চীন-নেপাল সম্পর্কের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে বিরল বক্তব্য রাখলেন চীনা দূত
নিউজ ডেস্ক
নেপালের বিষয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে দেখা যায় না চীনকে। দক্ষিণে থাকা এই প্রতিবেশীকে নিয়ে চীন সামান্যই কথা বলে। কিন্তু এখন সেই রীতি পাল্টে নেপালের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে বেইজিং। এরমধ্যে আছে নেপালের রাজনীতি, আছে নেপালের উন্নয়নে কোন ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন কিংবা কার কাছ থেকে এই সাহায্য নেপাল নেবে এমন সব ইস্যু।
কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা দূত হু ইয়ানকি নেপালের নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন। কোভিডের সময় কীভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে চীন নেপালের পাশে ছিল তা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া নেপাল ও সমগ্র দুনিয়ায় চলমান সকল ইস্যুকেই ছুঁয়ে গেছে তার বক্তব্য। এর আগে ৯ পাতার একটি মিডিয়া ব্রিফিং পড়েন ইয়ানকি।
এরপরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
নেপাল-চীন রেলওয়ে প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, ভূপ্রাকৃতিক কারণে এই প্রকল্পটি বেশ জটিল। এছাড়া নেপাল ও চীনের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতা বাকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আমাকে জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতেই ৫ থেকে ৬ বছর লাগবে। তবে চীন সরকার এই প্রকল্প নিয়ে সংকল্পবদ্ধ। তাই এটি কোনো স্বপ্ন নয়, বরঞ্চ এটি বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। চীন ও নেপালের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই নিয়ে একটি চুক্তি হওয়ার এক মাসের মাথায় এসব কথা বলেন ইয়ানকি।
গত জানুয়ারি মাসে নেপাল ও চীনের রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। এতে চীনা পক্ষ জানায়, তারা কেরুং থেকে কাঠমান্ডু রেল লাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অর্থায়ন করতে প্রস্তুত। এ জন্য ৪২ মাস সময় লাগবে বলেও জানান তারা। রিপোর্ট হাতে এলে উভয় পক্ষ বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট প্রস্তুত করবে যাতে এই প্রকল্পে কেমন খরচ হবে তা জানা যাবে। মার্চের শেষ সপ্তাহে নেপাল সফর করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এসময় ৬টি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে। এরমধ্যে এই রেলওয়ে নেটওয়ার্ক একটি। গত ১৪ই এপ্রিল গ্লোবাল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়ানকি বলেন, এই রেল প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় ৩১ মিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের মে মাসে তিনি নেপালি গণমাধ্যমে বলেন, এ ধরণের প্রকল্প অল্প কয়েক বছরেই শেষ করা যায় না।
নেপালের সাবেক কেপি শর্মা ওলি সরকার বুধিগন্ডকি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে চীনের গেঝুবা গ্রুপ কর্পোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। তবে দেশটির বর্তমান মন্ত্রিসভা সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ইয়ানকি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকার পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয় এবং এটি তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। কিন্তু সরকারের নীতিতে পরিবর্তন উদ্বেগজনক বিষয়। এমন সিদ্ধান্ত বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো তৈরি করতে প্রচুর সময় লাগে। এসময় বিনিয়োগ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এভাবে নীতি পরিবর্তন করলেন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন।
নেপালের বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চীন আগ্রহী জানালেও ইয়ানকিকে খুব একটা ইতিবাচক মনে হয়নি। তিনি বলেন, নেপাল থেকে চীনে বিদ্যুৎ নিতে যে বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করতে হবে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। তার থেকে নেপাল নিজেই এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। এতে নেপালের শিল্প ও কৃষি দুটিই এগিয়ে যাবে। নেপালের অর্থনীতির জন্যেও এটি ভাল।