ির সবুজ বনাঞ্চল। কাঠ ব্যবসায়ী এবং বন কর্মকর্তাদের একটি অসাধুচক্র হয়ে উঠেছে লাগামহীন। পাহাড় থেকে সমতলে সংরক্ষিত বনের কাঠ পাচারের মাধ্যমে রাতারাতি ধনী বনে যাচ্ছেন চক্রটির সদস্যরা। অভিযোগ আছে, চোরাই কাঠ পাচার নির্বিঘœ করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোত পারমিটের ভুয়া দাখিলা ব্যবহার করা হয়। আর এতে যোগসাজশ রয়েছে অসাধু কিছু বনকর্মীদের।
৮৮ হাজার একর বনাঞ্চলের কাঠ রক্ষায় বন বিভাগের চেক স্টেশন রয়েছে কেবল ৩টি। দীঘিনালা উপজেলা থেকে খাগড়াছড়ি আসার আগে চেক করার জন্যে জামতলী বন ও শুল্ক পরীক্ষণ ফাঁড়ি রয়েছে। এরপর খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম রুটে মানিকছড়ি গাড়ীটানা বিট কাম চেক স্টেশন এবং খাগড়াছড়ি-বারৈয়ারহাট রুটে রামগড় বিট কাম চেক স্টেশনে চেক করার কথা। এক্ষেত্রে বন বিভাগের চেক স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট অংকের মাসোয়ারা দিয়ে চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে নির্বিঘ্নে, এমনটাই অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। মূলত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেকপোস্ট এবং তল্লাশী চৌকি না থাকায় অবাধে পাচার হচ্ছে এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ। শুধু যে পাচার হচ্ছে তা নয়, ইটভাটা, তামাক চুল্লি এবং করাতকলে মহা সমারোহে ধ্বংস হচ্ছে বন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ আট উপজেলায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৩৬টি ইটের ভাটা। যার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিসংখ্যান মতে, প্রতিটি ইটভাটায় বছরে গড়ে দেড় লাখ মণ জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়। সে হিসাবে ৩৬টি ইটভাটায় বছর জুড়ে পুড়ছে দুই লাখ ১৬ হাজার মেট্রিকটন বনের কাঠ।

এছাড়া পুরো জেলার আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অন্তত দেড় শতাধিক করাতকল। যার বেশীরভাগই অবৈধ। রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি এসব অবৈধ করাতকলের মালিকানায় রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম।
বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের কোনো সুযোগ বা নিয়ম নেই। তবে এসবের তোয়াক্কা করেন না বনখেকোরা। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘিরেই অবৈধভাবে করাতকল স্থাপন করে দিনে-রাতে কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের কাঠ। করাতকল মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি করাতকলে দৈনিক অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ ঘনফুট পর্যন্ত কাঠ চিরানো সম্ভব হয়। সেই হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলার করাতকলগুলোতে প্রাত্যহিক গড়ে অন্তত সাড়ে ২২ হাজার ঘনফুট কাঠ চিরানো হয়। বছর শেষে যার পরিমাণ ৮০ লাখ ঘনফুট ছাড়িয়ে যায়।
এছাড়া জেলার দীঘিনালা উপজেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে চামাক চাষ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বছরে অন্তত গড়ে ১ হাজার একর জমিতে আবাদ হয় তামাকের। আর প্রতি দুই একর পরিমাণ জমির তামাক পোঁড়াতে প্রয়োজন হয় ১টি করে তামাক চুল্লি। সেই হিসেবে দীঘিনালা উপজেলাতেই অন্তত ৫’শ থেকে ৬’শ তামাক চুল্লি রয়েছে। বছরের ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে এসব চুল্লিতে পোঁড়ানো হয় তামাক। আর একেকটি চুল্লিতে এই দুই মাসে অন্তত ১৫ মেট্রিক টন বনের কাঠ পোঁড়ানো হয়। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার মেট্রিক টনে।
মূলত প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় যুগ যুগ ধরে এভাবে অবাধে বন ধ্বংসের এ তান্ডব চলছে, তবে রহস্যজনক কারণে নির্বিকার হয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অরক্ষিত হয়ে আছে খাগড়াছড়ির সংরক্ষিত বনগুলো।
খাগড়াছড়ি জেলার ভৌগলিক অংশের ৪ বন বিভাগ :
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভৌগলিক অংশে চারটি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় ৫৪১১২ একর, ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের আওতায় ১৮২৪৯.৬২ একর, অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগের আওতায় ৯৬১৯.৫০ একর এবং খাগড়াছড়ি বন বিভাগের আওতায় রয়েছে ৬২০০ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এই চার বন বিভাগ মিলিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার ভৌগলিক অংশে মোট সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরিমাণ ৮৮ হাজার ১’শ ৮১.১২ একর। তবে খাগড়াছড়ি বন বিভাগের আওতাধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া বাকী হাজার হাজার একর বনাঞ্চল অরক্ষিত হয়ে আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ :
খাগড়াছড়ি জেলার ভৌগলিক অংশে সবচে বড় সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে দীঘিনালা উপজেলার নাড়াইছড়িতে। নাড়াইছড়ি রেঞ্জটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের অধিভুক্ত। নাড়াইছড়ি রেঞ্জের মাইনী হেড ওয়াটার সংরক্ষিত বন গঠিত হয়েছিলো ১৮৭৫ সালে। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পরিমাণ ৫৪ হাজার ১১২ একর। তবে এর পুরোটাই অরক্ষিত। এই বনাঞ্চলে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনিবন্ধিত পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারেন না বন কর্মকর্তারা।
নাড়াইছড়ি রেঞ্জের ফরেস্টার আবদুল জলিল বলেন, ‘এই রেঞ্জের সংরক্ষিত বনটি একেবারেই দুর্গম এবং ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা। এছাড়া ওই এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর আধিপত্য রয়েছে। এসব সংগঠনের প্রভাবে আমরা অনেকটা অসহায় এখানে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে বনভূমির অবস্থান ও সীমানা চিহ্নিত করে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি বন বিভাগকে। এই সমস্যাটা দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময়ের। তবে সহসাই সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমি ওই বনাঞ্চল পরিদর্শনে যাবার পরিকল্পনা করছি।’
ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ :
ভূমিহীন জুমিয়া পরিবারের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, স্থানীয় জনগণের দারিদ্র বিমোচন, ভূমির ক্ষয় রোধ, নাব্যতা বৃদ্ধি, ভূমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদের উন্নতির লক্ষ্যে ১৯৬০-৬১ সালে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের সৃষ্টি। এই বন বিভাগের আওতাধীন হাজাছড়ি রেঞ্জ ও মেরুং রেঞ্জ দুটি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভৌগলিক অংশে পড়েছে।

হাজাছড়ি রেঞ্জে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ১২৩৫০ একর। এর মধ্যে ২৮ নং রেংকার্য্যা মৌজায় ৪৬০০ একর, ২৯ নং ছোট মেরুং মৌজায় ১৭৫০ একর এবং ৫৬ নং বড় হাজাছড়ি মৌজায় রয়েছে ৬০০০ একর। তবে এর কোনোটিতেই বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেই।
হাজাছড়ি রেঞ্জের ফরেস্টার মো. সোলায়মান বলেন, ‘এই রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন পর্যন্ত আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জের সীমানাও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের।’
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং রেঞ্জটিও ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের আওতাধীন। এই রেঞ্জে ৩০ নং বড় মেরুং, ৫৪ নং তারাবুনিয়া এবং ৫৫ নং হাজাছড়ি এই তিনটি মৌজায় ৫৮৯৯.৬২ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। তবে এই সংরক্ষিত বনটিও একেবারেই অরক্ষিত। কোথায়, কোনদিকে এই বনাঞ্চলের অবস্থান তাও জানেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা।
মেরুং রেঞ্জের ফরেস্টার মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলটিকে কেবল কাগজে কলমেই চিনি। বাস্তবে আমি জানি না এটির অবস্থান কোনদিকে। সীমানা না জানলে বন রক্ষা করবো কী করে?’
আমি এই রেঞ্জের ফরেস্টার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি প্রায় দু’বছর হতে চললো। তবে এখনো পর্যন্ত জেলা প্রশাসন হতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা ও অবস্থান চিহ্নিত করে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি, যোগ করেন ফরেস্টার মতিউর।
ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি.এম মোহাম্মদ কবীর বলেন, ‘আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো অনেক দুর্গম এলাকায়। চাইলেই আমরা সেখানে যখন-তখন যাওয়া-আসা করতে পারি না। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে হয় আমাদের।’
অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ বিভাগ :
অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ রাঙামাটি বিভাগের আওতায় খাগড়াছড়ি জেলার ভৌগলিক অংশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ৯৬১৯.৫০ একর। এসব বন সৃজন করা হয় ১৯৯৩ ও ৯৪ সালে। এর মধ্যে মহালছড়ি রেঞ্জে ৪৪৯০ একর, লক্ষ্মীছড়ি রেঞ্জে ১৬৫ একর এবং বীজিতলা রেঞ্জের আওতায় ৪৯৬৪.৫০ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। তবে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেই মহালছড়ি রেঞ্জের ৪৪৯০ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। এই রেঞ্জের ফরেস্টার হিসেবে তিন মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছেন নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা এবং অবস্থান জানেন না।

লক্ষ্মীছড়ি রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলটিও একেবারেই অরক্ষিত। তবে তা স্বীকার করেন না দায়িত্বরত কর্মকর্তা। ফরেস্টার আবদুল গফুর খান চৌধুরী বলেন, ‘১৬৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পুরোটাই বন বিভাগের দখলে আছে। নিয়মিত টহল দেয়া হয় সেখানে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাক্তন একজন ফরেস্টার জানান, এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি আয়তনে খুব ছোট হলেও রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এই এলাকায় প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) -এর আধিপত্য রয়েছে। ওই সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ভয়ে সংরক্ষিত বনে যাতায়াত করতে পারেন না বন কর্মকর্তারা।
বীজিতলা রেঞ্জের ২৫৫ নং মাইসছড়ি মৌজায় ১৩১২.৫০ একর এবং ২৫৭ নং নুনছড়ি মৌজায় রয়েছে ৩৬৫২ একর। এই রেঞ্জের বনাঞ্চল দুটিও বন বিভাগের দখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরেস্টার মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তবে দখলে থাকলেও সীমানা কতোটুকু তা জানেন না তিনি।
অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল বনীকরণ রাঙামাটি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এখানে নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষা করা মুসকিল হয়ে পড়বে।’

খাগড়াছড়ি বন বিভাগ:
১৯৮৫ সাল থেকে শুরু হয় খাগড়াছড়ি বন বিভাগের কার্যক্রম। এই বন বিভাগের আওতায় ৬২০০ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে মাটিরাঙা উপজেলার ২০৪ নং আলুটিলা মৌজায় ১৭০০ একর ও ২০৬ নং দলদলি মৌজায় ২১৯ একর, পানছড়ি উপজেলার ২৪৭ নং যুগলছড়ি মৌজায় ২৪১৫ একর, গুইমারা উপজেলার ১৯৯ নং বাইল্যাছড়ি মৌজায় ৪৫০ একর এবং ২০০ নং তৈমাতাই মৌজায় রয়েছে ১৪১৬ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
তবে জেলা শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় ফলে খাগড়াছড়ি বন বিভাগের আওতাধীন এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে এবং দখলে রয়েছে। যদিও এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও তাদের বনভূমির সীমানা সম্পর্কে অবগত নন।
সদ্য বিদায়ী খাগড়াছড়ি’র বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘এই বন বিভাগের আওতায় যেসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে সবটুকুই আমাদের দখলে আছে। আমরা নিয়মিত ওই বনাঞ্চলে টহল পরিচালনা করছি এবং বনাঞ্চল রক্ষায় তৎপর আছি।’
যাবতীয় অনুসন্ধানে দেখা গেছে কেবল খাগড়াছড়ি জেলা শহরের আশপাশের সামান্য কিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চল বাদে বাকি অংশে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই বন বিভাগের। অথচ জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বনভূমির সীমানা এবং অবস্থান চিহ্নিত করে বুঝিয়ে না দেয়ার ঠুনকো অজুহাত দেখাচ্ছেন বন কর্মকর্তারা। তবে ভিন্ন কথা বলছে জেলা প্রশাসন।

জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বনাঞ্চলের অবস্থান ও সীমানা বুঝিয়ে না দেয়ার যে অজুহাত বন কর্মকর্তারা দিচ্ছেন এটি নিতান্তই হাস্যকার। সীমানা এবং অবস্থান না জানলে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা জরুরী ছিলো। অথচ কখনোই বন কর্মকর্তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করেননি।’
পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘এ সংকট নতুন নয়। দীর্ঘ বছর ধরে অবাধে বন ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে। বনের সীমানা চিহ্নিত করণের পাশাপাশি, বনকে মানুষ মুক্ত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাঠ কর্তনের ওপর একটি দীর্ঘ সময়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা না গেলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে।’
খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো কেবল কাগজে-কলমেই সরকারি দখলে। তবে বান্তবতা একেবারেই ভিন্ন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর না হওয়ার ফলে দিন দিন এ জেলা থেকে কাঠ পাচার বেড়েই চলেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর। জেলার সবকটি রুটে নিরাপত্তা চেকপোস্ট স্থাপন করে কাঠ পাচার রোধ করা ভীষণ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
