পাহাড়ে রক্তপাত ঘটিয়ে সমস্যার সমাধান হবেনা, সরকার চুক্তির সব শর্তই বাস্তবায়ন করবে- ওবায়দুল কাদের - Southeast Asia Journal

পাহাড়ে রক্তপাত ঘটিয়ে সমস্যার সমাধান হবেনা, সরকার চুক্তির সব শর্তই বাস্তবায়ন করবে- ওবায়দুল কাদের

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ইয়াছিন রানা সোহেল, রাঙামাটি থেকে

ভূমি সমস্যা ছাড়া পাহাড়ের সব সমস্যারই সমাধান হয়েছে। ভূমি সমস্যা সমাধান হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে মন্তব্য করে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে শান্ত করতে আওয়ামীলীগ শান্তি চুক্তি করেছিল, আর চুক্তির সব শর্তই বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। পাহাড়ে এখনো মাঝে মাঝে রক্তপাত দেখতে পাই, এসব বন্ধ করতে হবে। রক্তপাত ঘটিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।

মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ‘গণক’ সম্বোধন করে কাদের বলেন, সরকার কখন থাকবে, কতদিন থাকতে পারবে সেই গণনা তিনি করছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণকে খুশি রাখতে পারলে নির্বাচনে আবারো জনগণ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনবে। আমরা দেখেছি, বিএনপির মেয়াদ যখন শেষ হয়েছিল, তখন তাদেরকে জনগণ টেনে-হিঁচড়ে নামিয়েছে। জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে সারা দেশের মানুষ খুশি হলেও ফখরুল ও বিএনপি মুখে শ্রাবণের কালো মেঘ। তাদের অন্তরে খুবই বিষজ্বালা। তারা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। যা কখনো সফল হবে না।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বরের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন যত কথাই বলুক, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা থাকবে আর স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন কমিশন। এ কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সরকার প্রধান সরকার চালাবে আর নির্বাচন কমিশন তার নির্বাচন পরিচালনা করবে। এ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। বিএনপির নেতারা এখন বাংলাদেশের মাঝে শ্রীলঙ্কার অবস্থা খুঁজে বেড়ান। শেখ হাসিনা থাকতে বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না নেতাকর্মীদের প্রতিশ্রুতি দেন মোশাররফ হোসেন। দলের শক্তি আরো বাড়াতে, আগামীতে তিন পার্বত্য আসন থেকে যেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী জয়ী হয় সেজন্য দলকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের কাছে আহবান জানান মোশাররফ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃতে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। শ্রীলঙ্কার এ পরিণতি হয়েছে দুটি কারণে। দেশটি পর্যটন খাত ও কৃষিখাতের উপর নির্ভরশীল। করোনা কারণে এ দুটি খাতে বিপর্যয় আসায় শ্রীলঙ্কার এ পরিণতি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কা এক নয়। বাংলাদেশ তিনটি খাতের উপর নির্ভরশীল। এগুলো কৃষিখাত, শিল্পখাত এবং বৈদেশিক মূদ্রা আয়। করোনার মাঝেও এ খাতগুলো সচল ছিল বাংলাদেশে। এছাড়া বাংলাদেশে যে মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এগুলো বিনিয়োগ শেষ। এখন শুধু আয় আসবে। যার কারণে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না।

বিএনপি পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। বিএনপি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্টি দল। এরা পাকিস্তানকে ভালবাসে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এখন অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের টাকার মান পাকিস্তানের টাকার মানের চেয়ে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এ এগিয়ে যাওয়া বিএনপির সহ্য হয় না।

আওয়ামীলীগের দল গঠন নিয়ে হানিফ বলেন, যেসব নেতা পচা গন্ড ছড়ায় তাদের ত্যাগ করুন। যারা সুগন্ধী ছড়ায় তাদেরকে খুজে খুজে দল গঠন করে শক্তিশালী করুন। হানিফ এমপি বলেন, জামায়াত-বিএনপি পাকিস্তানের মদদে পরিচালিত বিধায় বাংলাদেশের অর্জন-অগ্রগতি তাদের পছন্দ হয় না। তারা শেখ হাসিনাকে দু’চোখে দেখতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেফাঁস ও লাগামহীন কথাবার্তা বলছে। আপনাদের হুঁশিয়ার দিয়ে বলতে চাই, এভাবে কথা বলতে থাকলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আপনাদেরকে মাঠেই প্রতিহত করবে।

এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলন শুরুর আগে বঙ্গবন্ধুর অস্থায়ী মুর‌্যালে পুস্পস্তবক প্রদান করেন দলীয় নেতারা। বিকালের দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়।

ছবি- বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি দীপংকর তালুকদার ও পুনরায় ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর

বিকেলে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে আবারো রাঙামাটি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন দীপংকর তালুকদার। দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুতে নিখিল কুমার মঞ্চে গিয়ে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দীপংকরকে সমর্থন করেন।

দলটির সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পর নিখিল কুমার ও দীপংকরকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বর্ষীয়ান এ নেতা নিখিলকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দীপংকর তালুকদারকে শেষবারের মত সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুর আগে দীপংকর তালুকদারকে এবার সভাপতি পদটি ছেড়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিখিল কুমারকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে নিখিল প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে দীপংকর তালুকদারকে সমর্থন দিয়েছেন।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে হাজী মুছা মাতব্বর পুনরায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

গোপন ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় সাধারণ সম্পাদকের জয় পরাজয়। কাউন্সিলরদের ভোট গণনা শেষে জানা যায়, ১৩৮ ভোট পেয়েছেন মুছা মাতব্বর এবং ১০২ ভোট পেয়েছেন হাজি কামালুদ্দিন। ৩৬ ভোটে জয় পেয়েছেন হাজি মুছা মাতব্বর।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ সভাপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় সভাপতি হয়ে আসছেন দীপংকর তালুকদার। এর আগে ২০১২ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি হন দীপংকর তালুকদার। এর ১০ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল মঙ্গলবার। প্রতি তিন বছর পর পর এ নির্বাচন হবার কথা।