আটকদের পরিকল্পিত নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমার
 
নিউজ ডেস্ক
গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বন্দিদের সাথে কথা বলে এবং নানা ছবি যাচাইবাছাই করে তদন্ত শেষে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস।
গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। আটক হয় প্রায় ৯ হাজার অভ্যুত্থানবিরোধী। অনেককে নেয়া হয়েছে ইয়াঙ্গুনের একটি জিজ্ঞাসবাদ কেন্দ্রে।
আটক হওয়া সাংবাদিকসহ ২৮ বন্দির সাথে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এপি। এছাড়া ছবি, স্কেচ, চিঠি এবং সেনাবাহিনী ত্যাগ করা ৩ সদস্যের সাক্ষ্য যাচাইবাছাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে উঠে এসেছে বন্দি অবস্থাত আটকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য।
একজন সাবেক বন্দি জানান, জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রটি ছিল নরকের মতো। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে আপনি জানেন না কী ঘটতে যাচ্ছে আপনার সাথে। খুবই কষ্টকর ছিল সেই অভিজ্ঞতা।
বন্দিদের বক্তব্যে জানা যায়, মিয়ানমারজুড়ে আছে এমন বেশ কয়েকটি জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র। মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটসের নির্বাহী পরিচালক জানান, মিয়ানমারজুড়ে ব্যপক হারে নির্যাতন চলছে।
ফরটিফাই রাইটস এর নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ স্মিথ জানান, অভ্যুত্থানের পর থেকে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী শহরে, গ্রামে, বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন চালিয়েছে। তারা মিয়ানমারের বিভিন্ন নাগরিক, তরুণ ও বৃদ্ধ, বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করছে। এসব তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে ব্যপক এবং পদ্ধতিগত নির্যাতন চলছে।
মিয়ানমারের সাবেক সেনাবাহিনী সদস্য হিন লিয়ান পিয়াং জানান বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নির্মমভাবে অভিযান চালিয়েছে। তারা গ্রেপ্তার, মারধর এবং নির্যাতন করেছে অনেককে। নির্যাতনের কারণে দুজনকে আমি মারা যেতে দেখেছি।
এদিকে কমিউনিটি হল এমনকি রাজপ্রাসাদেও গড়ে তোলা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র। কিন্তু বেশিরভাগ নির্যাতন চলেছে সামরিক কম্পাউন্ডে।
নির্যাতনের এই কৌশল মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে চলে আসছে বলে জানান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক গবেষক ম্যানি মং। এই কৌশল ব্যবহার হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেও।
ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস ফরেনসিক এর প্যাথলজিস্ট ড লিন্ডসে থমাস জানান বন্দিদের ছবি দেখে যা বোঝা গেছে তাদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে নির্যাতন করা হয়েছে। কারো পুরো পিঠ এবং পায়ে ক্ষত দেখা গেছে। এতেই স্পষ্ট হয় এটি কেবল একটি বা দুটি আঘাত ছিল না। এটি একটি পদ্ধতিগত নির্যাতনের চিত্র।
এপির এই তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানায়, এমন অর্থহীন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই।
