পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি: বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূলের - Southeast Asia Journal

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি: বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূলের

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বিনিয়োগ আমন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কলকাতায় হইহই করে চলল দুদিনের বাণিজ্য সম্মেলন। এরই মধ্যে দুটি ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে আলোচনা তৈরি করেছে। একদিকে পশ্চিমবঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে পরাজয়ের পরে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যেই দলের বর্তমান সভাপতিকে তাঁর নীতি পরিবর্তন করতে পরামর্শ দিলেন। অন্যদিকে আরেকজন সাবেক নেতার দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে অংশগ্রহণ নেতা–কর্মীদের আরও হতাশ করেছে।

বিজেপির এমন অন্তর্দ্বন্দ্বে মূলত শক্তি বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের। গত বৃহস্পতিবার ইফতার আয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিয়ে সেই ইঙ্গিত দিলেন।

অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া বিজেপির তিন নেতার একজন হলেন দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বাকি দুজনও দলটির সভাপতি ছিলেন। তাঁরা হলেন দিলীপ ঘোষ ও তথাগত রায়।

তথাগত রায় সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে কয়েক দিন আগে টুইটে বলেছিলেন, ‘ফিটার মিস্ত্রি যেন বালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার করতে না যায়।’

পেশায় প্রকৌশলী তথাগত রায় অতীতে ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি দিলীপ ঘোষকে সাধারণত ‘ফিটার মিস্ত্রি’ বলে সম্বোধন করেন। বিজেপির বর্তমান দুরবস্থার জন্য তথাগত রায় দিলীপ ঘোষকে দায়ী করেন। টুইটের মন্তব্যের পর সমালোচনার জবাবে গত বৃহস্পতিবার তিনি এ–ও বলেন যে তিনি কোনো অবস্থাতেই ফিটার মিস্ত্রির কাছে ক্ষমা চাইবেন না।

তথাগত রায়ের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, সারা দিন বাড়িতে বসে টুইট করলেই বড় নেতা হওয়া যায় না। যে দলীয় কর্মীরা মার খাচ্ছেন, মাঠে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হয়। দিলীপ ঘোষ আরও অভিযোগ করেন, তথাগত রায় একজন ‘পানাসক্ত’ ব্যক্তি, যিনি ‘দলীয় দপ্তরকে মদ খাওয়ার দপ্তর বানিয়ে তুলেছিলেন।

দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের বিরোধও জোরালো হচ্ছে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে পরাজয়ের পরে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, সুকান্ত মজুমদার সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু তাঁর জানা উচিত যাঁরা এত দিন আন্দোলন করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সুকান্ত অবশ্য ওই মন্তব্যের কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাননি।

দলীয় নেতাদের অনেকের অভিযোগ, সুকান্ত মজুমদার দলকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। একদিকে একের পর এক দলীয় নেতা–কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, অন্যদিকে বিজেপির ভোট ধারাবাহিকভাবে কমছে, দ্বিতীয় স্থানে চলে আসছে সিপিআইএম।

এ পরিস্থিতির জন্য বিজেপির ভেতরে এখন সুকান্ত মজুমদারকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কারণ, তিনি দলের রাজ্য সভাপতি। পাশাপাশি দিলীপ ঘোষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। কারণ, তাঁর আমলেই বিজেপির ভোটের হার ১০ থেকে ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

আত্মবিশ্বাস বাড়ছে তৃণমূলের
বিজেপির ধারাবাহিক পরাজয়, ভোট কমে আসা এবং নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ বিরোধ তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস যে ক্রমে বাড়াচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। এ আত্মবিশ্বাসের নজির দেখা গেল গত বৃহস্পতিবার। পরপর দুই বছর বন্ধ থাকার পরে এদিন কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে ইফতারে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বেশি প্রচার পাওয়া সম্মেলন হলো বিনিয়োগ টানার অনুষ্ঠান-বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। সেই সম্মেলনের মাঝেই পার্ক সার্কাস ময়দানে কলকাতা পৌরসভার ইফতারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। অতীতের মতোই তাঁকে দেখা গেল মাথায় সাদা কাপড় দিয়ে ইফতার করতে।

যদিও বলা হয়, করোনার কারণেই গত দুই বছরে মমতা ইফতারে যাননি, কিন্তু তাঁর কাছের লোকেরাই মনে করেন এর কারণ অন্য। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায় কাপড় দিয়ে ইফতার করার ছবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তারা মমতাজ বেগম বলেও ডাকতে শুরু করেছিল। সেই সময় বিজেপির ভোট, বিশেষত হিন্দু ভোট বাড়ছিল। আর তৃণমূলের হিন্দু ভোট কমছিল। অর্থাৎ বিজেপির লাগাতার প্রচারে হিন্দুসমাজের একটা অংশ মনে করতে শুরু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মুসলমান-ঘনিষ্ঠ নেতা। জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

বিপদটা বুঝতে পেরে, মুখ্যমন্ত্রীও রাতারাতি প্রকাশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে এবং ইফতারে যাওয়া বন্ধ করে দেন। বিজেপির দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে আবার মঞ্চে ফিরলেন মমতা, যোগ দিলেন কলকাতা শহরে ইফতার আয়োজনে।

You may have missed