সন্ত্রাসীদের হাতে সেনাসদস্য নিহতের ঘটনায় উত্তাল পার্বত্য চট্টগ্রাম - Southeast Asia Journal

সন্ত্রাসীদের হাতে সেনাসদস্য নিহতের ঘটনায় উত্তাল পার্বত্য চট্টগ্রাম

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

গত ২রা ফেব্রুয়ারি বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস সন্ত্রাসীদের সাথে গোলাগুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে আজও উত্তাল ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আয়োজনে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য’র পাদদেশে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানিকছড়িতে মানববন্ধন
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি বাসস্টেশন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় পাহাড়ে শান্তিচুক্তি ভঙ্গকারী সন্তু লারমার লালিত জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির ঘটনায় দায়ী করে সন্তু লারমাকে আইনের আওতায় আনার দাবিতে শ্লোগান দেয় তারা। পরে বিক্ষোভ মিছিল আমতলায় এসে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে মানববন্ধন করেন।

পাবর্ত্য নাগরিক পরিষদের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় ও মো. মোকতাদের হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় পর্ষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তাহের। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল হোসেন, মহিলা নাগরিক পরিষদের সভাপতি হাসিনা বেগম, নাগরিক ছাত্র পরিষদের জেলা আহবায়ক মো. সুমন হোসেন প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. হাবিবুর রহমানকে হত্যা ও একজন সেনা সদস্যকে আহত করার মধ্য দিয়ে দেশবিরোধী অপতৎপরতা এবং পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টা শুরু করেছে জেএসএস নেতা সন্তু লারমা ও তার দোসররা। শান্তিচুক্তির নামে সন্তু লারমা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্যবাসীর সাথে প্রতারণা করেছেন। পাহাড়ে জেএসএস, ইউপিডিএফ, সংস্কারের নামে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বানিয়ে জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাভোগ করেও সন্তু লারমার হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়নি। পার্বত্য নাগরিক পরিষদ পার্বত্য এলাকায় সকল ধর্ম ও গোত্রের সমঅধিকার নিশ্চিতসহ শান্তিচুক্তি বাতিল অথবা পুণর্মূল্যায়ণ এবং সন্তু লারমাকে সকল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

লামায় বিক্ষোভ
আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে বান্দরবানের লামায় বিক্ষোভ ও সভা করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদসহ স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ সম্মুখ সড়কে এ বিক্ষোভ ও সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মুজিবুর রহমান, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি এম রুহুল আমিন, উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ নেতা মিজানুর রহমান আখন্দ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে নেতারা বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান রুমা উপজেলার বথি ত্রিপুরা পাড়ায় সেনাবাহিনীর নিয়মিত একটি টহল দলের উপর জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষন করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন সেনা সদস্য নিহত ও এক জন আহত হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলাকারী সংগঠন জেএসএস’র সভাপতি সন্তু লারমাকে পার্বত্য জেলায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করে এবং তার গাড়ি থেকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে তাকে আইনের আওতায় এনে অতীতের সব সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাঙ্গালী হত্যার বিচারের দাবী জানান।

এ সময় বক্তারা সরকারের কাছে দাবী তুলে বলেন, পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ক্যাম্প বৃদ্ধি ও পুন:স্থাপনসহ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবকে সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান করে আরও শক্তিশালী করতে হবে। উন্নয়ন বোর্ডসহ পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ সমূহে সেনা কর্মকর্তাদেরকে প্রেষণে নিয়োগ দিতে হবে, শিক্ষা, চাকুরীসহ সকলক্ষেত্রে বৈষম্যহীন বন্টন ও নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, পিসিএনপি’র বান্দরবান জেলা তথ্য ও প্রচার সম্পাদক কাজী ইকবাল মাহমুদ, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ জালাল, পৌর সভাপতি সামছুল ইসলাম সামু, ছাত্রনেতা আসিফ ইকবাল ও জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দসহ শত শত নারী পুরুষ।

সন্তু লারমার কুশপুত্ত‌লিকা দাহ
দুপুরে আলীকদ‌মে বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল ও প্রতিবাদ সমা‌বেশ ক‌রে‌ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগ‌রিক প‌রিষ‌দের নেতারা। এসময় জেএসএস মূল দ‌লের কেন্দ্রীয় সভাপতি সন্তু লারমাকে বান্দরবানে আজীবনের জন‍্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তার কুশপুত্ত‌লিকা পোড়া‌নো হয়।

আলীকদমে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার নেতৃৃত্ব দেন পার্বত‍্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবুর রহমান।

এ সময় পিসিএনপির জেলা সভাপতি সামছুল ইসলাম সামু, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন, সহ সভাপতি রুহুল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ জালাল, তথ‍্য ও প্রচার সম্পাদক কাজী ইকবাল মাহমুদসহ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের মানববন্ধন
বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস সন্ত্রাসীদের সাথে গোলাগুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ।

বিকেলে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি মিনহাজ ত্বকীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রিমনের সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী কমরেড এস কে জাফরী ও এম আকাশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইরফানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ-এর পক্ষ থেকে শান্তি ও সম্প্রতি প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপর দেশদ্রোহী সন্ত্রাসীদের এমন জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টকারী দেশদ্রোহী সকল সদস্যেকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।

এসময় সংগঠনটির পক্ষ হতে সরকারের কাছে, অনতিবিলম্বে জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ এর নির্বাচন দাবি, সন্ত্রাস দমনে নিরস্ত্র সেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন, সেনাসদস্য হত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর করার দাবী জানান।

উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত আনুমানিক পোনে ১২টার দিকে রুমা জোন সদরের ৩ নং ওয়র্ডে বথি পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল দলের উপর পরিকল্পিত গুলি বর্ষণ করে জেএসএস সন্ত্রাসীরা।এসময় গুলিতে রুমা জোনের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান নিহত হন এবং সৈনিক ফিরোজ আলম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।